কোন মাজারে টাকা পয়সা দেওয়া নেকি না গুনাহ ?
মাজারে টাকা পয়সা দেওয়া নেকি না গুনাহ ?
💞بسم الله الرحمن الرحيم💞
نحمده و نصلي على رسوله الكريم اما بعد
قال الله تبار ك و تعالى فى القران المجيد
"وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۲﴾"
সুধী পাঠক! আহলে সুন্নাত ও জামাত এর অনুসারী ব্যক্তিগণ আউলিয়ায়ে কিরামদের ও হক্কানী পীরদের শ্রদ্ধা করে এবং তাঁদের মাজার শরীফ জিয়ারত করা কে মুস্তাহাব মনে করে।
এই কারণেই বহু সুন্নি মানুষ তাঁদের মাজার শরীফ জিয়ারত করতে যায়। মাজারে গিয়ে সাধারণ ব্যক্তিরা যে সমস্ত কাজ করেন, তন্মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল, মাজার শরীফে টাকা-পয়সা দান করা।
আজকে আমার আলোচনার বিষয় হল, কোন মাজারে টাকা-পয়সা দান করা বৈধ কিনা? মাজারে কেউ যদি টাকা পয়সা দেয় তাহলে সে নেকি পাবে নাকি গুনাহ?।
✴️বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে আমাদের কে দেখতে হবে যে, যেসব টাকা আমরা মাজারে দেই, সেই টাকা গুলো কোথায় যায় এবং সেই টাকা গুলো কি কি কাজে ব্যায় করা হয়?
আমার জানা মতে, বর্তমান সময়ে মাজারের টাকা যে সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তন্মধ্যে বেশিরভাগ কাজই ইসলামিক নয় বরং নিজের পরিবার-পরিজন চালানো এবং বিলাস বহুল জীবন যাপন করার জন্য যা প্রয়োজন তা এই টাকা দিয়েই মাজার কমিটি করে থাকেন।
আর এই কারণেই মাজার কমিটি অনেক সময় জোরপূর্বক মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এককথায় বলতে হলে বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মাজার শরীফ গুলো ব্যবসা ও বিজনেসের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাজার গুলো নিয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে বিজনেস করেই যাচ্ছে। বহু জায়গায় মাজার কমিটি মাজারকে অকশনে (ডাকে) দিয়ে দেয়। যারা বেশি টাকা দিয়ে মাজার নিতে পারবে তাদেরকেই ব্যবসা ও বিজনেসের জন্য মাজার দিয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তিরা মাজার ক্রয় করে, তারা যদি ১০-লাখ টাকা দিয়ে মাজার দুই বছর অথবা এক বছরের জন্য নিয়ে থাকে তাহলে সেখানে ২০-লাখ টাকা কি করে ইনকাম হবে তা নিয়ে তাদের ভাবনা, চিন্তা ও চেষ্টা থাকে। আর এভাবেই অধিকাংশ মাজার ব্যবসা-বাণিজ্য ও টাকা ইনকামের একটি বড় মাধ্যম হয়ে যায়।
আর এসব কারণেই আমরা মাজার শরীফে বহু অবৈধ ও অইসলামিক কাজ করতে মানুষদের লক্ষ্য করি। কারণ, মাজার ব্যবসায়ী ব্যক্তিরা টাকা ইনকামের জন্য হালাল ও হারামের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না। এসব মাজারের বেশিরভাগ খাদেম মুখে দাড়ি রাখে না এবং নামাযের সময় হলে সঠিকভাবে নামাজও আদায় করেনা। আর না কাউকে অবৈধ কাজ করতে দেখে তাকে সেই কাজ থেকে বাধা দেয়। বহু জায়গায় এমনও দেখা যায় যে, গরীব লোকদের মাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না আর প্রবেশ করলেও তাদের তাড়াতাড়ি বের করে দেওয়া হয় অথচ যখন কোন ধনী ব্যক্তি, নেতা অথবা কোন নায়ক-নায়িকা সেখানে যায়, তার কাছ থেকে টাকা পাবার আশায় তাকে স্পেশাল ভাবে মাজার শরীফ জিয়ারত করার বন্দোবস্ত করা হয়।
বহু জায়গা কমিটি ও গদ্দীনশীন ব্যক্তিরা মাজারকে অকশনে না দিয়ে সেখানে যা কিছু টাকা-পয়সা, চাদর, মুরগা মুরগি ইত্যাদি মানুষ দেয় সমস্ত জিনিস তারা নিজের ব্যবহারে নিয়ে আসে ও বিলাসবহুল ও লাক্সারি জীবন যাপন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন যথা- বাড়ি, গাড়ি, ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি সবকিছু সেই টাকা দিয়ে করে থাকে।
✴️মাজারগুলো বিজনেস ও ইনকামের একটি বড় মাধ্যম হওয়ার কারণেই বর্তমান সময়ে বহু মানুষ শুধু ইনকাম করার উদ্দেশ্যে নতুন ভুয়া ও ফোল্স মাজার তৈরি করে সেখান থেকে ইনকাম করে নিজের পরিবার-পরিজন চালায়।
✴️ শ্রদ্ধেয় পাঠক! খুবই কমসংখ্যক মাজার এমন পাওয়া যাবে যেখানকার টাকা কোন নেক কাজে ব্যবহার করা হয় যেমন মাদ্রাসা, মসজিদ, মুসাফিরখানা, এতিমখানা ও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ফ্রি চিকিৎসার জন্য হসপিটাল ইত্যাদি নির্মাণ করে পরিচালিত করা।
✴️সুতরাং মাজার শরীফে টাকা দেওয়ার আগে ভালোভাবে চেক করে নিন যে, এই টাকাগুলো কোথায় যায়? যদি কোনো ইসলামিক কাজে ব্যায় করা হয় তাহলে টাকা দিন, এক্ষেত্রে ইসলামিক ও নেকীর কাজে সাহায্য করার কারণে আপনিও নেকি পাবেন। আর যদি আপনার দেওয়া টাকা কোন অবৈধ ও নাজায়েজ কাজে ব্যায় করা হয় অথবা মাজার ব্যবসায়ী ব্যক্তিদের ভোগবিলাস ও আমোদ ফুর্তির কাজে লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে আপনি টাকা দিবেন না। কারন এক্ষেত্রে আপনার সেখানে টাকা দিয়ে গুনাহের কাজে সাহায্য করার কারণে আপনারও গুনাহ হবে। যেমন,
আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফে ইরশাদ করেন-
وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۲﴾
অনুবাদ! এবং সৎ ও খোদাভীরুতার কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো আর পাপ ও সীমালংঘণে একে অন্যের সাহায্য করো না এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো নিশ্চয় আল্লাহ্র শাস্তি কঠোর।
সূরা মায়েদা আয়াত নং-2
তাছাড়া হাদিসের মধ্যে রয়েছে,
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
اﻟﺪاﻝ ﻋﻠﻰ اﻟﺨﻴﺮ ﻛﻔﺎﻋﻠﻪ
অর্থাৎ নেক কাজে সাহায্যকারী নেক কাজ করার ন্যায় নেকির হকদার হবে।
{{মুজামে আওসাত তাবরানী হাদিস নং-2384,, মুসনাদে আহমদ হাদিস নং- 23027,, মুসনাদুল বাজ্জার হাদিস নং-7520,, সুনানে তিরমিজি হাদিস নং-2670,,
عن ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻭاﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ
اﻟﺪاﻝ ﻋﻠﻰ اﻟﺨﻴﺮ ﻛﻔﺎﻋﻠﻪ ﻭاﻟﺪاﻝ ﻋﻠﻰ اﻟﺸﺮ ﻛﻔﺎﻋﻠﻪ
অর্থাৎ! হযরত আয়েশা ও হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা হতে বর্ণিত। নেক কাজে সাহায্য কারী ব্যক্তি নেক কাজ করার ন্যায় নেকি পাবে। এবং অসৎ কাজে সাহায্য কারী ব্যক্তি অসৎ কাজ করার ন্যায় গুনাহের হকদার হবে।
{{ মুসনাদুল ফেরদৌস হাদিস নং-3121 }}
{{ ইহয়াউল উলূম খন্ড-4 পৃষ্ঠা-351 }}
অতএব এক্ষেত্রে মাজার সমূহে টাকা না দিয়ে সরাসরি কোন মাদ্রাসা, মসজিদ, এতিমখানা মুসাফির খানা, দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য তৈরি হসপিটাল ইত্যাদি জায়গাতে দিয়ে দিন অথবা গরিব, মিসকিন, অভাবগ্রস্থ, অসুস্থ বা রাস্তায় পড়ে থাকা পাগল, ফকির ও অসহায় ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিন এবং সেই দানের নেকি উদ্দিষ্ট আল্লাহর অলির নামে ইসান করুন আপনি নাকি পাবেন ও সামাজের উন্নয়ন হবে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান শিক্ষিত ও জ্ঞানী সমাজের ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনীয় জায়গায় টাকা না লাগিয়ে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় দান সাদকা ও টাকা ব্যয় করতে পিছুপা হয় না। বর্তমান সময়ে এমন বহু মাজার পাওয়া যাবে যেখানে লোকজন লাখ লাখ টাকা দান করতে কোন রকম দ্বিধা করে না কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা ফকির ও অসহায় ব্যক্তি যখন নিজের ক্ষুধা মিটানোর জন্য তার কাছ থেকে পাঁচ দশ টাকা চায় তখন তাকে ব্যবসার তোকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় এবং তাকে খুশি করার জন্য টাকা তো দূরের কথা একটি সুন্দর ব্যবহার দিয়ে তাকে মানাতে পারে না।
আপনি কি মনে করেন? অসহায়, দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের পাশে না দাঁড়িয়ে মাজারে গিয়ে টাকা পয়সা দিলে আল্লাহ তা'আলা রাজি ও খুশি হয়ে যাবেন?
প্রয়োজনীয় জায়গায় দান খাইরাত না করে আল্লাহর ওলীগনের মাজারে লাখ লাখ টাকা দান করে মাজারের ভন্ড খাদিম ও ব্যবসায়ী পীরদের সাহায্য করলে সেই ওলীগণ খুশি হবেন?
কক্ষনোই না কক্ষনোই না।
ে
সম্মানিত সুন্নি সমাজ! আমরা আউলিয়ায়ে কিরাম ও হক্কানী পীরদের ভালোবাসি ও সম্মান করি। এর অর্থ এটা নয় যে, অন্ধের মত আমরা যা ইচ্ছা তা করতে পারি বরং আমাদেরকে সেই সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, যে সমস্ত কাজের মাধ্যমে মানুষ আউলিয়া কেরামের উপর আংগুল তুলতে সুযোগ পায় অথবা মাজার শরিফ গুলোকে বদনাম করার রাস্তা পায়।
وما توفيقي الا بالله العلي العظيم و الصلاة والسلام على حبيبه الكريم صلى الله عليه وسلم
✍️মুফতি আমজাদ হোসাইন সিমনানী✍️
🌍কুশমন্ডি, জেলা-দক্ষিন দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।🌍
💞 অভিমত ও সমর্থন 💞
১)) হযরত আল্লামা মৌলানা মুফতি আশরাফ রেজা নাইমী রাজমহল ঝাড়খন্ড ভারত~
السلام علیکم
بے شک ٹھیک ہے ۔لیکن موجودہ کچھ پیر و مرید کے لیئے کڑوا ہو سکتا ہے
میں اپنی ذاتی طور پر اس معاملے میں آپ کا موید ہوں اور ہمیشہ کے لئے خیر خواہ
اللہ تعالی آپ کو بدنظری سے بچائے
آمین
মুফতি আশরাফ রেজা নাঈমী,
২)) আজিজ মিল্লাত মুফতি আব্দুল আজিজ কালিমি সাহেব, ইমাম:-পাঁচ তলা জামে-মসজিদ, কালিয়াচক, মালদা।
نحمده ونصلى على رسوله الكريم..
মাজার শরীফ বরকত লাভ করার একটা সুন্দর জায়গা কিন্তু কিছু নাম ধারি পীর এবং দুনিয়ার পাগল কিছু নাম ধারি খাদেম আসল উদ্দেশ্যকে বিকৃত করে দিয়েছে, যার কারণে সুন্নীয়াতকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পরম ও চরম শ্রদ্ধাশীল ক্বোরআন ও হাদীসের পণ্ডিত,সত্য প্রচারে নির্ভীক হযরত মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী সাহেব - আসল মাসআলা এবং সময়ের অতি প্রয়োজনীয় বিষয় উপস্থাপন করেছেন তার জন্য আমার নেক দোয়া রইলো। পোস্টটি একদম সত্য। আমি 100% সহমত।
অন্ধভক্ত দূর করো
সততা-কে আঁখড়ে ধরো।
ইতি
আব্দুল আযীয কালিমী ।
Comments -