সফর মাসের আখেরী চাহার শাম্বার সত্যতা কতটুকু? সেই দিন ফাতিহা করা বৈধ কিনা?
সফর মাসের আখেরী চাহার শাম্বার সত্যতা কতটুকু এবং সেই দিন ফাতিহা করা বৈধ কিনা?
প্রশ্ন:- কিছু সংখ্যক লোক সফর মাসের শেষ বুধবারে ফাতিহা করে থাকে । আর ফাতিহা করার কারণ বর্ণনা করে যে, এই দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন, একথা কি ঠিক? আর এই দিনে কি ফাতিহা করা যাবে?
*উত্তর:- সফর মাসের শেষ বুধবারের সত্যতা সম্পর্কে আ'লা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু কে প্রশ্ন করা হয় যে," ওলামা-ই দ্বীনের এ ব্যপারে কি অভিমত যে, সফর মাসের শেষ বুধবার সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, এই দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন। এর ভিত্তিতে সেই দিনে আহার ও শিরনী ইত্যাদি বিতরণ করে থাকে।মরূভূমি ও বন -জঙ্গলে ভ্রমণ করতে যায়। এই অনুমানের ভিত্তিতে অনেক জায়গায় বিভিন্ন ধরনের আমলসমূহ করা হয়। এই দিনকে অশুভ মনে করে ঘরে ব্যবহারকৃত পুরাতন বাসন-কোসন নালার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। আর চাদীর রকমারি তাবিয সে দিনে শরির সুস্থ্ রাখার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসুখের কথা খেয়াল করে রোগীদের ব্যবহার করায়।
এ সকল কান্ড কর্ম সে দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরোগ্য লাভের ভিত্তিতে করে থাকে। সুতরাং ইহা মূলতঃ শরিয়তের মধ্যে প্রমাণিত আছে কি না? এর উপর আমলকারী গুনাহগার হবে কি না?না তিরস্কারযোগ্য হবে? বিস্তারিত বর্ণনা করূন। প্রতিদান দেয়া হবে।"
এর উত্তরে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: *"আখেরী চাহার শাম্বার কোন ভিত্তি নেই। ওই দিন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরোগ্য লাভ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং যে রোগে ওফাত শরীফ হয়েছে তার সূচনা সে দিন থেকে ধরা হয়। আর একটি হাদীস মারফু এসেছে:
آخر اربعا من الشھر یوم نحس مستمر
অনুবাদ:এ মাসের শেষ বুধবার হচ্ছে ঘটমান অকাল্যানের দিন।
আরো বর্ণিত রয়েছে যে,হযরত সাইয়েদুনা আইয়ুব আলা নাবীয়েনা আলাইহিস সালাত ওয়াত তাসলীম এই দিনই রোগাক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই দিনকে অশুভ মনে করে মাটির বাসন-কোসন ভেঙ্গে ফেলা গুনাহ। তাতে সম্পদ নষ্ট হয়। প্রকৃতপক্ষে এসব কথা বার্তা ভিত্তিহীন ও অনর্থক"। আল্লাহু সর্বজ্ঞ।
(ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ খন্ড নং 23 পৃষ্ঠা নং 271,272 প্রকাশিত জামিয়া নিযামিয়া লাহোর, পাকিস্তান)
হুযূর সাদরুশ শারীয়াহ হযরত আল্লামা মৌলানা মুফতী আমজাদ আলী আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:"সফর মাসের আখেরী চাহার শাম্বা (সফর মাসের শেষ বুধবার) হিন্দুস্তানে প্রচুর মানানো হয়। লোক নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। ভ্রমণ করে, আনন্দ করে ও শিকার করতে যায়। পুরি তৈরি করে।(কাপড় চোপড়) ধৌত করে, স্নান করে ও খুশি মানায়। আর বলে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এই দিনে আরোগ্য লাভ করে স্নান করেছিলেন। আর পবিত্র মদিনার বাইরে (আনন্দ উপভোগ করার জন্য) ভ্রমণ করেছিলেন। এসব কথা ভিত্তিহীন। বরং ওই দিনে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রোগ আরো বেড়ে গিয়েছিল। লোকেরা যে সব বানানো কথা বলে, সব আসলের বিপক্ষে । আর কিছু সংখ্যক লোক বলে যে, এই দিনে বিপদ সমূহ আসে। আরো নানানরকম কথা বর্ণনা করা হয়। সব বিনা দলীলে। বরং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে "لا صفر" অর্থাৎ: সফর কোন জিনিস নেই।(উক্ত হাদীস) এরকম সমস্ত কাজ বা ভুল কথার প্রত্যাখ্যান করে"।
(বাহারে শরিয়ত হিসসা নং 11 পৃষ্ঠা নং 659,660, প্রকাশিত; দাওয়াতে ইসলামি)
সুতরাং উক্ত বাজে ও ভিত্তিহীন কথা, ভুল বর্ণনা ও ভুল বিশ্বাস সমূহের দিক লক্ষ্য করে ফাতিহা খানি করা নাজায়েয বা অবৈধ। হ্যাঁ,যদি কেউ উক্ত ভিত্তিহীন কথা, ভুল বর্ণনা ও ভুল বিশ্বাস সমূহ থেকে দূরে সরে ওইরকম ভাবে ফাতিহা করতে চায়, যেরকম সাধারণত করা হয়, তাহলে ফাতিহা করতে পারে। কেননা ফাতিহা জায়েয হওয়ার জন্য কোন দিন নিষিদ্ধ নয়।( অর্থাৎ প্রত্যাক দিন ফাতিহা করা যায়)।
ইতি:
মুফতী গুলজার আলী ক্বাদরী মিসবাহী
হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
Student: ইসলামিক ইউনিভার্সিটি আল জামিয়াতুল আশরাফিয়া মুবারকপুর, আজমগড়, ইউ.পি
24/02/1442
11/10/2020
نحمدك ياالله والصلوة والسلام عليك يا رسول الله وعلى الك وأصحابك.. أما بعد
উক্ত লেখনিটি পাঠ করলাম (আল হামদুলিল্লাহ) খুব সুন্দর হয়েছে, পোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকের নিকট আবেদন পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদেরও পাঠ করার সুযোগ করে দিন!
পরিশেষে লেখকের জীবন ধন্য হোক এবং তার সংসার ফুলের বাগানের মতো প্রস্ফুটিত হোক এই প্রার্থনা করি।
ইতি
আব্দুল আযীয কালিমী ।
12/10/2020
الجواب صواب والمجیب مثاب
فقیر قادری محمد علیم الدین اختری رضوی مظہری جنگیپوری ١١/اکتوبر سن ٢٠٢٠
উত্তর সঠিক আছে।
ইতি
ফাক্বীহে বাঙ্গাল হযরত আল্লামা মৌলানা মুফতী মোঃ আলিমুদ্দিন
Comments -