্কুরবানী ও আকিকা সংক্রান্ত কিছু জরুরী মসলা-মাসায়েল (প্রথম পর্ব) Mufti Alimuddin Mazhari
তোহফায়ে ঈমানী বা মাসায়েলে কুরবানী
🌸কুরবানী ও আকিকা সংক্রান্ত কিছু জরুরী মসলা-মাসায়েল 👇👇👇
১/👉🏻 আকিকার মাংস মা-বাপ, দাদা-দাদি, নানা-নানি, মামা-মামি, কাকা-কাকি এমনকি যার নামে আকিকা হয়েছে সে সহ সবাই খেতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নাই। আকিকার মাংস এবং কুরবানীর মাংস ভাগ বিতরণ করার নিয়ম একই রকম।
( মালফুয শরীফ প্রথম খঃ ৩৫/৩৬ পৃষ্ঠা)
২/👉🏻 ঈদুল ফিতরের দিন, ঈদুল আযহার দিন এবং ঈদুল আযহার পরের ৩ দিন রোজা রাখা হারাম।
( মালফুয শরীফ চতুর্থ খণ্ড ৫৬ পৃষ্ঠা)
৩/👉🏻 *কুরবানীর পশুর বয়স নিম্ন রুপ হতে হবে*👇🏻👇🏻
🐫 উট আরবী বছর ধরে কম পক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। অর্থাৎ- ৩৬৫ দিনে এক বছর না ধরে, ৩৫৫ দিনে এক বছর ধরতে হবে। কারন আরবী বছর ৩৫৫ দিনে পূর্ণ হয়ে যায়।
গরু ও মহিষ ৩৫৫ দিনের বছর ধরে কম পক্ষে ২ বছরের হতে হবে।
ছাগল ভেঁড়া ও দুম্বা ৩৫৫ দিনের বছর ধরে কম পক্ষে এক বছরের হতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো দুম্বার বাচ্চা যদি মোটা তাজার দিক দিয়ে দেখতে সত্যি ১ বছরের মত মনে হয়, তাহলে তারও কুরবানী করা জায়েজ হবে।
( ফাতাওয়া ইউরোপ ৩৫০/৩৫১ পৃষ্ঠা)
বিঃ দ্রঃ- কুরবানীর পশুর দাঁতা আ-দাঁতার সাথে কোনো সম্পর্ক নাই। 👆 উপরে দেওয়া সঠিক বয়স পুজে গেলেই যথেষ্ট।
৪/👉🏻 কুরবানীর মাদা পশুর পেটে যদি বাচ্চা থাকে, আর পেটের মধ্যে থাকা ঐ বাচ্চার মধ্যে যদি রুহ চলে আসে, তাহলে ইমাম আবু হানীফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মতে কুরবানী করা জায়েজ হলেও সেটা মাকরূহ হবে। আর যদি এখনও রুহ না এসে থাকে, তাহলে সর্ব সম্মতিক্রমে তার কুরবানী করা জায়েজ আছে।
( ফাতাওয়া ইউরোপ ৩৫৯ পৃষ্ঠা)
৫/👉🏻 কোনো পশুর যদি জন্মগত-ই লেজ👂কান না থাকে, তাহলে তার কুরবানী করাতে কোনো অসুবিধা নাই।
( ফাতাওয়া ইউরোপ ৩৬১ পৃষ্ঠা)
৬/👉🏻 কোনো ছাগলের স্তনের দুধ যদি শুকিয়ে যায়, তাহলেও তার কুরবানী জায়েজ হবে।
( ফাতাওয়া ইউরোপ ৩৬২ পৃষ্ঠা)
৭/👉🏻 কুরবানীর চামড়ার টাকা পার্থিব কাজে খরচ না করে, ধর্মীয় কাজে খরচ করতে হবে।
( ফাতাওয়া মারকাযী দারুল ইফতা ২৮৫ পৃষ্ঠা)
৮/👉🏻 সত্যি যদি কোনো পশু হিজড়া হয়। অর্থাৎ- উভয় লিঙ্গ থাকে, এবং দুই পথ দিয়েই এক সাথে প্রস্রাব বের হয়। তাহলে এমন পশুর কুরবানী দেওয়া জায়েজ নয়।
কেননা এই ধরনের পশুর মাংস সিদ্ধ হয় না।
( ফাতাওয়া মারকাযী দারুল ইফতা ৫৭ পৃষ্ঠা)
৯/👉🏻 কুরবানী ও আকিকার মাংস তিন ভাগ করা এটা মুস্তাহাব বা উত্তম কাজ।
ইচ্ছা করলে, সমস্ত মাংস ফকির মিসকিনকে বিতরণও করে দিতে পারে। ইচ্ছা করলে সমস্ত মাংস আন্তীয় স্বজনকেও দিয়ে দিতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে সমস্ত মাংস নিজেও খেতে পারে।
( ফাতাওয়া আফরীকা ২৮ পৃষ্ঠা)
১০/👉🏻 ইচ্ছাকৃত যদি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার না বলে, আর কম পক্ষে তিনটিও রগ না কাটে, তাহলে জবাই দুরস্ত হবে না।
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে হবে এবং কম পক্ষে তিনটি রগ কাটতে হবে, তাহলে জবাইকৃত পশু হালাল হয়ে যাবে।
( ফাতাওয়া আফরীকা ৩৯ পৃষ্ঠা)
১১/👉🏻 অস্ত্র খুব ধারালো হওয়ার কারণে যদি পশুর গলা গোটাই কেটে মাথা আলাদা হয়ে যায়, তাহলে, সেই মাংস খাওয়া জায়েজ আছে। হ্যাঁ এই ধরনের কাজ ইচ্ছাকৃত করা মাকরূহ। আর অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেলে কোনো দোষ নাই।
( ফাতাওয়া আফরীকা১১০ পৃষ্ঠা)
১২ /👉🏻 গাভীর পেট থেকে যদি জন্ম হয়ে থাকে, তাহলে জার্শি গরু ইত্যাদির কুরবানী দেওয়া জায়েজ আছে।
( ফাতাওয়া বারকাতিয়া ২২৯ পৃষ্ঠা)
১৩/👉🏻 যার উপর কুরবানী ওয়াজিব আছে, সে যদি কুরবানীর সময়, কুরবানী না দিয়ে তার পরিবর্তে, দশ লাখ স্বর্ণ মুদ্রা দান করে, তবুও তার কুরবানী আদায় হবে না। ওয়াজিব থেকে মুক্ত হবে না। বরং ওয়াজিব ত্যাগের কারনে গুনাহগার হবে।
( ফাতাওয়া আফরীকা ১৯১ পৃষ্ঠা)
১৪/👉🏻 হাদীস ও ফেক্বাহ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, মোট তিন দিন অবধি কুরবানী করা জায়েজ। যিলহিজ্জা চাঁদের ১০,১১ও ১২ তারিখ।
( ফাতাওয়া বারকাতিয়া ২৩৩ পৃষ্ঠা)
১৫/👉🏻 শিকমা বা নাড়িভুঁড়ি খাওয়া নাজায়েজ। সেগুলো মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়। তবে হ্যাঁ সাঁওতাল ইত্যাদি যদি নিতে চাই, তাহলে দিয়ে দিতে হবে, নিষেধ করতে হবে না।
( ফাতাওয়া বারকাতিয়া ৪৮৫ পৃষ্ঠা)
১৬/👉🏻 শহর ও কাসবা ইত্যাদি যেখানে ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব আছে, সেখানে ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করা নাজায়েয। যদি কেউ নামাযের পূর্বে কুরবানী করে ফেলে, তাহলে তার কুরবানী হবে না।
( ফাতাওয়া আফরীকা ২৮ পৃষ্ঠা)
১৭/👉🏻 প্যারায় করা পশুর কুরবানী দেওয়া নিষেধ তো নয়ই। বরং উত্তম।
( ফাতাওয়া ইউরোপ ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
১৮/👉🏻 যে পশু সু-স্বাস্থবান এবং যার মূল্য বেশী তার কুরবানী দেওয়া সব চাইতে উত্তম।
( বাহারে শারীয়াত ১৫তম খঃ ১৩১ পৃষ্ঠা)
১৯/👉🏻 হালাল পশুর মধ্যে 🐫 উটের কুরবানী দেওয়া সব চাইতে উত্তম। তার পর গাভীর স্থান, তার পর ছাগল তার পর ভেঁড়া।
( মিরয়াতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ ২য় খঃ ৩৬৯ পৃষ্ঠা)
২০/👉🏻 হুযূর আলাইহিস সালাম নিজ স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গাভীর কুরবানী দিয়েছেন।
( মালফুয শরীফ প্রথম খঃ ১৩ পৃষ্ঠা)
২১/👉🏻 কুরবানীর চামড়া মাদ্রাসা ইত্যাদিতে দেওয়া জায়েজ। বরং ভালো।
( মালফুয শরীফ প্রথম খঃ ৬০ পৃষ্ঠা)
২২/👉🏻 যার নামে আকিকা দেওয়া হয়নি। তার নামে কুরবানী দেওয়াতে কোনো সমস্যা নাই।
২৩/👉🏻 কুরবানী ও আকিকার ভাগা এক সাথে দেওয়া জায়েজ।
২৪/👉🏻 মৃত্যু ব্যক্তির নামেও কুরবানী দেওয়াতে কোনো অসুবিধা নাই।
২৫/ 👉🏻একটা 🐫 উট গরু ও মহিষ সর্বাধিক ৭ জনের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া জায়েজ ।
যে মওলবী এর বিরোধিতা করে, সে হাদীসের শত্রু।
( বাহারে শারীয়াত ১৫তম খঃ ১৩১ পৃষ্ঠা)
২৬/👉🏻 কুরবানীর চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী হওয়া অবধি নখ চুল ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। তবে যদি চুল নখ ইত্যাদি অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়, তাহলে কেটে নেবে।
(বাহারে শারীয়াত ১৫তম খঃ ১৩১)
২৭/👉🏻 যদি জানে ও পারে, তাহলে মহিলারাও কুরবানী জবাই করতে পারে।
২৮/👉🏻 ইমাম সাহেব বা কোনো মওলবী সাহেবকে দিয়েই কুরবানী করতে হবে, এমন কথা নয়। কুরবানী নিজে নিজেও করা জায়েজ আছে। বরং উত্তম।
২৯/👉🏻 পড়ে পাওয়া পশুর কুরবানী দেওয়া জায়েজ নয়।
৩০/👉🏻 পোসানী পুষে যে পশু পাওয়া য়ায়, তার কুরবানী দেওয়া জায়েজ নয়। হ্যাঁ মালিকের দেওয়া চলবে।
ھذا ما ظھر لی والعلم الحق عند ربی
✍️খাদিমে আহলে সুন্নাত
মুফতী মোঃ আলিমুদ্দিন আখতারী রেজবী মাযহারী জঙ্গীপুরী। 🖋️
Comments -