কুরবানী করা ওয়াজিব নাকি সুন্নাত ?
কুরবানী করা ওয়াজিব নাকি সুন্নাত।
🌿 কুরবানী করা ওয়াজিব না সুন্নাত। 🌿
📣 প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! কুরবানী করা ইসলামিক রীতি-নীতি বলে তো সবাই একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু তার শরয়ী হুকুম কি এক্ষেত্রে ঈমামগণদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুমুল্লাহ বলেছেন: কুরবানী করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির প্রতি হল ওয়াজিব, যা পরিত্যাগ কারলে গুনাহগার হবে। আর ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেন: কুরবানী করা সুন্নাত।
নিম্নে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী কুরবানি ওয়াজিব হওয়া সংক্রান্ত কিছু দলিলাদি নিম্নে প্রদত্ত হলো।
আল্লাহ তায়া'লা ক্বুরআন মাজীদে ঘোষণা করেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অর্থাৎ- সুতরাং আপনি আপনার পালনকর্তার জন্য নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন।
(📚সূরা কাওসার, আয়াত নং 2)
এই আয়াত শরীফে "صَلِّ" থেকে ঈদের নামায এবং "اِنْحَرْ" থেকে ঈদুল আযহার দিনে কুরবানী করা উদ্দেশ্য রয়েছে।
(তিবয়ানুল ক্বুরআন, খন্ড নং 12, পৃষ্ঠা নং 1006) আর উভয়টির হুকুম হলো ওয়াজিব। কেননা উসুলে ফেক্বহার একটি গ্ৰামার রয়েছে:
যখন فعل امر (কামের হুকুম যুক্ত কোন শব্দ) সম্পূর্ণ রূপে বলা হবে, তখন তা থেকে ওয়াজিব হুকুম প্রমাণিত হবে।
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরোক্ত আয়াত ব্যতীত নিম্নোক্ত হাদিস সমূহ হতেও কোরবানি করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا
অনুবাদ: হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি (কুরবানী করার) ক্ষমতা থাকা সত্যেও যদি কুরবানী না করে তাহলে সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের নিকট না আসে।
📚 সুনান ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং (3123), সুনানুস সাগীর লিল-বায়হাক্বী শরীফ, হাদীস নং (1809), সুনান দারে ক্বুতনী, হাদীস নং (4762), মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং (8273), মুসতাদরাক লিল-হাকীম, হাদীস নং (7566)
এছাড়া এই প্রসঙ্গে আরো দুইটি প্রকাশ্য হাদীস রয়েছে, যেখান থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়।
(১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"اَيُّهَا النَّاسُ! إِنَّ عَلٰى كُلِّ اَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ اُضْحِيَّةً"
অর্থাৎ: হে লোকেরা! নিশ্চয় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের উপর প্রতি বছর কুরবানী (ওয়াজিব) হয়।
(📚 সুনান আবূ দাঊদ শরীফ, হাদীস নং 2788), (সুনান আত-তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং 1518), (সুনান আন-নাসা'ঈ শরীফ, হাদীস নং 4229), (সুনান ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং 3125)
(২) عَنْ جُنْدُبٍ الْبَجَلِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ: شَهِدْتُ الْأَضْحَى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَبَحَ أُنَاسٌ قَبْلَ الصَّلَاةِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ ذَبَحَ مِنْكُمْ قَبْلَ الصَّلَاةِ، فَلْيُعِدْ أُضْحِيَّتَهُ، وَمَنْ لَا فَلْيَذْبَحْ عَلَى اسْمِ اللَّهِ
অনুবাদ: হযরত জুনদাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, আমি ঈদুল আযহায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। কত লোক ঈদের নামাযের পূর্বেই কুরবানী করেছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করেছে সে যেন পুণরায় কুরবানী করে। আর যে ব্যক্তি এখনও কুরবানী করেনি সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করে।
(📚সহীহ আল-বুখারী শরীফ, হাদীস নং 5562), (সুনান ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং 3152), সুনান আন-নাসা'ঈ শরীফ, হাদীস নং (4373)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত হাদীস সমূহ হতে বুঝা যায় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব, আর যদি তা না হতো তবে প্রথম হাদীসে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না দেওয়া ব্যাক্তিদেরকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহের নিকট আসতে নিষেধ করতেন না। এবং দ্বিতীয় হাদীসে বলা হয়েছে যে, কুরবানী করা প্রত্যেক বছর বাড়ির প্রতিটি সদস্যের ওপর ওয়াজিব হয়। আর তৃতীয় হাদীস হতেও বুঝা যায় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব, কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে জবাহ করে দেওয়া লোকদের পুণরায় কুরবানী করার হুকুম দিয়েছিলেন।
★ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত ৬টি: (১) মুসলমান হওয়া,(২) সেখানকার বাসিন্দা হওয়া,(৩) জ্ঞানী হওয়া,(৪)সাবালোক হওয়া,(৫) মালিকে নিসাব হওয়া,(৬) স্বাধীন হওয়া। (📚দুররে মুখতার, খন্ড নং: 6, পৃষ্ঠা নং: 312)
والله اعلم بالصواب
✍️ মৌলানা আলী আসগার সাহেব
🌎 কদমতলী, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 🌎
Comments -