কুরবানী সংক্রান্ত কিছু খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল (দ্বিতীয় পর্ব) Mufti Alimuddin Mazhari
🌷তোহফায়ে ঈমানী বা মাসায়েলে কুরবানী🌷
🌼 কুরবানী সংক্রান্ত কিছু খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল 🌼
দ্বিতীয় পর্ব
১/ কুরবানী করা ওয়াজিব, ফরজও নয় সুন্নাতও নয় এটাই সঠিক।
তবে হ্যাঁ প্রিয় নবী হুযূর আলাইহিস সালামের উপর কুরবানী করা ফরজ ছিল,
এটা তাঁর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
২/ বিশ্ব নবী হুযূর আলাইহিস সালাম মদীনা শরীফে থাকা কালীন প্রতি বছর নিজে কুরবানী করতেন এবং যে সমস্ত পারক ব্যক্তি কুরবানী করতেন না, তাদের উপর অসন্তুষ্ট হতেন।
৩/ কুরবানী যবেহ করার সময় শুধু "বিসমিল্লাহ" বলা ফরজ, তার সাথে "আল্লাহু আকবার" বলা মুস্তাহাব।
৪/ কুরবানীর পশু নিজে যবেহ করা উত্তম, যদি নিজে না জানে বা না পারে, তাহলে অন্য লোককে দিয়ে যবেহ করাবে, তবে সেখানে নিজে উপস্থিত থাকা উত্তম।
৫/ কুরবানীর পশুকে শুইয়ে দেওয়ার পর তার সামনে ছুরি ইত্যাদিতে শান দেওয়া ঠিক নয়।
৬/ উটের কুরবানী করা সব চাইতে উত্তম, তার পর গরু উত্তম তার পর ছাগল তার পর ভেঁড়া।
৭/ নূর নবী হুযূর আলাইহিস সালাম মক্কা শরীফে থাকা কালীন কোন দিন ঈদুল আযহার কুরবানী করেননি।
৮/ দুম্বা এবং ভেঁড়ার মোটা তাজা ৬ মাসের বাচ্চা যেটা দেখতে যদি ১ বছরের মত মনে হয়, তাহলে তার কুরবানী দেওয়া জায়েয হবে।
৯/ প্রাক ইসলাম যুগে কুরবানীর (পশু উৎসর্গ করা) প্রথা ছিল, কিন্তু কুরবানী করে কুরবানীর মাংস খাওয়া হারাম ছিল।
কুরবানী করার পর যবেহ কৃত পশু কে গায়েবী আগুন এসে পুড়িয়ে দিত।
ঐ যুগে কুরবানী কবুল হওয়ার এটাই লক্ষন ছিল।
১০/ কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশু কে কুরবানী দাতার নেকীর পাল্লায় রেখে দিয়ে তার নেকীর পাল্লা ভারী করে দেওয়া হবে।
১১/ কিয়ামতের দিন সহজে পুলসিরাত পার হওয়ার জন্য কুরবানীর পশু কে কুরবানী দাতার জন্য যানবাহন বানিয়ে দেওয়া হবে।
১২/ কুরবানীর পশুর দেহের প্রতিটি অঙ্গ কুরবানী দাতার দেহের প্রতিটি অঙ্গের গুনাহের বদলা ( কাফ্ফারা ) হয়ে দাঁড়াবে।
১৩/ দয়াল নবী সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে গরীব মানুষের মাঝে কুরবানীর পশু বিতরণ করতেন।
এখনও যদি ধনী লোকেরা কুরবানীর পশু দান স্বরুপ বিতরণ করেন, তাহলে সেটা নেওয়া ও কুরবানী করা অবশ্যই জায়েয হবে, তবে বদ আক্বিদা ও বদ মাযহাবদের নিকট থেকে কুরবানীর পশু নেওয়া হারাম।
১৪/ মহা নবী সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাতের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিয়েছেন।
এখনও বহু ভাগ্যবান মুসলমান দয়ার নবীর নামে কুরবানী করে থাকেন, এটা অবশ্যই জায়েয।
১৫/ হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালাম কে কুরবানী করতে নিয়ে যান, তখন হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বয়স ছিল ৭ অথবা ১৩ বছর।
১৬/ মক্কা শরীফ থেকে দুই মাইল দুরে মিনা মাঠে হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালাম কে কুরবানী করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
১৭/ একটি বর্ণনা অনুযায়ী হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের গলায় ৭০ বার ছুরি চালিয়ে ছিলেন তবুও তাঁর গলা কাটেনি কেননা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার নিষেধ ছিল।
১৮/ হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে জান্নাত থেকে যে দুম্বাটি এসেছিল, তার নাম ছিল "জারির"।
লালচে সাদা রং এর দুম্বা, তার দেহে মাংস ছাড়া যেমন- হাড় নাড়িভুঁড়ি ও মল ইত্যাদি কিছুই ছিল না। দেখতে হাতির সমান, মিনা প্রান্তরে স্বাবির নামক একটি পাহাড়ের ধারে একটি বাবলার গাছে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।
আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে ঐ দুম্বাটিকে কুরবানী করেন।
১৯/ হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ঐ দুম্বাটি যবেহ করে তার মাংস পশু পাখিকে খাইয়ে দেন। কেননা দুম্বাটি ছিল জান্নাতী,পৃথিবীর আগুন ঐ পশুর মাংস সিদ্ধ করতে পারবে না।
২০/ যে সমস্ত মুসলমান কুরবানীর দিন গুলিতে সাহিবে নেসাবের আওতায় পড়বেন, অর্থাৎ- ধনীর তালিকায় পড়বেন, তারা যদি জ্ঞানী হন পাগল না হন, সাবালক হন নাবালক না হন, স্থানীয় হন মুসাফির না হন, তাহলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাদের সকলের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
২১/ কুরবানীর তারিখ গুলিতে রাতে কুরবানী করলেও কুরবানী হয়ে যাবে তবে এটা না করা-ই ভালো।
২২/ মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবে নফল হিসাবে করলে অবশ্যই নেকী পাবে।
বিস্তারিত জানতে দেখুন- মিরয়াতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ ২য় খঃ,
ইসলামী তাক্বরীবাত ও ইসলামী হায়রাত আঁগেয মা'লুমাত ইত্যাদি কিতাবাদি কুরবানীর বয়ান।
والله اعلم بالصواب
✍️ফাক্বীহে বাঙ্গাল মুফতী মোঃ আলীমুদ্দিন ক্বাদেরী রেজবী মাযহারী জঙ্গীপুরী।🖋️
🌍শিক্ষক- নাইত শামসেরিয়া হাই মাদ্রাসা উচ্চ মাধ্যমিক 🌍
সভাপতি- রঘুনাথগঞ্জ গাড়িঘাট মাদ্রাসা জামিয়া গওসিয়া রেজবীয়া।
সভাপতি- সুন্নী ঐক্য মঞ্চ মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি।
তারিখ- ০৮/০৭/২০২২
রোজ- শুক্রবার।
Comments -