সর্ব প্রথম রমজান মাসের খরর দিলে কি খবর দাতার প্রতি জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়?
(26) প্রশ্ন:- সর্ব প্রথম রমজান মাসের খরর দিলে কি খবর দাতার প্রতি জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়?
উত্তর: সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছি রমযান মাস আসতে না আসতেই কিছু লোক বলতে আরম্ভ করে যে, হাদীস শরিফে আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম রমযান মাসের খবর দিবে তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম।"
সম্মানিত পাঠক! এরূপ কোন হাদীস নেই। আর যা হাদীস নয় তাকে হাদীস বলে প্রচার করা একেবারেই হারাম। বরং কোন কোন সময় কুফরীও।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ کَذَبَ عَلَيَّ فَلْیَلِجِ النَّارَ.
অনুবাদ:- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী শরীফ, হাদীস: 106)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শারেহে বুখারী হযরত আল্লামা মুফতী শারিফুল হক আমজাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"মিথ্যা হাদীস গড়া সর্বাবস্থায় নিশ্চিত রুপে হারাম এবং কঠিন বড় গুনাহ। চাই আক্বায়িদ সম্পর্কিত হোক তাই (শরীআতের) বিধি-বিধান সম্পর্কিত হোক চাই ফজিলত ও প্রশংসা সম্পর্কিত হোক চাই উৎসাহ প্রদান ও ভীতিপ্রদর্শন সম্পর্কিত হোক।" (নুযহাতুল ক্বারী শারহে বুখারী, খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 395, প্রকাশিত রেজবী কিতাব ঘর, দিল্লি)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নাঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"অর্থাৎ মিথ্যা হাদীস রচনাকারী দোযখী। এ থেকে বোঝা গেল যে, হাদীস বানানো কাবিরা গুনাহ; বরং ক্ষেত্রভেদে কুফরী। কেননা, এতে মিথ্যাও রয়েছে এবং দ্বীনের মধ্যে ফিতনা বিস্তারও। কিছু সংখ্যক মূর্খ সূফী তাহাজ্জুদের নামায ও ক্বোরআনী সূরা সমূহের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে কিছু হাদীস রচনা করে নিয়েছে। তারা যেন এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।
স্মর্তব্য যে, হাদীস -ই মাওদ্বু (বানোয়াট হাদীস) এক জিনিস, হাদীস -ই দ্বয়ীফ (দুর্বল হাদীস) অন্য জিনিস। দ্বয়ীফ হাদীস কোন আমলের সাওয়াব বা ফযিলত বুঝানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, কিন্তু হাদীস -ই মওদ্বু কোন ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য নয়। (মিরআতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ, (বাংলা), খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 193)
মুসলিম শরীফে আছে -
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَكُونُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অনুবাদ:- হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ: আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম শরীফ, হাদীস 16)
মুফতী আহমদ ইয়ার খান নাঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"হাদীস রচনা করা জঘন্য গুনাহ। কেননা, হুযূর তাকে দাজ্জাল ও কাযযাব (মিথ্যুক) বলেছেন।" (মিরআতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ বাংলা খন্ড: 1, হাদীস: 161)
আরও বলেন:
"অর্থাৎ হাদিস রচনা করাও গুনাহ এবং জেনে শুনে বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করাও গুনাহ; বরং যে হাদিস সম্পর্কে তা বানোয়াট হবার ধারণা অধিক হয়, তাও যেন বর্ণনা না করে; শুধু বানোয়াট হবার সন্দেহ যথেষ্ট নয়। তবে হ্যাঁ, সেটা বানোয়াট বলে ঘোষণা দিয়ে বর্ণনা করা জায়েয, যাতে মানুষ তা থেকে বাঁচতে পারে।" (মিরআতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা) খন্ড, 1, পৃষ্ঠা: 193)
সুতরাং যে ব্যক্তি কোথাও কোন ধরনের বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেছে, কোথাও শেয়ার করেছে বা ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউব ইত্যাদিতে আপলোড করেছে, তার উপর অবিলম্বে তাওবা করা জরুরী। পাশাপাশি যেখানে শেয়ার করেছে বা আপলোড করেছে সেখান থেকে সেই পোস্ট ডিলিট করাও জরুরী।
তবে হ্যাঁ, রমযান মাসের আগমনের খবর দেওয়া বা মুবারক বাদ দেওয়া অবশ্যই সুন্নাত ও নেকীর কাজ।
হাদীস শরীফে রয়েছে -
َنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ -صَلَّی اللّٰہُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-: "أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ.
অনুবাদ:- হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "রমযান এসে গেছে, বরকতময় মাস।" (মিশকাত শরীফ, হাদীস: 1863)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাকীমুল উম্মত হযরত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নাঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"এ হাদীস শরীফ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, রমযান মাসের আগমনে খুশি হওয়া, একে অপরকে মোবারক বাদ দেওয়া সুন্নাত।" (মিরআতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ, (বাংলা) খন্ড: 3, পৃষ্ঠা: 178)
{{ সংগৃহীত: সমাজে প্রচলিত ১০০টি ভুল ধারণা, লেখক: মুফতী গুলজার আলী মিসবাহী}}
Comments -