KeyOfIslam
Welcome To KeyOfIslam.com. KeyOfIslam is the platform to spread love and brotherhood among all people through the light of Prophet Mohammad(peace be upon him), the Final Messanger of Allah. Here you will get informations with precision.
Individual Articles
ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগ আমাদের কি শিক্ষা দেয় ? ( কারবালার প্রকৃত ইতিহাস )
টপিকঃ ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগ আমাদের কি শিক্ষা দেয় ? 👉কারবালা নিজেই একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি দিনই আশুরা এবং প্রতিটি ভূমিই কারবালা। আশুরার গুরুত্ব স্থান ও সময়ের গণ্ডির উর্ধ্বে। বিশ্বের যে স্থানেই আমরা বসবাস করি না কেন এবং যে সময়েই আমরা অবস্থান করি না কেন কারবালার ঘটনা সমানভাবে মূল্যবোধের ধারক এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, হক ও বাতিল নির্নয়ের প্রতীক।এজন্যই মুসলিম মনিষীগণ তো বটেই, চার্লস ডিকেন্স, টমাস কারলাইল, অ্যাডওয়ার্ড ব্রাউন, এডওয়ার্ড গিবন, ওয়াশিংটন আরভিং, ফ্রেডরিক জেমস, টমাস মাসারিক, নিকলসন সহ অসংখ্য অমুসলিম মনিষী সাইয়িদূনা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সুমহান আত্মত্যাগ এর দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলা ও গান্ধীজী তো ইমামের বেনজির মহাবিপ্লবের দ্বরা উদুদ্ধ হয়েই নিজেদের আন্দোলনে্র উপর ধৈর্য ও সংযমের সংগে অটল থেকেছিলেন। কারবালায় সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞটি সংঘটিত হয় নবীকূলসম্রাট সাইয়িদূনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পর্দাগ্রহনের উনপঞ্চাশ বছর পরেই। ইংরেজী ৬৮০ খৃস্টাব্দের ১০ অক্টোবার। আরবী ৬১ হিজরি সনের ১০ মুহাররাম। কারবালা ঘটনার একপিঠে ছিল ইয়াযিদ, উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ এবং শিমারদের ন্যায় নরপিশাচ সন্ত্রাসবাদীরা। আর অপর পিঠে ছিলেন শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন, তাঁর বোন হযরত যাইনাব এবং তাঁর ভাই হযরত আব্বাসদের মত বিশ্বমানবতার গৌরব বিশ্ববিশ্রুত ব্যক্তিত্বরা। একদিকে ছিল ৬ হাজার সৈন্য। অপরদিকে মাত্র ১১০ জন নির্ভিক মানবাতাবাদী। এর মধ্যে অনেকেই মহিলা ও শিশু। এই ১১০ জনের মধ্যে ৭২ জন শহীদ হয়েছিলেন। তাঁদের পবিত্র শরীর থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল ইয়াজিদ বাহিনী। এই সন্ত্রাসবাদী বর্বররা শহীদদের শরীরের উপর ঘোড়া চালিয়ে ঘোড়ার খুরে শরীর গুলিকে পদদলিত করেছিল। আমরা যদি শহীদ সম্রাট সাইয়িদুনা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর আন্দোলনের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখব যে তিনি অযোগ্য সমাজপতি বা সমাজে নেতৃত্বপ্রদানকারী বা শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। শাসকগোষ্ঠীর ভ্রুকুটিকে তিনি বিন্দুমাত্র পরোয়া করেন নি । আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, ইয়াজিদ কেবল একটি বংশ, গোত্র বা সমাজের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি সমাজে ইয়াজিদ রয়েছে। ফলে ইয়াজিদের পরিচয় আমাদের জানতে হবে । ইমামের বিপ্লবী চেতনার দর্পনে প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে যে, আমরা নিজেরা ইয়াজিদ নই তো ? সম্পদ-ক্ষমতা-নেতৃত্বের প্রতি লোভ-লালসা থেকে আমরা মুক্ত তো? আমাদের ইমানকে অর্থ বা নারীর বিনিময়ে কিনে নেওয়া যাবে না তো ? অন্যকে শোষণ করা, প্রতারণা করা বা অত্যাচার করার মহাপাপ থেকে আমরা দূরে আছি তো? আমানতের খেয়ানত বা পরের ধন আত্মসাৎ করার পৈশাচিকতা থেকে আমরা নিরাপদ তো? যদি উত্তর না হয়, তাহলে এখনই নিজেকে ইয়াজিদী আদর্শকে ত্যাগ করুন এবং যেজন্য ইমাম নিজ পরিবার সহ জীবনদান করেছেন সেই সত্য, ন্যায় ও হককে স্বীয় জীবনে ও স্বীয় পরিবারে প্রতিষ্ঠা করুন। কেবল খিচুড়ি বা তাবাররুক খেয়ে নিজেকে হুসাইনি প্রমান করা যেতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন আত্মত্যাগ। যখন ইমাম হুসাইন বিপ্লব শুরু করেছিলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি মুসলমানদের শাসক হিসেবে নিজেকে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করছিল যে কোনক্রমেই নবীকূলসম্রাটের উত্তরাধিকারি হওয়ার যোগ্য ছিল না। নবীকূলসম্রাটের নাতি, উত্তরাধিকারি এবং “ জান্নাতি যুবকদের সুলতান” হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল, অযোগ্য ব্যক্তিকে মুসলমানদের শাসক হওয়া থেকে নিবৃত্ত করা। এবং এ বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর কাছে তুলে ধরা যে, কোন অযোগ্য, অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী ব্যক্তি কখনই মুসলমানদের নেতা হতে পারে না। 'আমার মতো লোক’ কখনই ‘ইয়াজিদের মতো লোকের’ হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারে না, এই অভিমত পরিবেশনের মাধ্যমে তিনি মুসলিম উম্মাহর নিকট তুলে ধরেন যে, কোন অযোগ্য, অত্যাচারী ও পার্থিব লোভ-লালসায় কলুষিত ব্যক্তি মুসলমানদের নেতা হতে পারে না। ইমাম হুসাইন এর আত্মত্যাগের অমরতা এখানেই যে, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে বর্বর শাসকদের বিরুদ্ধে যেসব বিপ্লব সংঘটিতে হয়েছে তার পেছনে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মহাবিপ্লবের চেতনা কাজ করেছে। তিনি যদি সেদিন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াতেন তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত ইয়াজিদদের শাসন বৈধ বলে বিবেচিত হতো। ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শিক্ষাদান করেছেন যে, অত্যাচারীরা যতই শক্তিশালীই হোক না আল্লাহর উপর নির্ভর করে অন্যায়,অবিচার ও বাতিলের বিরুদ্ধে স্বীয় দায়িত্ব পালনে অটল থাকতে হবে। সংখ্যার স্বল্পতার অজুহাত দেখানো চলবে না। সংখ্যা কম বলে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধ প্রতিবাদ না করে হাত গুটিয়ে নেব, ইসলাম এ শিক্ষা দেয় না। ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি তাঁর সঙ্গীদের পরম আনুগত্যও আমাদের জন্য চরম শিক্ষনীয় । সংখ্যায় কেবল ১১০ জন হওয়া সত্ত্বেও ছয় হাজার শত্রুসেনার সুবিশাল বাহিনী দেখে তারা এক পা পিছপা হননি। নিজেদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তারা ইমাম হুসাইনের পাশে থেকেছেন। তারা আমাদের শিখিয়েছেন যে, আমাদের সমাজে যারা যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতা, মৃত্যু পর্যন্ত সকল শক্তি দিয়ে যেন তাদের পাশে থাকি। ইমাম হুসাইন এর মহান সঙ্গীগণ শুধু কারবালায় যুদ্ধই করেননি, তারা যুদ্ধ প্রান্তরে সত্যের অবস্থান তুলে ধরে শত্রুদেরকে তাঁরা সত্যের দিকে আহবান জানিয়েছেন এবং তাদের ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন। ফলে আমাদেরকে চরম সংকটের মধ্যেও দলীল, যুক্তি ও প্রজ্ঞা দিয়ে শক্রর সামনে ইসলামের প্রকৃত ও সঠিক রূপ তুলে ধরতে হবে। এতে যদি একজনও হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় তা মঙ্গলজনক। বর্তমানে মহররম উপলক্ষে সমাজে বহু বাড়াবাড়ি, কুপ্রথা ও কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়েছে। বরং কারবালার শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে আমরা ভূলে গেছি। এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছি। কারবালার প্রকৃত ইতিহাস আমরা সমাজের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। বিশ্বের প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি জাতির মধ্যেই ইয়াজিদের মতো লোকেরা আধিপত্য বিস্তার করার চেস্তা করে। এসব লোকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার চেস্টা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, সেদিন ইমাম হুসাইন কারবালায় পরাজিত হয়েছিলেন । এই ধারণা ভূল। সেদিন ইয়াজিদ বাহ্যিকভাবে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে ধ্বংস হয় এবং ইতিহাসে ঘৃনিত, ধিকৃত ও অভিশপ্ত হিসেবে পরিগণিত হয়। উল্টোদিকে ন্যায় ও সত্যের প্রতীক ইমাম হুসাইন শাহাদাত বরণ করে জান্নাতি যুবকদের সুলতান বলে নন্দিত হন। তিনি স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে মহাবিপ্লব গড়ে তুলে খেলাফত প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করেন। খেলাফতী শাসনব্যবস্থার প্রাণশক্তি ছিল আল্লাহভীতি। এজন্যই, নবীকূলসম্রাট এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে গভীর রাতেও নারীরা অবলীলায় একাকী চলাফেরা করতে পারতেন। নিশীথ রাত্রে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই কাঁধে করে খাবারের বস্তা নিয়ে অভাবীর ঘরে পৌছিয়ে দিতেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ‘মজলিসে শুরা’ বা পরামর্শসভায় নোটিশ দিয়েই প্রশ্ন করা যেত। এমনকি স্বয়ং খলিফাকে প্রতিদিন পাঁচ বার নামাজের জামাতে ও সন্তাহে জুমাবার জনগণের মুখোমুখি হতে হত। তাঁরা দেহরক্ষী ছাড়াই হাটেবাজারে ঘুরে বেড়াতেন। তাঁদের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। রাষ্ট্রে আইনের শাসন ছিল। কেউ আইনের উর্ধ্বে ছিলেন না। অধিকার ও মর্যাদার দিকে পূর্ণ সাম্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু ইয়াজিদের ক্ষমতায় আগমনের সংগে সংগেই পরিবর্তন দেখা দেয়। ইমাম হোসাইন তা উপলব্ধি করে ইসলামী নীতিমালা সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ইসলামবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই কারবালার প্রধান শিক্ষা। ইমাম হোসাইন এই শিক্ষায় মানব জাতিকে দিয়ে গেছেন যে, সত্য-ন্যায়ের জন্যই জীবন, সত্য-ন্যায়ের জন্যই মরণ । একজন মুমিনের নিকট স্বীয় প্রাণের চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদর্শ অধিক গুরুত্বপুর্ন। ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অনেক বেশী। সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, অপশাসন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের এক অনুপম প্রেরণ হলেন ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ । এই আদর্শই হোক আমাদের পথ চলার পাথেয়। ✍️ মুফতী মুহাম্মাদ আবুল কালাম আযাদ, 🌍বাবলা, মথাবাড়ী মালদা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 🌍

Comments -

আরPosted On: 2022-08-08
মাশাআল্লাহ।
Most Read Articles