মুসলমানীতে দাওয়াত করে খাওয়ানো জায়েয কিনা?
মুসলমানীতে দাওয়াত করে খাওয়ানো জায়েয কিনা?
প্রশ্নঃ- লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে আহারের আয়োজন করা যাবে কিনা? এবং সেই উপলক্ষে নিমন্ত্রণ খাওয়া কি হারাম?
উত্তরঃ- না, লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলেক্ষ আহারের আয়োজন করা ও আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে আহার করানো হারাম নয় বরং জায়েয।কোনো বিষয়ে গবেষণা না করে ঢালা ভাবে একটা হালাল জিনিষ কে হারাম বানিয়ে দেওয়া নিজের কথাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য হালাল বস্তুকে হারামের ফতোয়া দেওয়া সম্পূর্ণ মূর্খতা পূর্ণ কাজ। আসলে মুর্খ ব্যক্তি যখন ফাতাওয়ার দায়িত্ব পালন করে তখন সে নিজের নাফসের (আত্মার) গোলামি করে-
সুরা বাকারা আয়াত নং-286-
আল্লাহ পাক বলেনঃ- إنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
অর্থাৎঃ-নিশ্চয় আল্লাহ পাক সীমালংঘনকারী কে পছন্দ করেন না। —
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিসনং-3367-
عن سَلْمَانَ الفارِسَیّ : قَالَ : سُئل رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ السَمنِ وَالْجُبْنِ وَالْفِرَاءِ قَالَ : الْحَلَالُ مَا أَحَلَّ اللهُ فِي كِتَابہ . والحَرَامُ مَا حَرَّمَ اللهُ فِي كِتَابِهِ، وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ مِمَّا عفا عنه. :
হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো ঘি পানির ও জংলি গাধা সম্পর্কে.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হালাল ওই বস্তু যাকে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে হালাল করেছেন। এবং হারাম ওই বস্তু যাকে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে হারাম করেছেন। আর যেই সমস্ত জিনিষে আল্লাহ পাক চুপ থেকেছেন সেগুলি হচ্ছে মুআফ (মুবাহ) জায়েয।–—
লা মাজহাবীদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া
মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া-খণ্ড-1-পৃষ্ঠা-180
انه لا يجوز أن يُحرم شَيئٌ إِلَّا بِدَليلٍ شَرْعِيّ
অর্থাৎঃ- শারয়ী দলীল ব্যাতিত কোনো জিনিষ কে হারাম বলা না জায়েয।
অতএবঃ-উল্লেখিত দলীল দ্বারা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যায় যে কোনো জিনিসকে হারাম প্রমাণ করতে হলে শারয়ী দলিলের প্রয়োজন। শারয়ী দলিল ছাড়া কোনো জিনিষ কে হারাম প্রমাণ করা জায়েয নয়। ররং গুনাহের কাজ কারন আল্লাহ পাক যেই জিনিষ কে হারাম বলেন নি তাহলে বান্দার কি অধিকার রয়েছে তাকে হারাম বলার।
এবার আসি মূল কথায় লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে যে আহারের আয়োজন করা হয়। এটা কোনো জরুরী বিষয় নয় যে করতেই হবে না করলে লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) হবে না বিষয়টা এমন না, খুশি হয়ে কেউ কেউ করে থাকেন আবার অনেকেই করেনা। লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে আহারের ব্যবস্থা করা জায়েয, এ সম্পর্কে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যেটা উল্লেখ করেছেন।
ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি 'আল আদাবুল মুফরাদ'-হাদিস নং-1246
حَدَّثَنَا ذكريا بن يَحْيَى قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو اُسَامتہ . عَنْ عُمَرَبنِ حَمز تہ قَالَ : أَخْبَرَ سالِمُ قَالَ : خَتَنَنِي ابْنُ عُمَرَ أَنَا وَنُعِيْمًا فذَبَحَ عَلَيْنَا كَبْشًا فَلَقَدْ رَأَيْتَنَا وَإِنَّا لَنَجْزِلُ بِهِ عَلَى الصَّبْيَانِ ان ذبح عنا. كبشا
অর্থাৎঃ- হযরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে হযরত ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা আমাকে আর নাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু কে লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) করার অনুমতি দিলেন। আবার খুশি হয়ে একটি ছাগল জবাই করলেন। ফলে আমরা ছেলেরা গর্ব করে বলতাম, যে আমাদের জন্য ছাগল জবাই করা হয়েছে।-
উল্লেখীত হাদিস থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে, লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে মানুষজনের আহারের ব্যবস্থা করে দেওয়া সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
এ সম্পর্কে হানাফী মাজহাবের বিক্ষাত কিতাব-
ফাতাওয়ায়ে আলমগীর-খন্ড-5-পৃষ্ঠা- 122
لا ينبغي التخلف. عن إِجَابَة الدَّعُوَةِ العَامَّةِ كَدعوَةِ الْعُرْسِ وَالخِتَانِ وَنَحْوِهِمَا وَإِذَا أَجَابَ فَقَدْ فَعَلَ مَا عَلَيْهِ أَكل أو لَمْ يَاکُلُ
অর্থাৎঃ বিবাহ এবং লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলেক্ষ্যে এবং আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করলে অস্বীকার করা ঠিক নয়। আর যখন সেই ব্যক্তি নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে, দাওয়াত ক্বারীর বাড়ি চলে গিয়েছে, তাহলে তার হক আদায় হয়ে গিয়েছে,
সে আহার করলেও হক আদায় হয়ে যাবে না করলেও হক আদায় হয়ে যাবে।
অতএবঃ- উল্লেখীত ফাতাওয়ার আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে বিবাহ ও লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে কেউ নিমন্ত্রণ করলে অস্বীকার করা ঠিক নয়।
আসুন এ সম্পর্কে আমরা দারুল উলুম দেওবান্দের ফাতাওয়া দেখি।
মুফতীয়ে আযাম দারুল উলুম দেওবান্দ মুফতী আজিজুর রহমান উসমানি ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবান্দ-খন্ড-16-পৃষ্ঠা-264-
তিনাকে প্রশ্ন করা হয় এইভাবে…
سوال: ختنہ کے وقت احباب و اقرباء کو بلانا اورنیوتا وغیرہ لینا اور دعوت کرنا شرعا درست ہے یا نہیں ؟ بندہ کا خیال ہے کہ ختنہ کے وقت بجائے رسوم کے خیرات کرنا اچھا ہے یہ خیال کیسا ہے؟
অর্থাৎঃ- লিঙ্গাগ্রচর্মছেদনের (মুসলমানী) সময় বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন কে ডাকা এবং সেই উদ্দেশ্যে গিফট নেওয়া দাওয়াত করা শরিয়তে বৈধ কিনা? এক ব্যাক্তির ধারণা যে লিঙ্গাগ্রচর্মছেদনের (মুসলমানী) সময় আহার আয়োজন করার পরিবর্তে দান খায়রাত করা অতি উত্তম এটা কি সঠিক?
الجواب : ختنہ کی تقریب میں اقرباء و احباب کو بلانا اور دعوت کرنا درست ہے اور نیوتا لینے دینے کو فقہا نے جائز لکھا ہے البتہ جبر نہ ہو اور نہ کرنے والے پر طعن و تشنیع بے جا ہے یہ جہالت کی بات ہے اور یہ جو آپ کا خیال ہے یہ بھی آچھا۔
অর্থাৎ:- লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলেক্ষে বন্ধু বান্ধব আতীয়স্বজনকে ডাকা ও দাওয়াত করা বৈধ। আর গিফট আদান-প্রদান করা কে ফোঁকাহায়ে কেরামগণ জায়েজ বলে লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে বাধ্যতামূলক না হয়। যারা অনুষ্ঠান করে না তাদেরকে মন্দ বলা উচিত নয় এটা অজ্ঞতা।এবং আপনার ধারণাটাও সঠিক। অর্থাৎ মানুষজনকে নিমন্ত্রণের পরিবর্তে সাদকা করে দেওয়া।
এবিষয়ে লামাযহাবীদের শাইখুল ইসলামের ফাতাওয়া এবনে তাইমিয়া বলেন। তার বিক্ষাত ফাতাওয়ার কিতাব:- মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া-খণ্ড-32-পৃষ্টা-131
তাকে লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন(মুসলমানী) নিমন্ত্রণা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো তিনি উত্তরে বলেন। –
وَاَمَّا وَلِيْمَةُ الْختانِ فھى جائزَتہ مَنْ شَاءَ فَعَلَهَا وَمَنْ شَاءُ تَرَكَهَا
অর্থাৎঃ- লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে যে আহারের ব্যবস্থা করা হয় সেটা জায়েয. কেউ চাইলে করতে পারে, না চাইলে না করতে পারে
* উল্লেখীত দলীল সমূহ থেকে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যায় যে লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (মুসলমানী) উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করে মানুষজন কে আহারের ব্যবস্থা করে দেওয়া শরীয়তে জায়েজ রয়েছে।—
সুতরাংঃ এটাকে না জায়েজ হারাম বলা সঠিক নয়। একটা জায়েজ বস্তুকে বিনা দলিলে হারামের ফতোয়া দেওয়া সম্পূর্ণ অজ্ঞতার পরিচয় ও গুনাহের কাজ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুন আমিন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
ইতি
মাওলা মানিরুল ইসলাম
(কালিয়াচক) মালদা-পশ্চিমবঙ্গ ভারত।
শিক্ষকঃ মাদ্রাসা গাওসিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া হরিবাটি
কুলি-মুর্শিদাবাদ-পশ্চিমবঙ্গ ভারত।
অভিমতঃ
আজিজে মিল্লাত মুফতী আব্দুল আজিজ কালিমী। কালিয়াচক মালদা।
----------------------------------------------
উক্ত লিখনীটি আমি পাঠ করলাম আলহামদুলিল্লাহ যথা সুন্দর হয়েছে লিখনীর সাথে আমি পূর্ণরূপে সহমত পোষণ করছি।
লেখক এর জন্য কল্যাণ কামনা করছি।
আমীন।
Comments -