শুধু মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে কুরবানী হবে কিনা ?
প্রশ্ন👉 শুধু মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী করার বিধান কী?
উত্তর👉 ঈদুল আযহার দিনগুলোতে ইবাদতের নিয়তে পশু জবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়।
কুরবানীর সংজ্ঞা দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা গেল যে, কুরবানী ইবাদতের উদ্দেশ্যে তথা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করার জন্য করতে হবে। মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। পক্ষান্তরে বড় পশু যেমন- গরু, মহিষ ও উটের সাত জন অংশীদারের মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি কেবল মাংস খাবার উদ্দেশ্যে কুরবানী করে, তাহলে তাদের কারোর কুরবানী হবে না।
হেদায়া নামক গ্রন্থে রয়েছে -
و اذا اشتری سبعة بقرۃ لیضحوا بھا فمات احدھم قبل النحر و قالت الورثة اذبحوھا عنه و عنکم اجزاھم و ان کان شریک الستة نصرانیا او رجلا یرید اللحم لم یجز عن واحد منھم و وجھه ان البقرۃ تجوز عن سبعة ولکن من شرطه ان یکون قصد الکل القربة ۔
অনুবাদ:- যদি সাত ব্যক্তি কুরবানী করার নিয়তে একটি গরু ক্রয় করে অতঃপর তাদের মধ্যে একজন পশু জবাই করার পূর্বে মারা যায় এবং তার উত্তরাধিকারিগণ বলে যে, তোমরা তার (মৃত ব্যক্তির) এবং তোমাদের পক্ষ থেকে কুরবানী কর, তাহলে তাদের জন্য কুরবানী শুদ্ধ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি ছয় জনের অংশীদার ব্যক্তিটি খ্রিস্টান হয় কিংবা এমন ব্যক্তি হয় যে কেবল মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে (কুরবানী) করেছে, তাহলে তাদের কারোর কুরবানী সহীহ হবে না। এর কারণ হল এই যে, গুরু কুরবানী করা যায় সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে, তবে এর শর্ত হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির নিয়ত কেবল এবাদত তথা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হতে হবে। (হেদায়া আখেরাঈন, পৃষ্ঠা: 433, প্রকাশিত, মজলিসে বারকাত আল- জামিয়াতুল আশরাফিয়া মুবারকপুর)
বাহারে শরীয়ত -এর মধ্যে রয়েছে-
"গরুর অংশীদারদের মধ্যে একজন কাফির রয়েছে অথবা তাতে কোন ব্যক্তি এমন রয়েছে যার উদ্দেশ্য কুরবানী করা নয়; বরং মাংস অর্জন করা, তাহলে কারোর কুরবানী হল না।" (বাহারে শরীয়ত, হিসসা: 15, পৃষ্ঠা 343, মাসআলা: 14, দা'ওয়াতে ইসলামী)
কাউকে বলতে শোনা যায় যে, আমরা বাড়িতে (বাপ-বেটা অথবা বা সমস্ত ভাই মিলে) চার পাঁচ জন আছি, আর শরীয়তের দৃষ্টিতে আমরা সকলেই ধনী; (অর্থাৎ বর্তমান সময়ে প্রায় সকলেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া চল্লিশ হাজার (৪০০০০) টাকা অথবা তার সমতুল্য সম্পদের মালিক) অর্থাৎ আমাদের উপর কুরবানী দেওয়া অনিবার্য, কিন্তু এত মাংস কে খাবে! যার কারণে শুধু মাত্র দু- একজনের নামে কুরবানী করি, সবার নামে করি না (আসতাগফিরুল্লাহ)। এ থেকে বুঝা গেল যে, উল্লেখিত ব্যক্তি শুধু মাত্র মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী করছে, শরীয়তের বিধানের প্রতি আমল করে আল্লাহ তা'আলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে না। এরকম ব্যক্তির নিজের কুরবানী তো হবেই না; বরং সে যে পশুতে অংশীদার হবে, তাদের মধ্যে কারোর কুরবানী হবে না। যা আপনি উপরে পরিস্কার ভাবে দলীল সহকারে পাঠ করলেন।
প্রশ্ন:- একজনের ভূলের কারণে বাকি অংশীদারের কুরবানী কেন হবে না? তাদের তো কোন ভুল নেই।
উত্তর:- তাদের ভুল হল যে, তারা এরকম ব্যক্তিকে নিজেদের সাথে কেন অংশীদার বানালো?
মূল কারণ হল যে, বড় পশুতে সর্বাধিক সাত ভাগ হতে পারে, তার উর্ধ্বে না, সাথে সাথে কারো অংশ যেন এক সপ্তমাংশের কম না হয়; নতুবা কারোর কুরবানী হবে না। আর প্রত্যেক অংশে ক্বুরবাত তথা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত থাকা আবশ্যিক। এখানে যেহেতু একাংশে কুরবানির নিয়ত বিদ্যমান নেই; আর পশু জবাই করাটা একক বা অভিভাজ্য একটি কাজ তাই পুরো কুরবানী ইবাদতের জন্য সাব্যস্ত হবে না। যার কারণে কারোর কুরবানী হবে না।
যেমন- এক বালতি পানি রাখা আছে। কেউ তাতে এক ফোঁটা মদ ঢেলে দিল। যার কারণে সমস্ত পানি নাপাক হয়ে গেল। এখন সেই পানি পানও করা যাবে না, অযু-গোসলও করা যাবে না। এবার বলুন, এতে পানির কি ভুল ছিল? পানির মালিকের কি ভুল ছিল? ভুল তো তার যে পানিতে মদ ঢেলেছে। কিন্তু মদের ফোঁটা যেখানে পৌঁছাবে সেখানে সে নিজের প্রভাব ফেলবে। অনুরূপভাবে যে পশুতে খারাপ নিয়ত থাকবে সেখানে খারাপ প্রভাবও ঘটবে; যদিওবা বাকি অংশীদারদের ভুল না থাকে।
সুতরাং আল্লাহ তা'আলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী করুন, মাংস খাওয়ার জন্য নয়। মাংস তো আপনারই, আপনিই খাবেন, তাহলে নিয়ত কেন খারাপ করবেন? নিয়ত খারাপ করলে কুরবানী হবে না কেবল মাংস খাওয়া হবে। আর আল্লাহ তা'আলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে কুরবানীও হবে, মাংস খাওয়াও হবে।
হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে সঠিক নিয়তে কুরবানী করার তৌফিক প্রদান করুন। আমীন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:- এ মাসআলা টি বেশি বেশি করে শেয়ার করুন, যেন সকলেই এই মারাত্মক ভুল থেকে বাঁচতে পারে।
ইতি
✍️মুফতী গুলজার আলী মিসবাহী
🌍হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর।🌎
🪐শিক্ষক: মাদ্রাসা গৌসিয়া ফাসীহিয়া মাদীনাতুল উলূম (সোসাইটি) খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।🪐
🧾04/12/1443 হিজরী
🌼04/07/2022 খ্রিষ্টাব্দ
🌼রোজ- সোমবার
Comments -