পীর কে খোদা বলা, পীরের বাণীকে কুরআন তুল্য ভাবা ও পীরের জন্য সাজদা কে বৈধ বলার শারয়ী বিধান।
*প্রশ্ন* :
মাননীয় মুফতি আখতার নাঈমী সাহেব!আপনার কাছে জানতে চাই,একটি ছেলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে,আপনাকে তা পাঠানো হলো।
পড়ে দয়া করে উত্তর দেবেন।
(১) পীরকে খোদা মনে করা কেমন?
(২) আল্লাহ কোথায় থাকেন? আল্লাহ কাবাতে থাকেন বলা কেমন?
(৩) পীরের বাণীকে কোরআন মনে করা কেমন?
(৪) পীর কে সাজদা করা কেমন?
ছেলেটির উপর শরীয়তের বিধান কি হবে?
*প্রশ্নকারী*
মাওলানা মোহা আব্দুস সালাম রেজবী,গুদুয়া গ্রাম জামে মসজিদের ইমাম, কালিয়াচক,মালদা,পশ্চিমবঙ্গ।
*জবাব* :
আপনার পাঠানো স্ট্যাটাস পড়লাম,এতে
ছেলেটি শরীয়তের সীমা ছাড়িয়ে কুফ্র ও শিরকের শিকার হয়েছে।
(১) ছেলেটি বলেছে "পীরকে যদি খোদা না ভাবতে পারো তাহলে পীরের দরবারে গিয়ে কোন লাভ নেই"
আমি বলি,যদি পীরকে খোদা ভেবে নাও তবে পীরের দরবারে গিয়ে কোন লাভ নেই।
এবার বিধান জানুন :-খোদা শব্দটি (জাত-এ ওয়াজেবুল অজুদ)এমন সত্তা যার অস্তিত্ব ওয়াজিব অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার জন্য বলা হয়।যার প্রয়োগ কোন পীরের জন্য কোন মতেই জায়েজ নয়।যেমন তাজুসশারিয়া ইমাম আখতার রেজা খান কাদরী আজহারি,ফাতাওয়া হিন্দিয়ার উল্লেখ দিয়ে বলেন।"من خدایم"کہنا کفر ہے اگرچہ دل لگی کے طور پر ہی کیوں نہ کہے کہنے والا
کافر ہے
الفاظ فتاوی ہندیہ یہ" لو قال من خدايم على وجه المزاح يعني خذا يم فقد كفر كذا في التتار خانية
ফাতাওয়া তাজুশ শারিয়া, কিতাবুল আকায়েদ,প্রথম খন্ড,পৃষ্ঠা নম্বর ১৯৬
ফাতাওয়া হিন্দিয়া,দ্বিতীয় খন্ড বাবু আহকামিল মুরতাদীন,পৃষ্ঠা নম্বর ২৭৪।
উল্লেখিত ফাতাওয়া গ্রন্থ দ্বারা সুস্পষ্ট হলো যে পীরকে খোদা বলা কুফর।
(২) "আল্লাহ তায়ালা কাবাতে থাকেন"এমন আক্বীদা ভ্রান্ত,কাবা তো আল্লাহর সৃষ্টি,কাবা যখন ছিল না তখন আল্লাহ কোথায় ছিলেন? আল্লাহর জন্য স্থান জায়গা সাব্যস্ত করা কুফর।আল্লাহতালা জায়গা থেকে পবিত্র যখন কোন জায়গা ছিল না তখনও আল্লাহ ছিলেন।
এটাই মৌলিক আকীদা।এ আকীদা বিশ্বাস না করলে কোন ব্যক্তিত মুসলমান হতে পারে না।তিনি স্থান কাল ও পাত্র থেকে পবিত্র। তার ইলম ও ক্ষমতা সর্বত্র রয়েছে।
لا يجري عليه زمان ولا يحويه مكان
আল্লাহর প্রতি জামানা চলমান হয়না এবং তিনি জায়গাতে সিমীতও নন।
لا يتمكن في مكان
ইমাম আবু হানিফা রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহ কোথায়? তিনি বললেন :
كان الله تعالى ولا مكان، كان قبل أن يخلق الخلق، كان ولم يكن أين ولا خلق ولا شىء، وهو خالق كل شىء
যখন কোনো স্থানই ছিল না, তখনো আল্লাহ ছিলেন। সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে তিনি ছিলেন।তিনি তখনো ছিলেন,যখন ‘কোথায়’ বলার মতো জায়গা ছিল না, কোনো সৃষ্টি ছিল না এবং কোনো বস্তুই ছিল না। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা।আল-ফিকহুল আউসাত : ৫৭)
ইমাম গাজালি বলেন :
তুমি জাহাম ইবনু সাফওয়ানের আকিদাগত ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থেকো। কিছু লোকের ভ্রান্ত বিশ্বাস হলো,আল্লাহ তাআলা সব জায়গায় রয়েছেন।যারা আল্লাহ তাআলাকে কোনো জায়গা অথবা দিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে,তাদের পদস্খলন হয়েছে। তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।তারা তাদের সমস্ত চিন্তাভাবনাকে জীব-জন্তুর ইন্দ্রীয় ক্ষমতার মধ্যেই কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে।তাদের চিন্তাশক্তি দেহ ও দেহ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গণদি থেকেও মুক্ত হয়নি।(আল-আরবাইন ফি উসুলিদ দীন)
ইমাম আবুল ইয়াসার বাজদাবি লেখেন :
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা-বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলা স্থান থেকে মুক্ত।তিনি আরশে বা অন্য কোনো স্থানে নন।(উসুলুদ দীন)
আল্লামা ইবনু নুজাইম বলেন :
‘আল্লাহর জন্য স্থান সাব্যস্তের কারণে কাফির হয়ে যাবে।(আল-বাহরুর রায়িক : ৫/১২৯)
(৩) পীরের বাণী কখনোই কোরআন হতে পারে না। পবিত্র কোরআন মহাগ্রন্থ এটি আল্লাহতায়ালার শেষ আসমানী কিতাব, যা তার শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা ত্বহা ,আয়াত ২) সম্পূর্ণ কোরআন কদরের রাতে পৃথিবীর আকাশে নাযিল হয়।(তাফসীর খাযিন)তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সময়কালের পরিস্থিতি ও ঘটনা অনুসারে ধীরে ধীরে সেখান থেকে অবতরণ করতে থাকেন প্রায় ২৩ বছরে।তার একটি শব্দের মত একটি আয়াত সমস্ত জিন ইনসান একসাথে মিলে তৈরি করতে পারবেনা।তারা এতে কোন পরিবর্তন করতে পারেনা। যে ব্যাক্তি কুরআনের কোন প্রকার কমানো বাড়ানোতে বিশ্বাস করে সে কাফির।
পীরের বাণীকে কোরআন মান্য করা,কোরআনের মধ্যে পরিবর্তন,এতে বান্দা কাফের হয়ে যাবে।
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ( بقرة23)
অনুবাদ:এবং যদি তোমাদের কোন সন্দেহ হয় তাতে,যা আমি স্বীয় এ খাস বান্দার উপর নাজিল করেছি,তবে সেটার মত একটা সূরা নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের সকল সহায়তাকারীকে আহ্ববান কর,যদি তোমরা সত্যবাদী হও
(সূরা বাকারা আয়াত নম্বর ২৩)
(৪) কোন পীরকে সেজদা করা যদি ইবাদতের উদ্দেশ্যে হয় তবে কুফর ও শির্ক।এমন সিজদা কারী ইসলাম থেকে বহির্ভূত। আর যদি সম্মানের সেজদা হয় তবুও কঠিন হারাম, মহাপাপ।
হাদিস:
আনসারদের মধ্যে একজন ব্যক্তির উট হুজুরকে সেজদা করল।সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ আমরা বুদ্ধিমান,আমরা হুজুরকে সিজদা করার বেশি হকদার।তিনি বললেনঃ কোন পুরুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা বৈধ নয়,অন্যথায় আমি একজন নারীকে পুরুষকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম।(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড 4, পৃ. 317, হাদিস)
ফাতাওয়া রেজবিয়াতে আছে:
"غیرِ خدا کو سجدۂ عبادت شِرک ہے سجدۂ تعظیمی شِرک نہیں مگر حرام ہے گناہِ کبیرہ ہے مُتَواتِر حدیثیں اور مُتَواتِر نُصوصِ فقہیہ سے اس کی حُرمت ثابت ہے۔ ہم نے اپنے فتاویٰ میں اس کی تَحرِیم (حرام ہونے) پر چالیس حدیثیں روایت کیں اور نُصوصِ فقہیہ کی گنتی نہیں، فتاویٰ عزیزیہ میں ہے کہ اس کی حُرمت پر اِجماعِ اُمّت ہے۔(فتاویٰ رضویہ،ج 22،ص565)
আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কারো জন্য এবাদতের সেজদা শির্ক। সম্মানের সেজদা শিরক নয় কিন্তু হারাম ও বড় গুনাহ।মতাওয়াতির হাদিস এবং বহু ফিক্বহী স্পষ্ট দলিল দ্বারা এই সেজদা হারাম হওয়া প্রমাণিত।আলা হযরত বলেন,আমি নিজের ফাতাওয়ায় ৪০ খানা হাদিস এবং অগণিত ফিক্বহী স্পষ্ট দলিল উল্লেখ করেছি এ বিষয়ে।ফাতাওয়া আজিজিয়া তে আছে, সম্মানের সেজদা হারাম হওয়ার প্রতি উম্মতের ইজমা হয়েগিয়েছে।
হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নাঈমী বলেন:
"غیرخدا کو سجدہ کرنا شرک ہے اور سجدہ تعظیم حرام ہے "
অর্থাৎ: খোদা ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করা শিরক এবং সম্মানের সেজদা হারাম।
(তাফসীরে নাঈমির তৃতীয় খন্ড)
মুফতি আজমল কাদেরী রেজবী বলেন:
"ہماری شریعت میں یہ سجدہ تعظیمی حرام ہے"
অর্থাৎ:আমাদের শরীয়তে সম্মানের সেজদা হারাম।
(ফাতাওয়া আজমালিয়া চতুর্থ খন্ড)
ছেলেটির প্রতি এবং যারা যারা এই কুফরী আকিদায় বিশ্বাসী তাদের সবাইকে তওবা করে পুনরায় ইসলাম ধর্ম কবুল করতে হবে।واللہ تعالی اعلم
*ইতি*
মুফতী মোহাম্মদ আখতার নাঈমী
🌎রেজবী দারুল ইফতা, দারুল উলুম আশরাফুল আউলিয়া,উত্তর লক্ষীপুর, মোথাবাড়ি,মালদা,পশ্চিমবঙ্গ।🌎
Comments -