মুরীদ হওয়া কতটা জরুরী ? মুরিদ না হলে কি আপনি গুনাহগার হবেন,
*মুরীদ হওয়া কতটা জরুরী❓*
*লেখক: বহু কিতাবের লেখক ও গবেষক খলিফায়ে হুযূর তাজুশ শরীয়াহ হযরত আল্লামা মাওলানা তাতহীর আহমদ রেজবী বেরেলবী*
*প্রাক্তন শিক্ষক: জামেয়া নূরীয়া বাক্বরগঞ্জ, বেরেলী শরীফ*
আজকাল যে বায়আত প্রচলিত রয়েছে, তাকে বায়আতে এরাদাত বলা হয়। যা ফরযও নয়, ওয়াজিবও নয়, আর না এমন কোন শরয়ী হুকুম, যা না করলে গুনাহ হবে অথবা আখেরাতে জবাবদিহি করতে হবে।
হ্যাঁ, যদি কোন মিলিত সিলসিলা, ৪টি শর্তযুক্ত পীর ও মুর্শিদ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর হাতে হাত দিয়ে তাঁর মুরীদ হওয়া নিশ্চিতরূপে একটি পছন্দনীয় কর্ম এবং বরকতের কারণ। তাতে অসংখ্য দ্বীনী এবং পার্থিব উপকার বিদ্যমান।
কিন্তু এর পরেও যদি কোন ব্যক্তি আক্বাইদ সঠিক রাখে, বুযুরুগানে দ্বীন ও ওলামায়ে কেরামের সাথে ভালোবাসা রাখে কিন্তু বিশেষ কোন পীরের মুরীদ না হয়, তাহলে তার জন্য এই আক্বীদা রাখা, ঈমানের বিশুদ্ধতা, আউলিয়ায়ে কেরাম এবং সম্মানিত ওলামায়ে কেরামের সাথে ভালোবাসা রাখাই যথেষ্ট। বিশেষ কোন পীরের মুরীদ না হওয়ার কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে সে কোন মতেই অপরাধী অথবা গুনাহগার হবে না। কিন্তু আজকাল গ্ৰামগঞ্জে কিছু বেআমল জাহিল পীর এই গুজব ছড়াচ্ছে যে, "যে মুরীদ হবে না, সে জান্নাত পাবে না।" কতিপয় জাহিল পেশাদার বক্তা যারা বক্তব্য তো দিতে পারে, কিন্তু শরীয়তের বিধান সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয়, তারা জালসার মধ্যে জাহিল পীরদের সন্তুষ্ট করার জন্য এ কথা পর্যন্ত বলে দেয় যে, যার কোনো পীর নেই, তার পীর শয়তান। আর (কিছু) জাহিল বক্তা এটাকে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ফরমান বলে ঘোষণা করে এবং এ থেকে প্রচলিত পীর-মুরীদী বোঝায়। প্রথম কথা, এটা কোনো হাদীস নয়। হ্যাঁ, কিছু বুযুর্গ ব্যক্তি হতে এটা বর্ণিত আছে যে, যার কোনো পীর নেই, তার পীর শয়তান। তো এ পীর থেকে মুর্শিদ -ই আ'ম(¹) -কে বোঝানো হয়েছে, মুর্শিদ-ই খাস(²) -কে নয়। আর مرشد عام বা সাধারণ মুর্শিদ হল আল্লাহর কালাম (ক্বোরআন শরীফ), শরীয়ত-তরীক্বতের ইমামগণ, যাহির ও বাতিন ওলামায়ে কেরামের বাণী।
এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের পথপ্রদর্শক হল ওলামায়ে কেরামের বাণী, আর ওলামায়ে কেরামের পথপ্রদর্শক হল ইমামগণের বাণী, ইমামগণের পথপ্রদর্শক হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিচালক হল স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর বাণী (ক্বোরআন শরীফ)।
______________________________
টীকা: ¹ *মুর্শিদ -ই আ'ম -এর সংজ্ঞা:* মুর্শিদ -ই আম হল আল্লাহ -রাসূলের বাণী, শরীয়ত -ত্বরিকতের ইমামদের বাণী, হক্বপন্থী দ্বীনদার আলিমগণের বাণী।
এ ধারাবাহিকতায় সাধারণ লোকের পথ প্রদর্শন বা পীর আলিমগণের বাণী, আলিমগণের রাহনুমা (পথপ্রদর্শক) ইমামদের বাণী, ইমামদের মুর্শিদ রাসূলের বাণী, আর রাসূলের মুর্শিদ স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর বাণী।
অতএব বাহ্যিক সফলতা বা অভ্যন্তরীন সফলতা অর্জনের জন্য মুর্শিদ -ই আমের অনুকরণ ছাড়া উপায় নেই। যে কেউ উহা হতে দূরে সরে গেল নিঃসন্দেহে কাফির , পথভ্রষ্ট আর তার সব ইবাদত বরবাদ ও ধ্বংস হয়ে যাবে।
² *মুর্শিদ -ই খাস -এর সংজ্ঞা:* মুর্শিদ -ই খাস কোন বান্দা যে সুন্নি, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের অধিকারী, বায়আতের সকল শর্তের সমন্বয়কারী আলীমের হাতে হাত রেখে বায়আত গ্রহণ করেন তাকে মুর্শিদ -ই খাস বলা হয়। যাকে শরীয়তের পরিভাষায় পীর বা শায়খ বলে। (ফাতাওয়া -ই আফ্রিকা (বাংলা), লেখক হুযূর আলা হযরত পৃষ্ঠা:129) টীকা সমাপ্ত।
_______________________________
আমার সর্দার ও আমার দলীল আ'লা হযরত আলাইহির রহমা ওয়ার রিযওয়ান বলেন: "যে সুন্নী সহীহুল আক্বীদাহ সৎ পথের ইমামগণকে মানে, ইমামগণের তাক্বলীদ বা অনুসরণ করাকে জরুরী মনে করে, আউলিয়ায়ে কেরামের খাঁটি বিশ্বাসী বা অনুসারী, সমস্ত আক্বায়েদ তথা ইসলামের মৌলিক বিষয় সমূহের মধ্যে সঠিক পথে অটল থাকে, তাহলে সে কোন মতেই বিনা পীরে রইল না। সে পবিত্র চারটি পথপ্রদর্শক অর্থাৎ খোদা ও রাসূলের কালাম, যাহির ও বাতিন ওলামায়ে কেরাম হল তার পীর, যদিওবা বাহ্যিকরূপে বিশেষ কোন খোদার বান্দা (পীর) -এর মোবারক হাতে বায়আত -এর সম্মানে সম্মানিত না হয়ে থাকে।" (নাক্বাউস সালাফাতি ফি আহকামিল বায়আতে ওয়াল খিলাফাহ, পৃষ্ঠা:40/ ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড: 21, পৃষ্ঠা: 481,482, প্রকাশিত, জামেয়া নেযামিয়া লাহোর)
হুযূর আ'লা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আর এক জায়গায় বলেন: "নাজাত (জাহান্নাম থেকে নাজাত ও মুক্তি) পাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুর্শিদ মনে করাই যথেষ্ট।" (ফাতাওয়া আফরীক্বা, পৃষ্ঠা: 136)
সারকথা এই যে, যদি শর্তযুক্ত, শরীয়তের উপর আমলকারী পীর পাওয়া যায়, তাহলে মুরীদ হয়ে যাবে। কারণ, এটা বরকত ও মর্যাদা বৃদ্ধি হওয়ার মাধ্যম। আর যদি এমন জ্ঞানী ও উপযুক্ত পীর না পাওয়া যায় , তাহলে অযথা গ্ৰামে গ্ৰামে ভ্রমণকারী জাহিল ও বেআমল, ওলামায়ে কেরামের বেয়াদবকারী নামধারী পীরের হাতে কোনভাবেই হাত দিবে না। এমন লোকের কাছে মুরীদ হওয়া হল ইমানের জন্য মৃত্যু।
*(গালাত ফাহমীয়াঁ অওর উনকী ইসলাহ, পৃষ্ঠা: 87, 88 প্রকাশিত, ইসলামী কুতুব খানা, বেরেলী শরীফ)*
🟥🟥🟥
*বিশেষ দ্রষ্টব্য:*
*উক্ত পোষ্টে "যার কোন পীর নেই, তার পীর শয়তান" উক্তিটির সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তৎসহ ভন্ড পীরের খন্ডন করা হয়েছে, সকল শর্তের সমন্বয়কারী কোন কামিল পীরের নয়।*
Comments -