KeyOfIslam
Welcome To KeyOfIslam.com. KeyOfIslam is the platform to spread love and brotherhood among all people through the light of Prophet Mohammad(peace be upon him), the Final Messanger of Allah. Here you will get informations with precision.
Individual Articles
আশুরার দিন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন ? Mufti Amjad Hussain Simnani
আশুরার দিন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন 🌼সুধী পাঠক বৃন্দ! ইসলামের সঠিক ইতিহাস অধ্যায়ন করলে একথা দিবালোকের ন্যায় প্রকাশ পায় যে, ইসলাম শরীয়তে আশুরার দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তা'লার নিকট আশুরা হল একটি অতিব মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় ঘটনা ও কাজ সম্পন্ন ও সংঘটিত হয়েছে এই আশুরার দিনে। যেমন ১)) আশুরার দিন হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর তৌবা গ্রহণ করা হয়েছে। ২) আশুরার দিন হজরত নূহ আলাই সালাম এর নৌকা যুদি পাহাড়ে উপস্থিত হয়েছে। ৩)) আশুরার দিন হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম এর উম্মত এর তৌবা গ্রহণ করা হয়েছে। ৪)) আশুরার দিন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায়কে ফেরাউনের হাত থেকে নেজাত প্রদান করা হয়েছে। ৫)) আশুরার দিন আল্লাহ তা'আলা মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য নীলনদে রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন। ৬)) আশুরার দিন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেছেন। ৭)) আশুরার দিন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠানো হয়েছে। ৮)) আশুরার দিনকে পূর্বের নাবীগণ আলাইহিমুস সালাম রোজার মাধ্যমে পালন করতেন। ৯,, আশুরার দিনে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়। ১০)) আশুরার দিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জিগার পারা জান্নাতি যুবকদের সরদার হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কারবালার মরুপ্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। ১১)) আশুরার দিনটি ছিল পূর্বের নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এর ঈদের দিন। এছাড়া আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় ইসলামী কর্ম সংঘঠিত হয়েছে এই আশুরার দিনে যা নিম্নোক্ত দলিলাদি হতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, عن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا، يَعْنِي عَاشُورَاءَ، فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، وَهْوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ، فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ. অর্থাৎ- ইবনু ‘আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদিনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তারা একদিন রোজা পালন করে আর সেই দিনটি ছিল ‘আশুরার দিন। তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এ এমন দিন যে দিনে আল্লাহ্ মূসা আলাইহিস সালাম-কে নাজাত দিয়েছেন এবং ফির‘আউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর মূসা আলাইহিস সালাম শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে রোজা পালন করেছেন। {{ সহীহ বুখারী হাদীস নং-৩৩৯৭,, উমদাতুল কারী ১৫/২৯৩,, ইরশাদুস সারী ৫/৩৭৮ }} 🌼 হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻗﺎﻝ: ﻣﺮ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺄﻧﺎﺱ ﻣﻦ اﻟﻴﻬﻮﺩ ﻗﺪ ﺻﺎﻣﻮا ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء، ﻓﻘﺎﻝ: " ﻣﺎ ﻫﺬا ﻣﻦ اﻟﺼﻮﻡ؟ " ﻗﺎﻟﻮا: ﻫﺬا اﻟﻴﻮﻡ اﻟﺬﻱ ﻧﺠﻰ اﻟﻠﻪ ﻣﻮﺳﻰ ﻭﺑﻨﻲ ﺇﺳﺮاﺋﻴﻞ ﻣﻦ اﻟﻐﺮﻕ، ﻭﻏﺮﻕ ﻓﻴﻪ ﻓﺮﻋﻮﻥ، ﻭﻫﺬا ﻳﻮﻡ اﺳﺘﻮﺕ ﻓﻴﻪ اﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﻋﻠﻰ اﻟﺠﻮﺩﻱ، ﻓﺼﺎﻡ ﻧﻮﺡ ﻭﻣﻮﺳﻰ ﺷﻜﺮا ﻟﻠﻪ، ﻓﻘﺎﻝ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: " ﺃﻧﺎ ﺃﺣﻖ ﺑﻤﻮﺳﻰ، ﻭﺃﺣﻖ ﺑﺼﻮﻡ ﻫﺬا اﻟﻴﻮﻡ "، ﻓﺄﻣﺮ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদি সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তিদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন যারা আশুরার দিনে রোজা রেখেছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কে জিজ্ঞেস করলেন, এই রোজা কেমন? তারা প্রত্যুত্তরে বলল, এই দিন আল্লাহ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালাম এবং বানী ইসরাইল কে (সমুদ্রে) ডুবা থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন এবং এই দিন ফেরাউনকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া এই দিন (নূহ আলাইহিস সালাম এর) নৌকা যুদি পাহাড়ে পৌঁছেছিল। অতএব নূহ আলাইহিস সালাম ও মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার উদ্দেশ্যে এই দিন রোজা রাখেন। নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা মূসা আলাইহিস সালাম এর অধিক নিকটবর্তী এবং এই রোজা রাখার অধিক হকদার। অতএব তিনি নিজ সাহাবায়ে কেরামকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। {{ মুসনাদ আহমাদ হাদীস নং-8717,, তাফসীর ইবনে রাজাব 1/223,, মাজমাউয যাওয়াইদ 3/184 হাদীস নং-5105,, ফাতহুল বারী ৪/২৪৭,, আদ-দুর্রুল মানসূর ৪/৪৩৬,, তাফসীর ইবনে কাসীর ৪/২৮১,, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/১১৭ }} 🌼ইমাম ইবনে কাসীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ﻫﺬا اﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻪ ﺷﺎﻫﺪ ﻓﻲ اﻟﺼﺤﻴﺢ অর্থাৎ- উক্ত হাদীসের সহীহ হাদীস শাহিদ বিদ্যমান। {{ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/১১৭ }} ﻋﻦ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﻗﺎﻝ: «ﻫﻮ ﻳﻮﻡ ﺗﺎﺏ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺁﺩﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء অর্থাৎ- হযরত ইকরামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যেদিন আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আলাইহিস সালামের তৌবা কবুল করেছিলেন সেই দিনটি ছিল আশুরার দিন। {{ মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক 4/291 হাদীস নং-7852 }} ﻭﻗﺎﻝ اﻟﻀﺤﺎﻙ: ﺭﻓﻌﻪ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﺑﻴﻦ ﺻﻼﺗﻲ اﻟﻤﻐﺮﺏ ﻭاﻟﻌﺸﺎء. অর্থাৎ- বিখ্যাত মুফাসসির হযরত জেহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানের উঠানো হয় আশুরার দিন মাগরিব ও এশা নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে। {{ তাফসীরে সামারকান্দী 1/355 }} ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻗﺎﻝ: «ﻫﺒﻂ ﺇﻟﻰ اﻷﺭﺽ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻭﺻﺎﻡ ﻧﻮﺡ ﻭﻣﻦ ﻣﻌﻪ ﻣﻦ اﻟﻤﻐﺮﺏ ﺇﻟﻰ اﻟﻤﻐﺮﺏ অর্থাৎ- হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম (নৌকা হতে) জমিনে নামেন আশুরার দিন এবং তিনি ও তাঁর সম্প্রদায় রোজা রাখেন এক মাগরিব হতে দ্বিতীয় মাগরিব পর্যন্ত। {{ তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম 6/2040 হাদীস নং-10933 }} ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: «ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء، ﻳﻮﻡ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺼﻮﻣﻪ اﻷﻧﺒﻴﺎء ﻓﺼﻮﻣﻮﻩ ﺃﻧﺘﻢ অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিনের রোজা নবীগণ আলাইহিমুস সালাম রাখতেন অতএব তোমরাও এই দিন রোজা রাখো। {{ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা 2/311 হাদীস নং-9355,, জামেয় সাগীর সুয়ূতী হাদীস নং-7947,, লাতাইফুল মায়ারিফ ১/৪৮,, উমদাতুল কারী ১১/১১৮,, আল-মাতালিবুল আলীয়াহ ৬/১৫৩ হাদীস নং-১০৮২,, আদ-দুর্রুল মানসুর ৮/৪৯৯ }} 🌼 ইমাম বাবরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ﺭﻭﻯ اﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ ﺑﺴﻨﺪ ﺟﻴﺪ অর্থাৎ- ইমাম ইবনু আবী শাইবা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। {{ উমদাতুল কারী ১১/১১৮ }} ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ: ﺗﻴﺐ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﻡ ﻳﻮﻧﺲ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء অর্থাৎ- হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের তৌবা গ্রহণ করা হয় আশুরার দিন। {{ তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম 6/1988,, তাফসীর দুর্রে মানসূর ৪/৩৯২,, তাফসীর মাযহারী ৫/৫৭ }} عَنْ عَلِيٍّ قَالَ سَأَلَهُ رَجُلٌ فَقَالَ أَيُّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ قَالَ لَهُ مَا سَمِعْتُ أَحَدًا يَسْأَلُ عَنْ هَذَا إِلاَّ رَجُلاً سَمِعْتُهُ يَسْأَلُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا قَاعِدٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ قَالَ: ((إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصُمِ الْمُحَرَّمَ فَإِنَّهُ شَهْرُ اللَّهِ فِيهِ يَوْمٌ تَابَ اللَّهُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ)) অর্থাৎ- হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল, রামাদান মাসের পর কোন মাসের রোযা রাখতে আপনি আমাকে আদেশ করেন? তিনি তাকে বললেন, এই বিষয়ে আমি কাউকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনিনি। তবে হ্যাঁ এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে বসা ছিলাম। এই সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রামাদান মাসের পর আর কোন মাসের রোযা পালনে আপনি আমাকে আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রামাযান মাসের পর তুমি যদি আরো রোযা রাখতে ইচ্ছুক হও তবে মুহাররামের রোযা রাখ। যেহেতু এটা আল্লাহ তা'আলার মাস। এই মাসে এমন একটি দিবস আছে যেদিন আল্লাহ তা'আলা এক গোত্রের তাওবা ক্ববুল করেছিলেন এবং তিনি আরোও অনেক গোত্রের তাওবাও এই দিনে কুবুল করবেন। {{ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং-৭৪৬,, মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ২/৩০০ হাদীস নং-৯২২৩,, মুসনাদ আহমাদ হাদীস নং-১৩৩৫,, মুসনাদ আবী ইয়ালা হাদীস নং-৪২৭,, উমদাতুল কারী ১১/১১৮,, কান্জুল উম্মাল ৮/৫৭০ হাদীস নং-২৪২২০ }} 🌼 ইমাম তিরমিযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ অর্থাৎ- হাদীসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ اﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ , ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻋﻴﺪ ﻧﺒﻲ ﻛﺎﻥ ﻗﺒﻠﻜﻢ ﻓﺼﻮﻣﻮﻩ ﺃﻧﺘﻢ অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আশুরার দিন তোমাদের পূর্বের নবীগণ আলাইহিমুস সালাম-এর ঈদের দিন ছিল অতএব তোমরা সেই দিন রোজা রাখো। {{ মুসনাদুল বাজ্জার ১৭/১৮৫ হাদীস নং-৯৮১৩,, মুসনাদুল ফিরদাউস ৫/৫৩০ হাদীস নং-৮৯৮৯,, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৮৫ হাদীস নং-৫১১৫,, জামেউল আহাদীস ২৪/৩০২ হাদীস নং-২৭২০৪,, জামেয় সাগীর সুয়ূতী হাদীস নং-৫৩৪৭,, কান্জুল উম্মাল ৮/৫৭৫ হাদীস নং-২৪২৫০ }} 🌼 ইমাম হাইসামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ﺭﻭاﻩ اﻟﺒﺰاﺭ، ﻭﻓﻴﻪ ﺇﺑﺮاﻫﻴﻢ اﻟﻬﺠﺮﻱ ﻭﺛﻘﻪ اﺑﻦ ﻋﺪﻱ، ﻭﺿﻌﻔﻪ اﻷﺋﻤﺔ অর্থাৎ- হাদীসটি ইমাম বায্যার নকল করেছেন , উক্ত সনদে ইব্রাহিম হুজরী নামক রাবী রয়েছেন ইমাম ইবনু আদী তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন এবং অন্যান্য ইমামগণ তাকে দুর্বল বলেছেন। {{ মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৮৫ }} অর্থাৎ হাদীসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে তাছাড়া ইমাম সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি 'জামে সাগীর' গ্রন্থে উক্ত হাদীস সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। 🏵️ সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত হাদীস কে কিছু মানুষ শুধু এই জন্য জাল ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করে যে, "এখানে আশুরার দিনকে কোন নবীর ঈদের দিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে আর ঈদের দিন রোজা রাখা জায়েজ নয় তাই যেহেতু হাদিসের অর্থটি শরীয়ত সম্মত নয় তাই হাদিসটি জাল সাব্যস্ত হবে।" কিন্তু তাদের উপরোক্ত ধারণাটি সঠিক নয়, কারণ ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ এটা শ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়তের বিধান পূর্বের নবীগণের বিধান নয়, তাদের শরীয়তে ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ ছিল না তাই হাদীসটিকে তাদের শরীয়তের নজরেই দেখা উচিত। নিম্নোক্ত হাদীসটিও যার সমর্থন করে- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﻰ ﻗﺎﻝ: ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻳﻮﻣﺎ ﺗﺼﻮﻣﻪ اﻟﻴﻬﻮﺩ ﺗﺘﺨﺬﻩ ﻋﻴﺪا. ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: " ﺻﻮﻣﻮﻩ ﺃﻧﺘﻢ অর্থাৎ- হযরত আবু মুসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আশুরার দিনটি এমন একটি দিন যে দিনে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকেরা রোজা রাখতো ও তাকে ঈদ হিসাবে পালন করত। অতএব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা সেই দিন রোজা রাখো। {{ মুসনাদ আহমাদ হাদীস নং-১৯৬৬৯,, সুনানে কুবরা নাসায়ী হাদীস নং-২৮৬১,, জামিউল মাসানিদ ওয়াস সুনান ৪/৩৮৭ হাদীস নং-৫৪৫৭ }} 🌼 শায়েখ শুয়ায়েয আর্নাউৎ বলেন- ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ اﻟﺸﻴﺨﻴﻦ অর্থাৎ-ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটির সনদ সহীহ। {{ তাখরীজ মুসনাদ ৩২/৪৪৫ }} عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَتَتَّخِذُهُ عِيدًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((صُومُوهُ أَنْتُمْ অর্থাৎ- হযরত আবু মুসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আশুরার দিন টি এমন একটি দিন যাকে ইহুদিরা সম্মান করতো ও ঈদ হিসাবে পালন করতো। অতঃপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা সেই দিন রোজা রাখো। {{ সহীহ মুসলিম হাদীস নং-২৭১৬,, মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ২/৩১১ হাদীস নং-৯৩৫৩,, সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস নং-৩৬২৭,, সুনানে কুবরা বাইহাকী ৪/৪৪৭ হাদীস নং-৮৪১৪ }} 🌼 হাদীসটি বিভিন্ন গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ﻗﺘﻞ اﻟﺤﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺳﻨﺔ ﺇﺣﺪﻯ ﻭﺳﺘﻴﻦ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء অর্থাৎ-ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কে ৬১ হিজরী আশুরার দিন শহীদ করা হয়েছিল। {{ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা 7/19 হাদীস নং-৩৩৯৩৩,, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬/২৩১,, মু'জামে কাবীর তাবরানী ৩/৯৮ হাদীস নং-২৭৮৩ }} ﻗﺎﻝ ﻗﺘﺎﺩﺓ: ﻗﺘﻞ اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻳﻮﻡ اﻟﺠﻤﻌﺔ অর্থাৎ- হযরত কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জুমাবার আশুরার দিন শহীদ করা হয়েছিল। {{ মুস্তাদরাক হাকীম ৩/১৯৮ হাদীস নং-৪৮৩০,, ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ اﻟﺨﺪﺭﻱ، ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﻣﻦ ﻭﺳﻊ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻭﺳﻊ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺳﺎﺋﺮ ﺳﻨﺘﻪ অর্থাৎ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আশুরার দিন স্বীয় পরিবারের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করবে ( উত্তম আহারের ব্যবস্থা করবে ) আল্লাহ তাআলা সারা বছর তার প্রাচুর্য বাড়িয়ে দেবেন। {{ ফাযাইলে আওকাত বাইহাকী ১/৪৫৩ হাদীস নং-২৪৫,, আদ-দুর্রুল মানসূর ৮/৫০০,, শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী ৫/৩৩৩ হাদীস নং-৩৫১৪,, জামেয় সাগীর সুয়ূতী হাদীস নং-১২৬৪৪,, মু'জাম ইবনুল আরাবী ১/১৪০ হাদীস নং-২২৫,, ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ، ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: " ﻣﻦ ﻭﺳﻊ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻭﺳﻊ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻠﻪ ﻃﻮﻝ ﺳﻨﺘﻪ অর্থাৎ- হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারের ব্যয় বৃদ্ধি করবে, ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করবে; আল্লাহ সারা বছর তার প্রাচুর্য বাড়িয়ে দেবেন।' {{ শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী ৫/৩৩১ হাদীস নং-৩৫১২,, আদ-দুর্রুল মানসূর ৮/৫০০,, আল-মাকাসিদুল হাসানাহ ১/৬৭৪ হাদীস নং-১১৯৩ }} ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﻣﻦ ﻭﺳﻊ ﻋﻠﻰ ﻋﻴﺎﻟﻪ ﻭﺃﻫﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻭﺳﻊ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺳﺎﺋﺮ ﺳﻨﺘﻪ অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করবে ( উত্তম আহারের ব্যবস্থা করবে,) আল্লাহ তা'আলা সারা বছর তার উত্তম ব্যবস্থা করবেন। {{ শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী ৫/৩৩৩ হাদীস নং-৩৫১৫,, আল-মাকাসিদুল হাসানাহ ১/৬৭৪ হাদীস নং-১১৯৩,,আদ-দুর্রুল মানসূর ৮/৫০০,, জামেউল আহাদীস হাদীস নং-২৪১১০ }} 🔘সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত তিনটি হাদীসকে কিছু মানুষ জাল অথবা অতি দুর্বল বলে ছুড়ে ফেলে দেয় কিন্তু হাদীসের সনদ সম্পর্কে সঠিক পর্যালোচনা করলে একথা দিবালোকে ন্যায় প্রমাণিত হয় যে, উপরোক্ত হাদীস সমূহ জাল ও ভিত্তিহীন নয় বরং ইমামগণের মতে হাদিসটি হয়তো সহীহ অথবা হাসান সনদে বর্ণিত যেমন- 🌼 ইমাম বাইহাকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদীস সমূহ উল্লেখ করে বলেন- ﻫﺬﻩ اﻷﺳﺎﻧﻴﺪ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﺿﻌﻴﻔﺔ ﻓﻬﻲ ﺇﺫا ﺿﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻌﺾ ﺃﺧﺬﺕ ﻗﻮﺓ، ﻭاﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ উপরোক্ত সনদসমূহ যদিও দুর্বল কিন্তু এক সনদকে অপরিসনাদের সঙ্গে যুক্ত করলে সেটি মজবুত আকার ধারণ করে আল্লাহ সর্ব জ্ঞানী। {{ শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী ৫/৩৩৩ }} 🌼 ইমাম ইবনে হাজার হায়তাতী মাক্কী (ইন্তেকাল-৯৭৩ হিঃ) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ﻭﻇﺎﻫﺮ ﻛﻼﻡ اﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺃﻥ ﺣﺪﻳﺚ اﻟﺘﻮﺳﻌﺔ ﺣﺴﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﻱ ﻏﻴﺮ اﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﺃﻳﻀﺎ অর্থাৎ-ইমাম বাইহাকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মন্তব্য হতে প্রকাশ পায় যে, হাদীসটি ইমাম ইবনে হিব্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ব্যতীত অন্য ইমামগণের মতেও হাসান সনদে বর্ণিত। {{ আস-সাওয়াইকুল মুহরিকা ২/৫৩৬ }} 🌼 ইমাম শামসুদ্দীন সাখাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল-৯০২ হিঃ) বলেন, ﺇﻥ ﺃﺳﺎﻧﻴﺪﻩ ﻛﻠﻬﺎ ﺿﻌﻴﻔﺔ، ﻭﻟﻜﻦ ﺇﺫا ﺿﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻌﺾ ﺃﻓﺎﺩ ﻗﻮﺓ، ﺑﻞ ﻗﺎﻝ اﻟﻌﺮاﻗﻲ ﻓﻲ ﺃﻣﺎﻟﻴﻪ: ﻟﺤﺪﻳﺚ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻃﺮﻕ، ﺻﺤﺢ ﺑﻌﻀﻬﺎ اﺑﻦ ﻧﺎﺻﺮ اﻟﺤﺎﻓﻆ، ﻭﺃﻭﺭﺩﻩ اﺑﻦ اﻟﺠﻮﺯﻱ ﻓﻲ اﻟﻤﻮﺿﻮﻋﺎﺕ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ اﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ اﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻭﻗﺎﻝ: ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﻣﺠﻬﻮﻝ، ﻭﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺫﻛﺮﻩ اﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻓﻲ اﻟﺜﻘﺎﺕ، ﻓﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﻳﻪ، ﻗﺎﻝ: ﻭﻟﻪ ﻃﺮﻳﻖ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﻣﺴﻠﻢ، ﺃﺧﺮﺟﻬﺎ اﺑﻦ ﻋﺒﺪ اﻟﺒﺮ ﻓﻲ اﻻﺳﺘﺬﻛﺎﺭ ﻣﻦ ﺭﻭاﻳﺔ ﺃﺑﻲ اﻟﺰﺑﻴﺮ ﻋﻨﻪ، ﻭﻫﻲ ﺃﺻﺢ ﻃﺮﻗﻪ، অর্থাৎ- হাদীসটির সনদ সমূহ যদিও দুর্বল কিন্তু এক সনদকে অপর সনদের সঙ্গে যুক্ত করার পর তা মজবুত হয়ে যায়। বরং ইমাম হাফিজ জাইনুদ্দীন ইরাক্বী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল-৮০৬ হিঃ) নিজ 'আমালী' এর মধ্যে বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসটির কয়েকটি সনদ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু সনদকে ইমাম ইবনুন নাসির সহীহ বলেছেন। আর ইবনু জাওজী হাদীসটিকে সুলাইমান বিন আবু আব্দুল্লাহ হতে বর্ণনা করে 'মাওজুআত' এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, সুলাইমান হলেন মাজহুল অর্থাৎ অপরিচিত রাবী। কিন্তু ইমাম ইবনে হিব্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সুলাইমান কে বিশ্বস্ত ও মজবুত রাবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অতএব হাদীসটি তার মতে হাসান সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাদীসটির আর একটি সনদ হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। যা ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র 'ইস্তিযকার' এর মধ্যে হযরত আবু জুবায়ের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। আর সেটাই হল এই হাদীসের সবচাইতে সহীহ সনদ। {{ আল-মাকাসিদুল হাসানাহ ১/৬৭৪-৬৭৫ }} 🌼এছাড়া উক্ত আলোচনা টি ইমাম শাহাবুদ্দিন কাস্তালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল ৯২৩-হিঃ) "আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ৩/৪৩৫-৪৩৬" মধ্যে এবং ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি "আদ-দুরারুল মুনতাসিরা ১/১৮৬" এর মধ্যে উল্লেখ করে হাদীসটিকে সহীহ প্রমাণ করেছেন। 🌼ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল-৯১১হিঃ) বলেন- ﻫﻮ ﺛﺎﺑﺖ ﺻﺤﻴﺢ অর্থাৎ- হাদীসটি সহীহ সনদ দ্বারা প্রমাণিত। {{ আদ-দুরারুল মুনতাসিরা ১/১৮৬ }} 🌼 ইমাম ইবনে হাজার হায়তাতী মাক্কী (ইন্তেকাল-৯৭৩ হিঃ) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ﻭﺭﺩ ﻣﻦ ﻃﺮﻕ ﺻﺤﺢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺑﻌﺾ اﻟﺤﻔﺎﻅ অর্থাৎ-হাদীসটি কয়েকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে তন্মধ্যে কিছু সনদকে হাদীসের হাফিজ ইমামগণ সহীহ বলেছেন। {{ফাতাওয়া ফিকহীয়াতুল কুবরা ২/৬৮ }} তিনি অন্যত্র বলেন- ﻫﺬا ﺣﺪﻳﺚ ﻓﻲ ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﻟﻴﻦ ﻟﻜﻨﻪ ﺣﺴﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﻱ اﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻭﻟﻪ ﻃﺮﻳﻖ ﺁﺧﺮ ﺻﺤﺤﻪ اﻟﺤﺎﻓﻆ ﺃﺑﻮ اﻟﻔﻀﻞ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻧﺎﺻﺮ অর্থাৎ-হাদীসটির সনদে কিছু দুর্বলতা থাকলেও ইমাম ইবনে হিব্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত এবং এই হাদীসের অন্য একটি সনদ কে ইমাম আবুল ফাযল মুহাম্মাদ বিন নাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বলেছেন। {{ আস-সাওয়াইকুল মুহরিকা ২/৫৩৬ }} এছাড়া ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইবনে তাইমিয়া এর আলোচনা করতঃ তিনি বলেন- ﺇﻧﻜﺎﺭ اﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﺃﻥ اﻟﺘﻮﺳﻌﺔ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻓﻴﻬﺎ ﺷﻲء ﻋﻨﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻫﻢ ﻟﻤﺎ ﻋﻠﻤﺖ ﻭﻗﻮﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺇﻧﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﻻ ﻳﺼﺢ ﺃﻱ ﻟﺬاﺗﻪ ﻓﻼ ﻳﻨﻔﻲ ﻛﻮﻧﻪ ﺣﺴﻨﺎ ﻟﻐﻴﺮﻩ ﻭاﻟﺤﺴﻦ ﻟﻐﻴﺮﻩ ﻳﺤﺘﺞ ﺑﻪ ﻛﻤﺎ ﺑﻴﻦ ﻓﻲ ﻋﻠﻢ اﻟﺤﺪﻳﺚ অর্থাৎ-ইবনে তাইমিয়া এর অস্বীকার করা যে, "এই প্রসঙ্গে কোন হাদিস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়নি" এটা তার ভুল সন্দেহ মাত্র যা উপরোক্ত আলোচনা আপনি জানতে পেরেছেন। আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মন্তব্য যে, "হাদীসটি সহীহ নয়" এর অর্থ হলো হাদীসটি সহীহ লি-জাতিহি নয়। তিনি হাদীসটির হাসান লি-গাইরিহী হওয়ার অস্বীকার করেননি। আর "হাদীস শাস্ত্রে" স্পস্ট করা হয়েছে যে, হাসান লি-গাইরিহী দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।(হাসান লি-গাইরিহী দ্বারা হুকুম প্রমাণ হবে) {{ আস-সাওয়াইকুল মুহরিকা ২/৫৩৬ }} 🌼 ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল-১০১৪ হিঃ) বলেন- ﻗﺎﻝ اﻟﻌﺮاﻗﻲ: ﻟﻪ ﻃﺮﻕ ﺻﺤﺢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﻭﺑﻌﻀﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺃﻣﺎ ﺣﺪﻳﺚ اﻻﻛﺘﺤﺎﻝ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻓﻼ ﺃﺻﻞ ﻟﻪ، অর্থাৎ -ইমাম ইরাক্বী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাদীসটির কয়েকটি সনদ রয়েছে তন্মধ্যে কিছু সহীহ আর কিছু মুসলিমের শর্তানুযায়ী সাব্যস্ত হয়। তবে আশুরার দিন সুরমা লাগানোর হাদীসটি ভিত্তিহীন। {{ মিরক্বাত শারহে মিশক্বাত ৪/১৩৪৯ }} 🌼 সহীহ বুখারী শরীফের সব থেকে পুরাতন আরবী ভাষ্যকার ইমামুল মুহাদ্দিসীন প্রখ্যাত ফাক্বীহ ইমাম ইবনু বেতাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল- ৪৪৯ হিঃ) বলেন- ﻟﻴﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻣﻦﻫﺎ: ﻣﺎ ﺫﻛﺮ ﻓﻰ اﻟﺤﺪﻳﺚ ﺃﻥ اﻟﻠﻪ ﻓﺮﻕ ﻓﻴﻪ اﻟﺒﺤﺮ ﻟﻤﻮﺳﻰ ﺑﻦ ﻋﻤﺮاﻥ، ﻭﻏﺮﻕ ﻓﺮﻋﻮﻥ ﻭﺟﻨﻮﺩﻩ، ﻭﻣﻦﻫﺎ ﻣﺎ ﺭﻭﻯ ﻣﻌﻤﺮ ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻗﺎﻝ: ﺭﻛﺐ ﻧﻮﺡ ﻓﻰ اﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﻓﻰ ﺭﺟﺐ ﻓﻰ ﻋﺸﺮ ﺑﻘﻴﻦ ﻣﻦﻫ، ﻭﻧﺰﻝ ﻣﻦ اﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء. ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ: ﻫﻮ ﻳﻮﻡ ﺗﺎﺏ اﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﺁﺩﻡ. ﻭﻗﺎﻝ اﺑﻦ ﺣﺒﻴﺐ: ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺧﺮﺝ ﻳﻮﺳﻒ ﻣﻦ اﻟﺠﺐ، ﻭﻓﻴﻪ ﻧﺠﻰ اﻟﻠﻪ ﻳﻮﻧﺲ ﻣﻦ ﺑﻄﻦ اﻟﺤﻮﺕ، ﻭﻓﻴﻪ ﺗﺎﺏ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﻡ ﻳﻮﻧﺲ، ﻭﻓﻴﻪ ﻭﻟﺪ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﻣﺮﻳﻢ، অর্থাৎ- আশুরার দিনটির বহু মর্যাদা ও ফযিলত রয়েছে। তন্মধ্যে, হাদীস শরীফে উল্লেখ হয়েছে যে, এদিন আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামের জন্য সমুদ্র ফাঁক করে দিয়েছেন এবং ফির'আউন ও তার সৈন্যদল কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। তন্মধ্যে, হযরত মা'মার হতে হযরত কাতাদাহ বর্ণনা করেন যে, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম রজব মাসের দশ দিন বাকী থাকতে নৌকায় আরোহণ করেন এবং আশুরার দিন নৌকা হতে অবতরণ করেন। হযরত ইকরামা বলেন, আল্লাহ তাআলা সেই দিন হযরত আদম আলাইহিস সালামের তৌবা গ্রহণ করেছেন। ইবনে হাবীব বলেন, সেই দিন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম কে ⭕ থেকে বের করা হয়েছে এবং সেই দিন আল্লাহ তাআলা হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম কে মাছের পেট থেকে নাজাত দিয়েছেন। সেই দিন হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের তৌবা আল্লাহ কবুল করেছেন এবং সেই দিন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর শুভ জন্ম হয়েছে। {{ শারহু সহীহ বুখারী ইবনে বেতাল ৪/১৪৫ }} ✍️ মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী, 🌎কুশমন্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর,🌎

Comments -

AeyshaPosted On: 2023-07-25
Jazaakallahu khaira
Most Read Articles