কুরবানীর চাঁদ উঠার পর পশু জবাই করা বৈধ কিনা
🌸 কুরবানীর চাঁদ উঠার পর পশু জবাই করা বৈধ কিনা? 🌸
🌹بسم الله الرحمن الرحيم🌹
💞 সম্মানিত মুসলিম সমাজ! ইসলাম ধর্মে যিলহাজ্জ মাসের নির্দিষ্ট তারিখে কুরবানী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যা প্রত্যেক মালিকে নিসাব সম্পদশালী ব্যক্তির উপর আদায় করা হল ওয়াজিব। আমাদের সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে কুরবানির চাঁদ সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণা ও কুসংস্কার বিদ্যমান, তন্মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ভুল ধারণা হলো- কুরবানির চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানি করা পর্যন্ত পশু জবাই করা ও পশুর গোশত খাওয়া নাজায়েজ। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে বহু মানুষ কুরবানির চাঁদ উঠার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত কোনো প্রকার পশু জবাই করে না, আর না কোন পশুর গোশত খাওয়া কে পছন্দ করে। ফলে অনেক সময় বহু মানুষ বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। উক্ত বিষয়ে যদি আমরা ইসলামী শরীয়তের মূল দলিলাদি যথা কুরআন, হাদিস, ইজমা ও ফিকাহ শাস্ত্রের অধ্যয়ন করি তাহলে অবশ্যই এ প্রসঙ্গে অবগত হবো যে, ইসলাম শরীয়তে এমন কোনো বিধান নেই যা দ্বারা কুরবানির চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানি করা পর্যন্ত পশু জবাই করা নিষিদ্ধ অথবা অবৈধ প্রমাণিত হয়। বরং শরীয়ত অনুযায়ী কুরবানির চাঁদ উঠার পূর্বে যেভাবে পশু জবাই করা জায়েজ ও বৈধ ছিল তদ্রুপ কুরবানির চাঁদ উঠার পরেও এ সমস্ত কাজ করা বৈধ ও জায়েজ রয়েছে। তবে হ্যাঁ! নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসসমূহের পর্যবেক্ষণ করলে একথা প্রমাণিত হয় যে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা কুরবানির পশু ক্রয় করেছেন এবং কুরবানী করার নিয়ত করেছেন তাদের জন্য জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল না কাটা ও নখ কর্তন না করা মুস্তাহাব কর্ম। যা নিম্নোক্ত হাদিস সমূহ হতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়-
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا دَخَلَتِ الْعَشْرُ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلاَ يَمَسَّ مِنْ شَعَرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا "
অর্থাৎ- উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন (যিলহাজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখের কিছুই স্পর্শ না করে (কর্তন না করে)।
{{ সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৫২৩২ }}
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، تَرْفَعُهُ قَالَ " إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَعِنْدَهُ أُضْحِيَّةٌ يُرِيدُ أَنْ يُضَحِّيَ فَلاَ يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلاَ يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا
অর্থাৎ- উম্মু সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন (যিলহাজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয় আর কারো নিকট কুরবানীর পশু উপস্থিত থাকে, যা সে যাবাহ করার নিয়্যাত রাখে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৫২৩৩ }}
قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، يَقُولُ سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلاَلُ ذِي الْحِجَّةِ فَلاَ يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ "
অর্থাৎ- হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে লোকের কাছে কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহজ্জের নতুন চাঁদ দেখার পর ঈদের দিন কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ৫২৩৬ }}
💘সম্মানিত মুসলিম সমাজ! উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই আপনারা জ্ঞাত হয়েছেন যে, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কুরবানির চাঁদের সঙ্গে পশু জবাই করার কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত কর্ম চাঁদ উঠার পূর্বে যেভাবে জায়েজ ও বৈধ ছিল চাঁদ উঠার পরেও তেমনি জায়েজ রয়েছে। সুতরাং কুরবানির চাঁদ ওঠার পর যদি কারো পশু জবাই করার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই সে পশু জবাই করতে পারে এতে তার কোন প্রকার অমঙ্গল ও ক্ষতি হবেনা। বরং যদি কোনো ব্যক্তি এই কুসংস্কার ও ভুল ধারণা কে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে উক্ত কাজ করে থাকে তাহলে সে নেকি পাবে। কারণ সমাজকে কুসংস্কার ও বিদআত মুক্ত করা নেকির কাজ।
💞وما توفيقي الا بالله العلي العظيم و الصلاة والسلام على سيدنا و مولانا محمد صلى الله عليه و على اله و اصحابه اجمعين💞
✍️মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী✍️
Comments -