রমযান মাসে ওমরাহ পালনের ফযীলত
রমযান মাসে ওমরাহ পালনের ফযীলত:
মুফতী আলামীন মিসবাহী, পাকুড়, ঝাড়খন্ড
সাধারণত এবাদত দুই প্রকার, একটি শারীরিক যেমন নামাজ আদায় করা, আর একটি আর্থিক যেমন আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা। ওমরাহ এমন একটি ইবাদত যা আমাদের জন্য আর্থিক ও শারীরিক উভয় ইবাদাতে সমৃদ্ধ। ওমরাহ পালনের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, হজ্জের দিনগুলোতে অর্থাৎ ৯ যুল-হিজ্জা থেকে ১৩ই যুল- হিজ্জা পর্যন্ত ওমরাহ করা মাকরূহ। এই পাঁচটি দিন ব্যতীত বছরের যে কোন দিন, যতবার ইচ্ছা ওমরাহ করা যেতে পারে। তবে রমজান মাসে ওমরাহ পালনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের হানাফী মতে জীবনে একবার ওমরাহ পালন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। (রদ্দুল মুহতার, হজের অধ্যায়, আহকামে ওমরাহ পরিচ্ছেদ, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা নম্বর: 475 )
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজ ও ওমরাহ:
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি হজ পালন করেছেন; দুটি হিজরতের পূর্বে আর একটি হিজরতের পরে। যথাঃ হাদিস শরীফ:
عن جابر بن عبد الله ان النبي صلى الله عليه وسلم حج ثلاث حجج: حجتين قبل ان يهاجر وحجة بعد ما هاجر ومعها عمرة
(তিরমিযী শরীফ, হজ্জের বয়ান,হাদিস নম্বর ৮১৫)
অর্থাৎ :- হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি হজ পালন করেছেন: দুটি হিজরতের পূর্বে আর একটি হিজরতের পরে।
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি ওমরাহ পালন করেছেন:
যথাঃ হাদীস শরীফ:
عن ابن عباس رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم اعتمر اربع عمر: عمرة الحديبيةوعمرة الثانية من قابل وعمرة القضاء في ذي القعدة وعمرة الثالثة من الجعرانة والرابعة التي مع حجته
(তিরমিযী শরীফ,হজের বয়ান, হাদীস নম্বর ৮১৬)
বঙ্গানুবাদ: হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি ওমরাহ করেছেন: এক হুদাইবিয়ার ওমরাহ দ্বিতীয় পরের বৎসর যিল-কা'দাহ মাসে কাযা ওমরাহ তৃতীয় ওমরাহ জি'ইর্রানা থেকে চতুর্থ আমরা যা তিনি হজ্জের সাথে করেছিলেন।
মহানবী স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বারংবার ওমরাহ পালনের জন্য উৎসাহিত করেছেন।
যথাঃ হাদীস শরীফ:
عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العمرة الى العمرة كفارة لما بينهما والحج المبرور ليس له جزاء الا الجنة
(বুখারী শরীফ, ওমরাহের অধ্যায়, ওমরাহের ফযীলত এর পরিচ্ছেদ, হাদীস নম্বর: ১৬৮৩)
হযরত আবু হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী পাক স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক ওমরা থেকে অপর ওমরা তার মধ্যকার গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। আর মক্ববূল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়( অর্থাৎ মক্ববূল হজ্জকারী হবে জান্নাতী)
হাদিস শরীফ:
عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الحجاج والعمار وفد الله ان دعوه اجابهم وان استغفروه غفر لهم
(সুনানে ইবনে মাজাহ, আল-মানাসিক নামক অধ্যায়, হজ্জের দো'য়ার ফযীলতের পরিচ্ছেদ, হাদীস নম্বর: ২৮৯২)
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারী আল্লাহর মেহমান, তারা তাঁর কাছে দোয়া চাইলে তিনি কবুল করেন আর মাগফিরাত কামনা করলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।
রমজান মাসে ওমরা পালনের ফযীলত:
হাদীস পাক:
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لامرأة من الانصار ما منعك ان تحجي معنا؟ قالت: لم يكن لنا الا ناضحان فحج ابو ولدها وابنها على ناضح وترك لنا ناضحا ننضح عليه، قال: فاذا جاء رمضان فاعتمري, فان عمرة فيه تعدل حجة-(ولفظ مسلم)
(বুখারী শরীফ, হাদিস নম্বর ১৭৮২-মুসলিম শরীফ হজের অধ্যায় রমজান মাসে ওমরাহ পালনের ফজিলতের পরিচ্ছেদ, হাদিস নম্বর ১২৫৬)
বঙ্গানুবাদ: রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সাথে হজ করতে তোমার জন্য বাধা কী? সে উত্তরে বললেন, আমাদের কাছে কেবলমাত্র দুটি উট আছে, একটিতে আমার ছেলে ও তার পিতা হজ্জ করতে গিয়েছেন আর অন্যটি আমাদের জন্য রেখেছেন যাতে আমরা জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারি। নবী পাক স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটবে তখন ওমরাহ করে নেবে কারণ রমজান মাসের ওমরাহ হজ্জের সমতুল্য।
হাদীস পাক:
নবী পাক স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
فعمرة في رمضان تقضي حجة او حجة معي (মুসলিম শরীফ, হজের অধ্যায়, রমজান মাসে ওমরাহ পালনের ফযীলতের পরিচ্ছেদ)
বঙ্গানুবাদ: রমজান মাসে ওমরাহ হজের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য। হাদীস পাক: নবী পাক স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ما يعدل حجة معك؟ কোন এমন কাজ যা আপনার সাথে হজ করার সমতুল্য হবে? নবী পাক উত্তরে বললেন انها تعدل حجة معي يعني عمرة في رمضان- রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।
(আবু দাউদ শরীফ, আল-মানাসিক নামক অধ্যায়, ওমরাহের পরিচ্ছেদ, হাদিস নম্বর ১৯৯০)
সংক্ষিপ্ত আকারে ওমরাহের কার্যাবলী: ১/ হেল্ অথবা মীক্বাত থেকে ওমরাহের ইহরাম বাঁধা। ২/ কাবা শরীফের তাওয়াফ করা। ৩/ সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সায়ী করা অর্থাৎ দৌড়ানো। ৪/ এবং মাথা নেড়া করা অর্থাৎ কেশ কাটিয়ে দেওয়া। আল্লাহপাক যেন আমাদের সকলকেই হজ ও ওমরাহ করার তৌফিক দান করেন, এবং দয়ার নবীর মদিনা দেখার সুযোগ দান করেন! آمين بجاه سيدي المرسلي
Comments -