ইলমে হাদীসে হুযূর আলা হযরতের পান্ডিত্য...
ইলমে হাদীসে হুযূর আলা হযরতের পান্ডিত্য...
মুফতী গুলজার আলী মিসবাহী, উঃ দিনাজপুর
সিনিয়র শিক্ষক ও ইফতা বিভাগের সদস্য: এম. জি.এফ. মাদীনাতুল উলূম, খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় যুগের অতুলনীয় ফক্বীহ ছিলেন। ফিক্বহ শাস্ত্রের ইনসাইক্লোপিডিয়া "ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ" হল তার জলন্ত প্রমাণ। ফিক্বহ শাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্য দেখে
হযরত শায়খ সৈয়দ মুহাম্মদ ইসমাঈল মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"যদি এই গবেষণা টি ইমাম আযম আবূ হানীফা রাদিয়াল্লাহু আনহু দেখতেন, তাহলে তাঁর চক্ষু ঠান্ডা হয়ে যেত এবং নিশ্চিতরূপে এর লেখককে (আলা হযরতকে) নিজের ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত করতেন।"
(আল ইজাযাতুল মাতীনাহ লি ওলামায়ি মাক্বাতা ওয়াল মাদীনাহ, পৃঃ ২৫৯, প্রকাশিত লাহোর)
হযরত সাদরুল আফাযিল সৈয়দ নাঈমুদ্দিন মুরাদাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"ফিক্বহ শাস্ত্রে (আলা হযরত) -এর জ্ঞানের গভীরতাকে দেখে মক্কা-মদীনা সহ সারা বিশ্বের আলিমগণ নিজ নিজ মাথা নত করে তাঁর সমর্থন করেছিলেন। বিস্তারিত তাঁর ফাতাওয়া দেখেই বুঝা যায়। কিন্তু সংক্ষেপে দুটি শব্দে আমি বলি যে, তিনি বর্তমান শতাব্দির দুনিয়ার মধ্যে এমন একজন মুফতী ছিলেন যার দিকে গোটা বিশ্বের মানুষ নবঃউদ্ভাবন মাসআলা -মাসায়েল সমূহ, বিশেষ কোন বিষয়ে সমস্যার সমাধানের জন্য দারস্ত হতেন। একটি কলম ছিল, যে সারা বিশ্বের ফিক্বহের ফায়সালা প্রদান করত। তিনিই বদ মাযহাবের জবাব লিখতেন। বাতিল পন্থিদের কিতাবসমূহের খন্ডন করতেন। আর বিশ্বের মানুষের প্রশ্নের জবাবও দিতেন। আলা হযরতের দক্ষতা তাঁর বিরোধীরাও সমর্থন করেছেন যে, "ফিক্বহ শাস্ত্রে তাঁর নমুনা চক্ষু দেখেনি।"
(হায়াতে সাদরুল আফাযিল)
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফিক্বহ শাস্ত্রে পান্ডিত্য দেখে তাজুল উলামা, সৈয়দ শাহ আওলাদে রাসূল মুহাম্মদ মিঞা ক্বাদরী বারকাতী (সাজ্জাদাহ নশীন খানকাহে মারেহরা মুতাহহারা রহমতুল্লাহি আলাইহি )বলতেন:
"আমি আলা হযরত রহমতুল্লাহি আলাইহকে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহির উপর প্রাধান্য দিচ্ছি। কেননা, যে গভীরতা আলা হযরতের মধ্যে আছে, তা ইবনে আবেদীন শামির মধ্যে ছিল না।" (ইমাম আহমদ রেযা আরবাবে ইলমো দানিশ কি নাযার মে, পৃঃ২৬)
ডঃ ইকবাল বলেন:
"তিনি খুবই মেধাবী এবং বিচক্ষণ আলিমে দ্বীন ছিলেন। ফিক্বহ শাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্য খুবই উঁচু পর্যায়ের ছিল। তাঁর ফাতাওয়া অধ্যায়ন করে বুঝা যায় যে, তিনি ইজতিহাদের মর্তবায় অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং হিন্দুস্থানের সবচেয়ে বড় ফক্বীহ ছিলেন। হিন্দুস্থানের শেষ যুগে তাঁর মতো মেধাবী ও প্রতিভা সম্পন্ন ফক্বীহ পাওয়া খুবই কঠিন।" (পায়গামাতে ইয়াওমে রেযা , অংশ: ৩, পৃঃ:১০)
এ ছাড়া আরও অসংখ্য আলিম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিস, তাঁর ফিক্বহ শাস্ত্রের অতুলনীয় দক্ষতাকে সমর্থন করেছেন। সবার উক্তি এখানে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।
এক কথায় ওলামায়ে কেরাম নিজের মনোভাব উপস্থাপন করে বলেন যে, যুগ যুগ ধরে অখন্ড ভারতের বুকে আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত কোন ফক্বীহ জন্ম গ্রহণ করেননি।" (ইমাম আহমদ রেযা আরবাবে ইলমো দানিশ কি নাযার মে, পৃঃ ২৪)
একজন জ্ঞানী ব্যক্তি জানেন যে, ফক্বীহ হওয়ার জন্য হাদীস শাস্ত্রের কত বড় পন্ডিত হওয়া জরুরী। কেউ তখনই ফক্বীহ হতে পারে যখন হাদীস সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান থাকবে। কেননা, মাসআলা -মাসায়েল বা ফিক্বহ শাস্ত্রে গবেষণা ক্বোরআন ও হাদীসের আলোকেই করতে হয়। ইলমে হাদীসে দক্ষতা না থাকলে ফক্বীহ হওয়া অসম্ভব।
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কিতাবসমূহ অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে, যেরূপভাবে তিনি একজন বড় ফক্বীহ ছিলেন তদ্রুপ তিনি বিশাল বড় মুহাদ্দিসও ছিলেন। হাদীস শাস্ত্রেও তাঁর যুগে কেউ তাঁর সমতুল্য ছিল না।
মনে রাখা উচিত মুহাদ্দিস হওয়া টারটে খানি কথা নয়; বরং ইলমে হাদীস সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের মালিক হওয়া জরুরী। মুহাদ্দিস হওয়ার জন্য যেসব জ্ঞান রাখা জরুরী তা নিম্নরূপঃ
(১) হাজার হাজার হাদীস অধ্যয়ন করা
(২) উসূলে হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান রাখা
(৩) হাদীসের সূত্র সম্পর্কে অবহিত হওয়া
(৪) আসমাউর রেজাল অর্থাৎ হাদীস বর্ণনকারীদের সম্পর্কে জ্ঞান রাখা
(৫) জারাহ ও তা'দীল সম্পর্কে অবগত হওয়া
(৬)তাখরীজে হাদীস সম্পর্কে অবহিত হওয়া, ইত্যাদি।
এ মর্মে আমরা যখন হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর লিখিত কিতাবসমূহ, তাঁর ফাতাওয়া এবং তাঁর গবেষণা পরিলক্ষিত করি তখন বুঝতে পারি যে, উপরোক্ত প্রত্যেক টি বিষয়ে তাঁর জ্ঞান গরিমা সমুদ্রের ন্যায় ছিল। তিনি ইলমে হাদীস, উসূলে হাদীস, আসমাউর রেজাল, তাখরীজে হাদীস, সনদে হাদীস, ই’লালে হাদীস ও মুসতালাহাতে হাদীস অর্থাৎ হাদীস শাস্ত্রের পারিভাষিক সংখ্যা সমূহ সম্পর্কে অতুলনীয় জ্ঞান রাখতেন।
নিম্নে তাঁর কিছু নমুনা উপস্থাপন করা হল।
হাদীস অধ্যয়নে আলা হযরত
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কেউ প্রশ্ন করেন যে, কোন কোন হাদীসের কিতাব আপনার পঠনপাঠনে রয়েছে? এর উত্তরে তিনি বলেন: পঞ্চাশেরও অধিক হাদীসের কিতাব আমার পঠনপাঠনে রয়েছে। যেমন-
মুসনাদে ইমামে আযম, মুয়াত্তা ইমামে মুহাম্মদ, কিতাবুল আসার (ইমাম মুহাম্মদ), কিতাবুল খেরাজ (ইমাম আবূ ইউসুফ), কিতাবুল হিজাজ (ইমাম মুহাম্মদ), শারহু মায়ানিল আসার (ইমাম তাহাবী), মুয়াত্তা ইমামে মালিক, মুসনাদে ইমাম শাফেয়ী, মুসনাদে ইমাম মুহাম্মদ, সুনানে দারেমী, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, খাসায়িসে নাসায়ী, মুনতাক্বী (ইবনুল জারুদ), যু ই’লাল মুতানাহিয়াহ, মিশকাত, জামে কাবীর, মাজে সাগীর, মুনতাক্বা (ইবনে তাইমিয়া), বুলুগুল মারাম, আমালুল এউমুল লাইলাহ (ইবনুস সুন্নী), কিতাবুত তারগীব, খাসায়েসে কুবরা, কিতাবুল ফারজ বা'দাস শিদদাহ, কিতাবুল আসমা ওয়াস সিফাত প্রভৃতি পঞ্চাশ (৫০) থেকেও অধিক হাদীসের কিতাব আমার পঠনপাঠনে রয়েছে। (ইযহারুল হক, পৃষ্ঠা ১৯,২০, রেযা একাডেমি মুম্বাই)
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস অধ্যায়ন সম্পর্কে হুযূর মুহাদ্দিসে আযম হিন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"ইলমে হাদীসে তাঁর কত দক্ষতা ছিল এটা এইভাবে অনুমান করতে পারেন যে, (হাদীসের মধ্যে) ফিক্বহে হানাফীর যত দলীল রয়েছে, সবসময় তাঁর নজরের সামনে থাকত। বাহ্যিক রুপে যে সমস্ত হাদীস ফিক্বহে হানাফীর বিপরীত যেত তার বর্ণনার মধ্যে (সূত্র অথবা বর্ণনাকারীর মধ্যে) যে ত্রুটি রয়েছে তা সবসময় নজরের সামনে থাকত।"
(জামেয়ুল আহাদীস, খন্ড :1, খন্ড: পৃষ্ঠা 407)
এটা তো ছিল তাঁর পঠনপাঠনের বিষয় কিন্ত উনি স্বীয় কিতাবসমূহের মধ্যে যেসব হাদীসের কিতাবাদি হতে দলীল প্রদান করেছেন তার সংখ্যা চার শত হাদীসের কিতাব থেকেও অধিক।
হযরত আল্লামা মুহাম্মদ হানীফ রেজবী মিসবাহী বলেন:
"আমি যখন খোঁজাখুঁজি শুরু করি তখন থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ইমাম আহমদ রেযার সাড়ে তিন শত কিতাব এবং প্রবন্ধ (পুস্তিকা) -এর মধ্যে প্রায় তিনি চার শত (৪০০) হাদীসের কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে পবিত্র হাদীসসমূহ পেলাম।" (জামিউল আহাদীস 409-410, বারকাতে রেরা গুজরাট)
এর মানে হল ৫০ টি হাদীসের কিতাব ছাড়া আরও শত শত হাদীসের কিতাবে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর তাঁর ছিল।
উসূলে হাদীসে পান্ডিত্য
উসূলে হাদীস সম্পর্কে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরিপূর্ণ দক্ষতা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর লিখিত কিতাব "আলহাদুল কাফ ফি হুকমিদ দ্বিয়াফ" পাঠ করলেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায়।
উক্ত কিতাবে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কোন হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের لا يصح বললেই সেই হাদীস যঈফ হয়ে যায় না। কেননা, সহীহ হাদীসের বিপরীতে যঈফ নয় বরং হাসান লি যাতিহী ও হাসান লি গাইরিহী বিদ্যমান। সুতরাং কোন হাদীসের সহীহ হওয়াকে অস্বিকার করা মানে তার যইফ হওয়া জরুরী নয়।
অনুরূপভাবে তিনি উক্ত কিতাবে হাদীসের সংজ্ঞাসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
ইলমে হাদীস ও উসূলে হাদীসে তাঁর দক্ষতা দেখে হযরত আল্লামা আব্দুল মুজতাবা সাহেব বলেন:
"আমি সম্পূর্ণ দৃঢ়তার সহিত বলতে পারি যে, এ যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ, দূরদর্শী ও বুদ্ধিমান আলিমগণ যদি ন্যায়পরায়ণের সঙ্গে (উসূলে হাদীস ও ইলমে হাদীস সম্পর্কে) তাঁর গবেষণাগুলো দেখে নেয় তাহলে নিজেদের সম্পুর্ণ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা ভুলে গিয়ে মুহাদ্দিসে আকবর ইমাম আহমদ রেযা কুদ্দিসা সিররুহুর ছাত্র হওয়াকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করবে।" (তাযকেরায়ে মাশায়েখে রেজবীয়া ক্বাদরীয়া ৪১২)
উসূলে হাদীস প্রসঙ্গে হুযূর আলা হযরত ছয়টি কিতাব রচনা করেছেন।
(১) আলহাদুল কাফ ফি হুকমিদ দ্বিয়াফ (উর্দু)
(২) মাদারিজু তাবক্বাতিল হাদীস (আরবী)
(৩) আল ফাযলুল মাওহুবী ফি মানা ইযা সাহহাল হাদীসু ফা হুয়া মাযহাবী (উর্দু)
(৪) আল- ইফাদাতুর রাযাবিয়াহ (আরবী)
(৫) শারহু নুখবাতিল ফিকর (আরবী)
( ৬) হাশিয়া ফাতহুল মুগীস (আরবী)
হাদীসের সূত্রে পান্ডিত্য
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু মিসওয়াক সম্পর্কে একটি হাদীস নকল করেন।
لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ - لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ او عند کل صلوٰۃ و عند النسائی فی روایۃ عند کل وضوء
অর্থাৎ: যদি আমি আমার উম্মতের উপর বা লোকেদের উপর কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রতিটি নামাযের সাথে দাঁতন করার আদেশ দিতাম। ইমাম নেসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে প্রত্যেক ওযু করার সময়।
এর পরে হাদীসের রেফারেন্স দিতে গিয়ে বলেন: হাদীসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। একাধিক বর্ণনাকারী বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যেমন-
(১) ১- ইমাম মালিক ২- ইমাম আহমদ ৩-৮ সিহাহে সিত্তার ইমামগণ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(২) ৯- ইমাম আহমদ ১০-আবূ দাউদ ১১ নাসায়ী ১২- তিরমিযী -১৩ যিয়া হযরত যায়েদ বিন খালিদ হতে বর্ণনা করেছেন।
(৩)১৪- ইমাম আহমদ বিশ্বস্ত সূত্রে হযরত উম্মুল মুমিনীন যায়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণনা করেছেন।
(৪)১৫- ইমাম আহমদ ১৬- ইবনে খিসমাহ ১৭-ইবনে জারীর উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণনা করেছেন।
(৫) ১৮- বায্’যার ১৯-সামউয়াহ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(৬) ২০-বায্’যার ২১- সামউয়াহ ২২- তাবরানী ২৩- আবু ইয়ালাহ ২৪-বাগাবী ২৫ -হাকীম সাইয়্যিদুনা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(৭) ২৬- ইমাম আহমদ ২৭ -বাগাভী ২৮- তাবরানী ২৯- আবূ নুয়াইম ৩০- বাওরারদী ৩১- ইবনুল কানে ৩২- যিয়া হযরত তামাম বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(৮) ৩৩- ইমাম আহমদ ৩৪-বাওয়ারদী তামাম ইবনে কাশাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(৯) ৩৫- উসমান বিন সাঈদ দারমী আর রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ এর মধ্যে ৩৬-দারু কুতনী আহাদীসুন নুযুল এর মধ্যে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ওয়াজহাহুল করীম হতে বর্ণনা করেছেন।
(১০) ৩৭-তাবরানী জামে কবীর এর মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(১১) ৩৮- তাবরানী জামে আওসাত এর মধ্যে ৩৯- খাতীব তাবরেযী হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(১২) ৪০- আবূ নুয়াইম রিসালায়ে সিওয়াক এর মধ্যে হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(১৩) ৪১- সাঈদ বিন মানসুর হযরত মাকহোল রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
(১৪) ৪২- আবূ বকর বিন আবু শায়বা হাসসান বিন আতিয়া হতে বর্ণনা করেছেন। (ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড: ১, পৃঃ ১৪৯-১৫২, রেযা একাডেমি মুম্বাই)
প্রকাশ থাকে যে, এটি কেবল একটি উদাহরণ নয় বরং আরও শত শত এই ধরণের উদাহরণ আছে যে, তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করার পরে একাধিক সূত্রে সেই হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং যত বর্ণনাকারী আছে সকলের নাম উল্লেখ করেছেন তাও আবার একাধিক কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে। এ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় যে, হাদীসের সূত্র সম্পর্কে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর জ্ঞান কোন পর্যায়ের ছিল!
সনদ বা সূত্র প্রসঙ্গে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনটি কিতাব রচনা করেছেন।
(১) আল ইজাযাতুর রাযাবিয়াহ (আরবী)
(২) আল ইজাযাতুল মাতানিয়্যাহ লি ওলামায়ে বি মাক্বাতা ওয়াল মাদীনাহ (আরবী)
(৩) আন নুরুল বাহাউ ফি আসানীদিল হাদীস ওয়া সালাসিলি আওলিয়াইল্লাহ (আরবী)
আসমাউর রেজালে পান্ডিত্য
এ বিষয়েও হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু গভীর জ্ঞানের মালিক ছিলেন। হানাফী মাযহাবে কেবল আরাফার ময়দানে জহর ও আসরের নামায এবং মুযদালফায় মাগরীব ও এশার নামায প্রকৃত অর্থে একই ওয়াক্তে পড়া জায়েয আছে। বাকি অন্য কোন জায়গায় এইভাবে দুই ওয়াক্তের নামায একই ওয়াক্তে আদায় করা জায়েয নেই।
কিন্তু নাম ধারী আহলে হাদীসদের মৌলবি মিঞা নাজির হোসেন দেহেলবী নিজের কিতাব "মেয়ারুল হক" এর মধ্যে এর বিপরীত লিখে হানাফিদের পক্ষে যে সমস্ত সহীহ হাদীস ছিল সেগুলোকে যঈফ বলে প্রত্যাখ্যান করার অপচেষ্টা করে।
কিন্তু হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার চুরি এবং ধোঁকাবাজিকে ধরে ফেলেন। এবং এ মাসআলায় বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে ১৩৪ পৃষ্ঠায় "হাজিযুল হারামাইন "নামে একটি কিতাব রচনা করেন। উক্ত কিতাব পাঠ করলে বুঝা যায় যে, আসমাউর রেজাল সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান কত গভীর ছিল! এ বিষয়ে মিঞা নাজির হুসাইন দেহেলবী হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে মকতবের ছাত্রের মতো মনে হয়। আজ পর্যন্ত কোন গায়ের মুকাল্লিদ উক্ত রচনার জবাব দিতে পারে নি। আর কেয়ামত অবধি দিতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
আসলে ইমাম নাসায়ী হযরত ইবনে নাফে হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি এক সফরে হযরত ইবনে উমরের সাথে ছিলেন। তাঁরা খুবই দ্রুত ভাবে সফর করছিলেন। সূর্য ডুবে যাওয়ার কাছাকাছি ছিল। তিনি মাগরিবের নামায আদায় করেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পর এশার নামায আদায় করেন।
উক্ত বর্ণনা হতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দুই নামাযকে একই ওয়াক্তের মধ্যে জমা করেননি বরং দৃশ্যত ও কার্যত ভাবে একত্রিত করেছিলেন। একথা মিঞা সাহেবের মতের বিরুদ্ধে ছিল। সে আপত্তি করে যে, ইমাম নাসায়ীর বর্ণনায় একজন বর্ণনাকারী আছে যার নাম ওয়ালীদ বিন কাসিম। সে বর্ণনা করতে গিয়ে ভুল করত। তাক্বরীব এর মধ্যে রয়েছে: صدوق یخطیئ
এ জন্য উক্ত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আপত্তির একাধিক ভাবে খন্ডন করেন। যেমন-
(১) মিঞা সাহেব বিকৃত সাধন করেছেন। অর্থাৎ ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি শুধু বর্ণনাকারীর নাম নিয়েছিলেন ওয়ালীদ। তার পিতার নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু মিঞা সাহেব চালাকি করতে গিয়ে পিতার নাম উল্লেখ করে নির্দিষ্ট করে দেন। অথচ নাসায়ীর বর্ণনায় ওয়ালীদ বিন কাসিম নয় বরং ওয়ালীদ বিন মুসলিম-কে বোঝানো হয়েছে। আর ওয়ালীদ বিন মুসলিম হল সহীহ মুসলিম শরীফের বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী।
(২) যদি সাময়িক সময়ের জন্য মেনে নেয়া যায় যে, তিনি ওয়ালীদ বিন কাসিম। তবুও তার বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। কেননা, ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। মুহাদ্দিসগণ তার বর্ণনা লেখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনে আদী বলেছেন যখন তিনি বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী হতে কোন রেওয়াত বর্ণনা করবেন তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
(৩) সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে এরকম কত বর্ণনাকারী আছে যাদের ব্যাপারে তাক্বরিবের মধ্যে বলা হয়েছে যে তারা صدوق یخطیئ। তাহলে আপনি কি কসম খেয়ে বসে আছেন যে বুখারী ও মুসলিমের ওই সমস্ত বর্ণনা গুলি প্রত্যাখ্যান করবেন?
এরপরে আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ বিষয়ে জ্ঞানের ভান্ডার দেখুন। হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হাশিয়ার মধ্যে বুখারী ও মুসলিম হতে ৩০ জন এমন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেন যাদের ব্যাপারে আসমাউর রেজালের কিতাবসমূহের মধ্যে اخطا অথবা کثیر الخطاء শব্দসমূহ ব্যবহার করা হয়েছে। এর পর বলেন এবার মিয়া সাহেব কি বুখারী ও মুসলিমের ৩০ জন বর্ণনাকারীর বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করবেন?
এইভাবে তিনি নামধারী আহলে হাদীসদের শাইখুল কুল মিঞা নাজীর হুসাইন দেহেলবীর পোষ্টমর্টেম করেন এবং প্রমাণ করেন যে, আরাফাহ ও মুযদালফা ব্যতিরেকে একই ওয়াক্তে দুই ওয়াক্তের নামায আদায় করা যাবে না।
এ বিষয়ে আরও একাধিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে কিন্তু এই একটি উদাহরণের উপর যথেষ্ট করা হলো।
ইলমে আসমাউর রেজালে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর অভিজ্ঞতা দেখে মুহাদ্দিসে আযম হিন্দ হযরত সৈয়দ শাহ মুহাম্মদ (কেছোছা শরীফ) রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
" ইলমে হাদীসে সবচেয়ে কঠিন ইলম হল ইলমে আসমাউর রেজাল। আলা হযরতের সামনে যখন কোন সনদ বা সূত্র পড়া হতো এবং বর্ণনা কারীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো তখনই তিনি প্রত্যেক বর্ণনাকারীর জারাহ ও তাদীল- এর যে শব্দ বলে দিতেন, তাক্বরীবুত তাহযীব ও তাযহীব নামক কিতাব উঠিয়ে দেখা হতো ঠিক সেই শব্দ মিলে যেতো। একেই বলা হয় মজবুত জ্ঞান। এবং ইলমের সাথে পরিপূর্ণ আকর্ষণ এবং অধ্যয়নের বিস্তৃতি।" (মাক্বালাতে এওমে রেযা, খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 41)
হুযূর আলা হযরত ইলমে আসমাউর রেজাল প্রসঙ্গে সাতটি কিতাবের হাশিয়া রচনা করেছেন।
(১) হাশিয়া তাক্বরীবুত তাহযীব (আরবী)
(২) হাশিয়া তাহযীবুত তাহযীব (আরবী)
(৩) হাশিয়া আল আসমায়ু ওয়াসা সিফাত (আরবী)
(৪) হাশিয়া আল এসাবাহ ফি মারিফাতিস সাহাবাহ (আরবী)
(৫) হাশিয়া তাযকিরাতুল হুফফায (আরবী)
(৬) হাশিয়া মিযানুল ইতিদাল (আরবী)
(৭) হাশিয়া খুলাসা তাহযীবুল কামাল (আরবী)
জারাহ ও তা'দীলে পান্ডিত্য
উসূলে জারাহ ও তাদীল (অর্থাৎ বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত নাকি অ-বিশ্বস্ত বা বর্ণনাকারী কোন ধরনের) এ সম্পর্কেও হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু গভীর জ্ঞানের মালিক ছিলেন।
হুযূর মুহাদ্দিসে আযম হিন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"জারাহ ও তা'দীল- এর যে শব্দ তিনি বলে দিতেন তাক্বরীবুত তাহযীব ও তাযহীব নামক কিতাব উঠিয়ে দেখা হতো ঠিক সেই শব্দ মিলে যেতো। ইয়াহয়া নামে হাজার হাজার হাদীসের বর্ণনাকারী রয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করলে ইয়াহয়ার যুগ, শিক্ষক এবং তার ছাত্রদের ব্যাপারেও বলে দিতেন। আলা হযরত এ সাবজেক্টের জনক ছিলেন। বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত নাকি অ-বিশ্বস্ত বলে দিতেন। একেই বলা হয় মজবুত জ্ঞান। এবং ইলমের সাথে পরিপূর্ণ আকর্ষণ এবং অধ্যায়ন করার বিস্তৃতি এবং খোদার প্রদানকৃত ইলমী কারামত। (মাহনামা তাজাল্লিয়াত, নাগপুর ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)
জারাহ ও তা'দীল- প্রসঙ্গে তিনি দুটি কিতাব রচনা করেছেন।
(১) হাশিয়া কাশফুল আহওয়াল ফি নাক্বদির রেজাল (আরবী)
(২) হাশিয়া আল এলালুল মুতানাহিয়্যহ (আরবী)
তাখরীজে হাদীসে পান্ডিত্য
এ বিষয়ে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর দক্ষতা এতই গভীর ছিল যে, তাঁকে এই জ্ঞানের জনক বলা যায়। এটা কেবল আমার দাবী নয় বরং বিশ্বস্ত ওলামায়ে কেরাম স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আল্লামা (আব্দুর) রহমান আলী খলীফা হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কী আপন কিতাব তাযকেরায়ে ওলামায়ে হিন্দ - এর মধ্যে বলেন:
"ইমাম আহমদ রেযার ইলমে তাখরীজে জবরদস্ত যোগ্যতা ছিল। এ বিষয়ে তিনি "আর রাওযুল বাহীজ ফি আদাবিত তাখরীজ " রচনা করেন। এ সাবজেক্টে যদি এর পূর্বে কেউ কিতাব রচনা না করে থাকে তাহলে, লেখক (আলা হযরত) কে এই সাবজেক্টের জনক বলা উচিত।" (তাযকেরায়ে ওলামায়ে হিন্দ, পৃঃ ১৭)
উসূলে তাখরীজে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর দক্ষতা সম্পর্কে ডক্টর মাহমুদ তাহান বলেন:
"বাকি রইল উসূলে তাখরীজ! তো আমার জ্ঞানে এ কথা নেই যে (আলা হযরত ব্যতীত) কেউ এ সমস্ত বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে বা কিতাব রচনা করেছে চাই পূর্বের যুগে বা উপস্থিত যুগে হোক ।" (উসূলুত তাখরীজ ওয়া দেরাসুতুল আসানীদ, পৃঃ ৫)
উসূলে তাখরীজে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর দক্ষতা কত গভীর ছিল তা এ থেকে অনুভব করতে পারেন যে, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের প্রসিদ্ধ কিতাব রদ্দুল মুখতার - এ আযানের অধ্যায়ে একটি হাদীস নকল করে বলেন قد اخرج السیوطی অর্থাৎ এ হাদীসটি ইমাম সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তাখরীজ করেছেন। আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উপর সতর্ক করতে গিয়ে বলেন যে, এটা اخرج শব্দটি ব্যবহার করার জায়গা নয়। কেননা, মুহাদ্দিসগণের নিকটে اخرج শব্দটি রেওয়ায়াত এর অর্থে ব্যবহার হয়, যার সাথে সনদ বা সূত্র থাকে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী আলাইহির রহমা সনদ বর্ণনা করেন না। সুতরাং উত্তম ছিল نقل ، ذکر, اورد , অথবা এরূপ মিলিত শব্দ ব্যবহার করা। (জাদ্দুল মুমতার, খন্ড: 3, পৃঃ 72)
আরও একটি উদাহরণ
উসূলে তাখরীজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনকারীদের এ কথা জেনে রাখতে হবে যে, কোন কিতাবের লেখক কে? অন্যথায় রেফারেন্স দিতে গিয়ে ভুল হতে পারে।
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি দুররে মুখতার এর টীকার মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর একটি বর্ণনা নকল করতে গিয়ে বলেন যে, উক্ত হাদীসটি বাযযার এবং তায়ালসীও বর্ণনা করেছেন। তাবরানী হিলয়াতুল আওলিয়া এর মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ র অধ্যায়ে নকল করেছেন। এ কথা মাক্বাসিদুল হাসানাহ এর মধ্যে বিদ্যমান। এই টিকা সম্পর্কে হুযূর আলা হযরত রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আল্লামা শামী রাদ্দুল মুহতার অনুরূপভাবে মাক্বাসিদুল হাসানাহ এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন অথচ হিলয়াতুল আউলিয়া হাফেয আবু নঈম -এর লিখিত কিতাব। হাফিয আবু কাসেমী সুলাইমান তাবরানী এর লিখিত কিতাব নয়। (তালিক্বাতে রেযা ১৬২)
তাখরীজ সম্পর্কে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু চারটি কিতাব রচনা করেছেন।
(১) আন নুজূমুস সাওয়াক্বিব ফি তাখরীজি আহাদিসিল কাওয়াকিব (আরবী)
(২) আল বাহসুল ফাহিস আন তুরুক্বে আহাদীসিল খাসাইস (আরবী)
(৩) আর রাওযুল বাহীজ ফি আদাবিত তাখরীজ (আরবী)
(৪) হাশিয়া নাসবুর রায়া লি তাখরীজি আহাদিসিল হেদায়া (আরবী)
হাদীসের সনদে দক্ষতা
বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা ওসী আহমদ সূরতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রশ্ন করেন যে,
صلاۃ تطوع او فریضۃ بعمامۃ تعدل خمساو عشرین صلاۃ بلا عمامۃ و جمعۃ بعمامۃ تعدل سبعین جمعۃ بلا عمامۃ
অর্থাৎ:- পাগড়ি সহ ফরয নামায হোক বা নফল নামায হোক, এক রাকাত নামায পাগড়িবিহীন ২৫ রাকাতের সমান; এবং পাগড়ি পরে এক জুমা , পাগড়ি ছাড়া সত্তর জুমা থেকেও উত্তম।
এ হাদীসটি কি বানোয়াট কিংবা যঈফ?
এর উত্তরে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
"নিশ্চিতরূপে এ হাদীসটি বানোয়াট নয়। এর পরে উক্ত হাদীসের তিনটি সনদ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন:
উক্ত হাদীসটি ইমাম আসাকির তারিখে দেমাশক, বনুন নাজার তারীখে বাগদাদ ও লিলাইমী মুসনাদে ফিরদাউস এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনটি সনদ সম্পর্কে গবেষণা মূলক আলোচনা করে বলেন এ হাদীসটি বানোয়াট নয়। এখানে
বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হলে ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ খন্ড ৩, পৃঃ ৭৮-৮০ অধ্যয়ন করুন।
ইলমে হাদীসে তাঁর লিখিত কিতাবসমূহ
হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু নিম্নলিখিত কিতাবসমূহের আরবী হাশীয়া লিখেছেন:
১. বুখারী শরীফ ২. মুসলিম শরীফ ৩. জামে তিরমিযী ৪. সুনানে নাসায়ী ৫. ইবনে মাজাহ ৬. জামায়ে সাগীর (ইমাম সূয়ুতি)৭. মুসনাদে ইমামে আযম, ৮. কিতাবুল হিজাজ ৯.কিতাবুল আসার ১০. মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ১১. শারহু মায়ানিল আসার ১২. সুনানু দারিমী ১৩. আল খাসায়িসুল কুবরা ১৪. কানযুল উমমাল ১৫. আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১৬. আল ক্বাওলুল বাদীয়ী ১৭. নাইলুল আওতার ১৮. মাক্বাসিদুল হাসানাহ ১৯. উমদাতুল ক্বারী ২০. ফাতহুল বারী ২১. ইরশাদুস সারী ২২. জাময়ুল ওয়াসায়িল ফি শারহিস শামায়িল ২৩. ফাইযুল ক্বাদীর শারহু জামিয়ী সাগীর ২৪. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ২৫. আত তায়াক্বুবাত আলাল মাওযুআত ২৬. আশিয়াতুল লুমআত (ফারসী) না ২৭. আললায়িল মাসনুয়া ফিল আহাদিসীল মাওযুয়া ২৮. যিলুল লালী ২৯. আল মাওযুআতুল কাবীর ইত্যাদি ৩০. ইমবাউল খাযযাক বি মাসালিকিন নিফাক (উর্দু ) ৩১. তালালুউল আফলাক বি জালালি আহাদীসি লাওলাক (উর্দু )৩২. সাময়ুন ওয়া তায়াতুন ফি আহাদীসিস শাফায়াত (উর্দু) ৩৩. আল আহাদীসুর রিওয়ায়্যাহ লি মাদহী আমীরিল মাওয়াবিয়াহ (উর্দু ) ৩৪. যাইলুল মুদ্দাআ লি আহসানিল ওয়িআ (উর্দু ) ৩৫. আসমাউল আরবায়ীন ফি শাফাআতি সাইয়্যিদিল মাহবুবীন (উর্দু)
৩৬.আল ক্বিয়ামুল মাসউদ বি তানক্বীহিল মাক্বামিল মাহমুদ
এ ছাড়াও লুগাতে হাদীসের উপর একটি কিতাব রচনা করেছেন।
শত শত হাদীস হতে দলীল প্রদান
আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কোন ফিক্বহী মাসআলায় গবেষণা করতে গিয়ে যেরূপ ভাবে ফিক্বহ শাস্ত্রের শত শত কিতাব হতে দলিল প্রদান করতেন ঠিক তদ্রুপ কোন আক্বীদাহ কিংবা আমলে নিজের দাবি প্রমাণ করতে গিয়ে হাদীস শরীফ থেকেও শতশত হাদীস প্রমাণ হিসেবে পেশ করতেন। নিম্নে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী সাহেবের খলিফা মাওলানা কারামাতুল্লাহ সাহেব দিল্লি হতে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা'আলাকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি হল এক ব্যক্তি দরুদে তাজ পাঠ করাকে শিরক ও বিদআত বলে মনে করে। কেননা, উক্ত দরুদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে دافع البلاء والوباء (অর্থাৎ: বালা-মুসীবত ও মহামারী রক্ষাকারী) বলা হয়েছে।
এ কথা শুনে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কলম চলতে আরম্ভ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যে বালা-মুসিবত ও মহামারী রক্ষাকারী এ প্রসঙ্গে হাদীস থেকে দলিল দিতে দিতে তিনি ৩০০ টি হাদীস উল্লেখ করেন। এবং প্রমাণ করেন যে, নিশ্চিত রূপে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতায় বালা-মুসিবত ও মহামারী দূর করতে পারেন। উক্ত কিতাবটি "আল- আমনু ওয়াল উলা" নামে পরিচিত।
হুযূর আলা হযরতকে আরেকটি প্রশ্ন করা হয় যে, কিছু লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত নবী ও রসূলগণ হতে উত্তম হওয়াকে অস্বীকার করে। এ প্রসঙ্গে সঠিক মত কি বিস্তারিত জানাবেন।
এ কথা শুনে হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
" আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত নবী ও রসূলগণ হতে উত্তম। এটা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। যে ব্যক্তি এ কথা অস্বীকার করবে সে পথভ্রষ্ট। এ প্রসঙ্গে তিনি ১০০ টি হাদিস পেশ করেন।উক্ত কিতাবের নাম হল "তাজাল্লিয়ুল ইয়াক্বীন"
নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী তারপরে কোন নতুন নবীর আবির্ভাব হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি ১০১ টি হাদীস পেশ করেন। উক্ত কিতাবের নাম হল "জাযাউহল্লাহি আদুউয়াহু বি এবায়িহি"
পিতা মাতার হক প্রসঙ্গে ৯০ টি হাদিস উল্লেখ করেন।
সম্মানার্থেও আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সাজদা করা হারাম। এ প্রসঙ্গে ৪০ টি হাদীস উল্লেখ করেন। কিতাবের নাম হল "আয-যুবদাতুয যাকিয়্যাহ লি তাহরীমি সুজুদিত তাহিয়্যাহ"
আল্লাহর অনুমতিতে নবীগণ আলিমগণ ও শহীদগণ সুপারিশ করতে পারবেন এ প্রসঙ্গে ৪০ টি হাদীস উল্লেখ করেন।
দাড়ি রাখার প্রয়োজনীয়তা ও ফজিলত সম্পর্কে ৫৬ টি হাদিস উল্লেখ করেন।
অনুরূপভাবে পুরুষ ও মহিলার জন্য কালো কলপ ব্যবহার করা হারাম এ প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে ১৬ টি হাদীস পেশ করেন।
এ ধরনের শতাধিক রচনা আছে। যেগুলোতে তিনি শত শত হাদীস দিয়ে নিজের দাবি প্রমাণ করেছেন। এ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয়েছে হাদীসে তার অত্যন্ত গভীর জ্ঞান ছিল। তার জলন্ত উদাহরণ হল মাহিরে রেজবীয়াত হযরত আল্লামা মাওলানা হানীফ খাঁন রেজবী মিসবাহী, আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর লিখিত কিতাবসমূহ হতে প্রায় সাড়ে চার হাজার (4500) টি হাদীস সংগ্রহ করে "জামিয়ুল আহাদীস" নামে এক বিখ্যাত কিতাব রচনা করে আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর একজন মস্ত বড় মুহাদ্দিস হওয়াকে প্রমাণ করেছেন।
আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস
চল্লিশ বছর ধরে হাদীসের শিক্ষা দানকারী শায়খুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা ওসী আহমদ সূরতী রহমতুল্লাহি আলাইহি হুযূর আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে "আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস" এর উপাধি দিয়েছেন।
আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস এর উপাধি কাকে দেয়া হয়? এ প্রসঙ্গে হাফিয এবনে আবী হাতিম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
یعنی فوق العلماء فی زمانہ
অর্থাৎ:- যে ব্যক্তি স্বীয় যুগের ইলমে হাদীসের সবচেয়ে বড় আলিম তাঁকে এ উপাধি প্রদান করা হয়।
(কিতাবুল জারাহ ওয়াত তাদীল, মুক্বাদ্দামা, খন্ড: 1, পৃঃ:126)
যে বলেছে সত্য বলেছে:
ملک سخن کی شاہی تم کو رضا مسلم جس سمت آ گئے ہیں سکے بھٹا دئیے ہیں۔
মুফতী গুলজার আলী মিসবাহী, উঃ দিনাজপুর
সিনিয়র শিক্ষক ও ইফতা বিভাগের সদস্য: এম. জি.এফ. মাদীনাতুল উলূম, খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা
Comments -