KeyOfIslam
Welcome To KeyOfIslam.com. KeyOfIslam is the platform to spread love and brotherhood among all people through the light of Prophet Mohammad(peace be upon him), the Final Messanger of Allah. Here you will get informations with precision.
Individual Articles
সংক্ষিপ্ত আকারে তালাকের প্রকার প্রকরণ ও বিধি-বিধান
সংক্ষিপ্ত আকারে তালাকের প্রকার প্রকরণ ও বিধি-বিধান মাওলানা হাশিমুদ্দীন মিসবাহী, মুর্শিদাবাদ তালাক্বের ভূমিকা প্রিয় পাঠক! ইসলামে তালাক (বিচ্ছেদ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি বিষয়, যা পরিবারের স্থিতি রক্ষার উদ্দেশ্যে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান সময়ে তালাকের ভূমিকা সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষত পারিবারিক, সামাজিক, এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। ইসলামে তালাককে হালাল জিনিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়। ইসলামিক দৃষ্টিকোণায় বিবাহকে একটি পবিত্র ও স্থায়ী বন্ধন হিসেবে দেখলেও, কখনো কখনো দম্পতির মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্কের অবসান ঘটানোর জন্য ইসলাম তালাকের বিধান প্রদান করেছে। তালাকের মূল লক্ষ্য হলো, একটি বৈবাহিক সম্পর্ককে সম্মানজনকভাবে সমাধান করা, যাতে উভয় পক্ষের অধিকার ও মর্যাদা বজায় থাকে। কোরআন এবং হাদিসে তালাকের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলি ও শর্তাবলি বর্ণিত হয়েছে, যা সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তালাককে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও তালাককে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে। কিন্তু বড়ো পরিতাপের বিষয় যে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাগান্বিত অবস্থায় তালাক দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের বাহানা বা অজুহাতের পথ অন্বেষণ করে সেই সম্পর্ককে পুনরায় স্থায়ী বা বজায় রাখার জন্য। তাই আমি অধম বিভিন্ন গ্রহনযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্তভাবে তালাকের প্রকার প্রকরণ ও বিধি বিধান আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করার প্রয়াস করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বোঝার ও তার প্রতি আমল করার তৌফিক দান করুন এবং আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক পথের পথিক হওয়ার তৌফিক প্রদান করুন। আমীন ।। তালাক প্রধানত তিন প্রকার।যথা— ১.তালাক্বে রাজ'ই(প্রত্যাবর্তনযোগ্য তালাক) সংজ্ঞা:- এটি এমন এক তালাক যেখানে স্বামী ইদ্দতকালীন সময়ে পুনরায় স্ত্রীর সাথে বিবাহবন্ধনে ফিরে যেতে পারেন, অর্থাৎ পুনর্মিলন (রুজু) করা সম্ভব। প্রক্রিয়া:- তালাক-এ-রাজ'ইতে স্বামী এক বা দুইবার তালাক উচ্চারণ করেন। ইদ্দতকালীন সময়ে (স্ত্রীর তিনটি পিরিয়ড অথবা তিন মাস পর্যন্ত সময়) স্বামী কোনো নতুন বিবাহ চুক্তি ছাড়াই স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারেন। এটি হল স্বাভাবিক পুনর্মিলনের পদ্ধতি। রুজুর অর্থাৎ প্রত্যাবর্তনের পদ্ধতি:- ইদ্দতের সময়কালে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বা মৌখিকভাবে স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করা হয়। এই প্রকার তালাক দেয়ার পর দুইবার পর্যন্ত স্বামী রুজু করতে পারেন। যদি তিনবার তালাক দেন, তখন এটি তালাক-এ-মুগাল্লাযা হয়ে যাবে এবং পুনর্মিলন সম্ভব হবে না। ২. তালাক্বে বাঈন (বিচ্ছিন্ন তালাক) সংজ্ঞা:- এই প্রকার তালাক্বে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনরায় বিবাহ ব্যতিরেকে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। বিধি বিধান :- এটি সাধারণত এক তালাক অথবা স্ত্রীর অনুরোধে (খুলা) প্রদান করা হয়। এই তালাকের পর পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে স্ত্রীকে অন্য কারো সাথে বিবাহ এবং সংসার করার প্রয়োজন নেই, বরং ইদ্দতের পরে পরেই তারা পুনরায় বিবাহ করতে পারে। ৩. তালাক্বে মুগাল্লাযা (কঠিন তালাক্ব) সংজ্ঞা:- এটি চূড়ান্ত ও অপ্রত্যাহারযোগ্য তালাক। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চিরতরে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। বিধি বিধান :- ইসলামে তালাক-এ-মুগাল্লাযাকে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বলে অভিহিত করা হয়েছে, তবে এটি বৈধ। এক্ষেত্রে পুনরায় মিলন সম্ভব নয়, একমাত্র হালালার মাধ্যমে তা সম্ভব হতে পারে। শব্দগত দিক দিয়ে তালাক দুই প্রকার।যথা— ১.তালাক-এ-স্বরীহ(স্পষ্ট বা পরিষ্কার) সংজ্ঞা:- তালাক-এ-স্বরীহ হলো সেই তালাক যেখানে স্বামী স্পষ্ট ভাষায় তালাকের শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করে স্ত্রীকে তালাক দেন। এতে কোনো অস্পষ্টতা থাকে না এবং কোনো শর্ত বা ইঙ্গিতের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ:- স্বামী যদি বলে,আমি তোমাকে তালাক দিলাম, তাহলে এটি তালাক-এ-স্বরীহ হিসেবে গণ্য হবে। বিধি-বিধান:- তালাক-এ-স্বরীহতে ব্যবহৃত বাক্য বা শব্দ হতে হবে সরাসরি তালাকের ইঙ্গিতপূর্ণ। যেমন: "তোমাকে তালাক দিলাম" বা "আমাদের বিবাহ বন্ধন শেষ করলাম। -:উপসংহার:- তালাক-এ-স্বরীহ হলো একটি সরাসরি ও স্পষ্ট প্রক্রিয়া, যা ইসলামী শরিয়াহতে বৈধ তালাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এটি সহজ এবং সরাসরি, কোনো ধোঁয়াশা ছাড়াই তালাক কার্যকর করতে ব্যবহৃত হয়। তালাকে কিনায়া অর্থাৎ ইঙ্গিতপূর্ণ বা রূপকভাবে কিছু বলা। সংজ্ঞা:- তালাকে কিনায়া হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে স্বামী তালাক দিতে ইচ্ছুক হলেও সরাসরি তালাকের কথা না বলে এমন কিছু শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করেন, যা তালাকের ইঙ্গিত দেয়। তবে এই প্রকার তালাক তখনই কার্যকর হবে যখন স্বামীর নিয়ত তালাক দেওয়ার থাকে। এখানে মূলত স্বামীর ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে। -:বিধি-বিধান:- ১ অস্পষ্ট বাক্য: তালাকে কিনায়াতে ব্যবহার করা বাক্য সরাসরি তালাকের ইঙ্গিত দেয় না, বরং সাধারণ বা রূপক বাক্য হতে পারে। যেমন, "তুমি মুক্ত" বা "তুমি আমার থেকে চলে যাও।" 2 তালাক্ব নিয়তের উপর নির্ভরশীল: তালাকে কিনায়ার ক্ষেত্রে তালাক কার্যকর হবে কিনা, তা সম্পূর্ণভাবে স্বামীর নিয়তের উপর নির্ভর করবে। যদি স্বামী এই বাক্য ব্যবহার করার সময় তালাক দেওয়ার নিয়ত করেন, তাহলে তালাক কার্যকর হবে। তবে, যদি তার নিয়ত তালাক দেওয়ার না থাকে, তাহলে তা তালাক হিসেবে গণ্য হবে না। -:উপসংহার:- তালাকে কিনায়া হলো এমন তালাক পদ্ধতি যেখানে সরাসরি তালাকের শব্দ না বলে ইঙ্গিতপূর্ণ বা রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয়। এটি সম্পূর্ণভাবে স্বামীর নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং নিয়ত থাকলে তালাক কার্যকর হবে। এই প্রক্রিয়া কিছুটা অস্পষ্ট হওয়ায় এতে স্বামীর নিয়ত এবং উদ্দেশ্য যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। সিফাত বা গুনগত দিক দিয়ে তালাক প্রধানত তিন প্রকার। যথা— ১) তালাকে আহসান সংজ্ঞা:- স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে এমন তুহুরে এক তালাক প্রদান করে যে তুহুরে সে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেনি। ২) তালাকে হাসান সংজ্ঞা:- তিন তুহুরে তিন তালাক প্রদান করা এবং যে সমস্ত তুহুরে তালাক দিয়েছে সেই তুহুর গুলিতে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেনি ৩) তালাকে বিদয়ী সংজ্ঞা:- যে তুহুরে সহবাস করা হয়েছে সে তুহুরে তালাক দেওয়া অথবা এক বাক্যে তিন তালাক দেওয়া অথবা স্ত্রীকে হায়েজের অবস্থায় তালাক দেওয়াকে তালাকে বিদয়ী বলা হয়। আরো তালাকের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে তন্মধ্যে কিছু উপস্থাপন করা হলো। যথা— ১.তালাক্বে তাফবীজ অর্থাৎ অপূর্ণ করা সংজ্ঞা:- এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার প্রদান করেন। এটি তালাকের অধিকার স্থানান্তর হিসেবে বিবেচিত। বিধি-বিধান:- এটি সাধারণত সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় যেখানে স্ত্রীর সম্মতি বা চুক্তির ভিত্তিতে স্বামী তালাকের অধিকার স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। এক্ষেত্রে স্ত্রী নিজেই তালাক কার্যকর করতে পারেন। ২.খুলা (স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক চাওয়া) সংজ্ঞা:- খুলা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুরোধ জানায় এবং কিছু ক্ষতিপূরণ প্রদান করে সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুমতি লাভ করে। বিধি বিধান:- ইসলামে স্ত্রী স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট হলে খুলা চাইতে পারেন। তবে স্বামীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি একবার কার্যকর হলে, পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে নতুন বিবাহ চুক্তি করতে হবে। ৩.তালাকে লিয়ান অর্থাৎ অপবাদমূলক তালাক্ব সংজ্ঞা:- লিয়ান একটি বিশেষ পদ্ধতি, যেখানে স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ তোলেন এবং তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। বিধি বিধান :- এটি সাধারণত তখনই প্রযোজ্য হয় যখন স্বামী স্ত্রীর প্রতি অসত্য অভিযোগ করেন, এবং তা বিচারক বা আদালতের মাধ্যমে সমাধান হয়। এক্ষেত্রে সম্পর্ক চিরতরে ছিন্ন হয় এবং পুনরায় মিলনের সুযোগ থাকে না। পদ্ধতি:- লিয়ানের পদ্ধতি হলো স্ত্রীর উপরই যদি স্বামী জেনার অভিযোগ আনায়ন করে আর স্ত্রী উক্ত অপবাদ অস্বীকার করে তাহলে তাদের শপথের মাধ্যমে কাজী সাহেব বিবাহ বিচ্ছেদ করে দিবেন। প্রথমে অভিযোগকারী স্বামী চারবার আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলবে যে আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি আমার স্ত্রীর প্রতি যেনার সম্পর্ক করার ব্যাপারে সত্যবাদী। এবং পঞ্চম বার বলবে যদি আমি তার প্রতি যেনার সম্পর্ক করার ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহর প্রতিসম্পত আমার উপর পড়ুক। আর প্রত্যেকবার এ কথা বলার সময় স্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করবে । অতঃপর স্ত্রী চারবার বলবে আমি সাক্ষ্য প্রদান পূর্বক বলছি যে, আমার প্রতি যেনার অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে আমার স্বামী মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চম বার বলবে যে, আমার স্বামীর অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে আল্লাহর অভিসমম্পতে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।

Comments -

Hasimuddin shaikhPosted On: 2024-11-26
Sobai amar jonno diye korben. Ei rokom article aro apnader ke upohar dite pari.
Most Read Articles