অনাবৃষ্টি ও দূর্ভিক্ষের কারণ এবং মুসলমানদের করণীয় ( ইস্তিসকা নামাযের বিবরণ)
কোরআন ও হাদীসের আলোকে অনাবৃষ্টি ও দূর্ভিক্ষের কারণ এবং মুসলমানদের করণীয়।
(ইস্তিসকা নামাযের বিবরণ)
*এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত*
১) আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেন,
وما اصابكم من مصيبة فما كسبت ايديكم و يعفو عن كثير.
অর্থাৎ- তোমাদের নিকটে যে বিপদ আসে, সে গুলি তো তোমাদের কৃতকর্মের ফলাফল,আল্লাহ তো অনেক কিছুই ক্ষমা করে দেন।
২) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে আরও বলেন,
لو يوخذ الله الناس بما كسبوا ما ترك على ظهرها من دابة.
অর্থাৎ- আল্লাহ যদি মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য ধরতেন, তাহলে পৃথিবীতে বিচরণকারী কাউকে ছাড়তেন না।
৩) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে আরও বলেন,
استغفروا ربكم (الايه)
অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো,নিশ্চয় তিনি বড় ক্ষমাশীল,তিনি মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষন করবেন এবং তোমাদের সম্পদ ও সন্তান দিয়ে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, এবং তোমাদেরকে জান্নাত দিবেন ও জান্নাতের নহর দিবেন।
*এ প্রসঙ্গে কয়েকটি সহীহ হাদীস*
১) হাযরাত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্নিত একটি হাদীসে আছে,আল্লাহ'র রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যারা ওজনে কম দেয়া,তারা দূর্ভিক্ষ,মরনের কষ্ট ও শাসকের অত্যাচারের শিকার হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২) হাযরাত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে,আল্লাহ'র রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,শুধু বৃষ্টি না হওয়াটাই দূর্ভিক্ষ নয়,বরং বড় দূর্ভিক্ষ হলো এটা যে,বৃষ্টি হয়েও জমিন ফসল না ফলায়। (সহীহ মুসলিম)
৩) হাযরাত আনাস থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, তিনি বলেন যে,হুযূর আলাইহিস সালাম ইস্তিসকার দুওয়াতে যতটা উপরে হাত উঠাতেন,অন্য কোন দুওয়াতে ততোটা হাত উঠাতেন না। হাত এত উঁচু করতেন যে,তাঁর বগল শরীফের শুভ্রতা প্রকাশ পেয়ে যেত।
(সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)
৪) হাযরাত আনাস থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদীসে আছে,তিনি বলেন যে,একদা হুযূর আলাইহিস সালাম বৃষ্টি বর্ষনের জন্য দুওয়া করলেন,তখন তিনি হাত মুবারাক উলটো করে আকাশের দিকে ইশারা করলেন।
অর্থাৎ-হাতের তালু নিচে দিকে,সাধারণ দুওয়াতে যেমন হাত থাকে তার বিপরীত।
(সহীহ মুসলিম)
৫) হাযরাত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে,তিনি বলেন যে, হুযূর আলাইহিস সালাম, একাগ্রতা ও বিনয়ীর সাথে পুরাতন কাপড় পরিধান করে ইস্তিসকার দুওয়াতে যেতেন।
(সুনানে আরবায়া)
*ইস্তিসকা সম্পর্কে কয়েকটি মসলা-মাসায়েল*
১) মূলত দুওয়া করা ও আল্লাহ'র নিকট ক্ষমা চাওয়ার নাম হলো ইস্তিসকা।
২) ইস্তিসকার নামায জামায়াত সহকারে পড়া জায়েয,এই জামায়াত সুন্নাত নহে,চাইলে একা একাও পড়তে পারে,চাইলে জামায়াত সহকারেও পড়তে পারে, দুটোই জায়েয।
৩) ইস্তিসকায় যাওয়ার সময়, একাগ্রতা,বিনয়ী ও নম্রতার সহিত,পুরাতন ও তালিলাগা কাপড় পরিধান করে,খালি মাথায় যাবে,খালি পায়ে গেলে আরও উত্তম।
৪) ইস্তিসকায় যাওয়ার পূর্বে দান খায়রাত করবে,তিন দিন আগে থেকে রোজা রাখবে এবং অন্তর থেকে তাওবা ইসতিগফার করতে থাকবে।
৫) ইস্তিসকার দুওয়া করার সময়,দূর্বল,বুড়া,বুড়ি ও শিশুদের ওসীলা দিয়ে দুওয়া চাইবে এবং সকলেই আমীন বলবে।
৬) ইস্তিসকার দুওয়া করার সময় দুধপানকারী শিশুদেরকে মা থেকে আলাদা করে রাখবে, সম্ভব হলে গৃহপালিত পশুও দুওয়ার মাঠে সাথে নিয়ে যাবে।
৭) ইস্তিসকার দুওয়ার জন্য পর পর তিন দিন জঙ্গলে বা মাঠে যাবে,আর এটাও করা যায় যে, কোন ইমাম সাহেব উঁচু আওয়াজে কেরাত করে দুই রাকায়াত নামায পড়াবে, প্রথম রাকায়াতে সুরা ফাতিহার পর,সুরা সাব্বিহিসমা এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সুরা হাল আতাকা পাঠ করা উত্তম।
নামায শেষ করে,মাটিতে দাঁড়িয়ে খুতবা পড়বে,দুই খুতবার মাঝে বসবে,একটা খুতবা পড়লেও হবে,খুতবার ভিতরে দুওয়া তোসবী ও ইসতিগফার পড়বে,খুতবা পড়ার সময়,গায়ের বা ঘাড়ের চাদর এমন ভাবে রাখবে যেন উপরের কোনা নিচে আর নিচের কোনা উপরে থাকে,খুতবা পড়া শেষ হলে কাবামুখী হয়ে মক্তাদীকে পেছন করে দুওয়া করবে,যে দুওয়া গুলি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,সেই দুওয়া গুলি পড়া উত্তম,দুওয়া করার সময় উল্টো করে হাত উঁচু করে রাখবে। অর্থাৎ- দুই হাতের তালু নিচেমুখী থাকবে।
এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে বাহারে শরীয়াত, নেযামে শারীয়াত ও গুলিস্তানে শারীয়াত ইত্যাদি কিতাবগুলি পড়ার অনুরোধ রইল।
ইতি- ১৫/০৭/২০২২
রোজ- বৃহস্পতিবার
✍️ফাক্বীহে বাঙ্গাল মুফতী মোঃ আলীমুদ্দিন রেজবী মাযহারী জঙ্গীপুরী🌍
Comments -