KeyOfIslam
Welcome To KeyOfIslam.com. KeyOfIslam is the platform to spread love and brotherhood among all people through the light of Prophet Mohammad(peace be upon him), the Final Messanger of Allah. Here you will get informations with precision.
Individual Articles
প্রশ্নোত্তর আকারে নামাজের গুরুত্বপুর্ণ মাসায়েল
প্রশ্নোত্তর আকারে নামাজের গুরুত্বপুর্ণ মাসায়েল ✍️ মহঃ হাশিমুদ্দিন মিসবাহী বর্তমান সমাজে বহু মানুষ ইসলামের বিধি বিধান সম্পর্কে অবগত নেই , তন্মধ্যে একটি বিষয় হলো নামাজ। অধিকাংশ মানুষ নামাজকে অবহেলার মধ্যে কাটিয়ে দেয় এবং নামাজের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও নামাজকে নিয়ে অলসতা করে। তাই আমি অধম মাসায়েলের বহু গ্রন্থ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় মাসআলা আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করার প্রয়াস করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বোঝার ও তার প্রতি আমল করার তৌফিক দান করুন এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক পথের পথিক হওয়ার তৌফিক দান করুন আমীন ।। (১) প্রশ্ন: ফরজ নামাজের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতেহার পর যদি সূরা মিলিয়ে দেয়, ভুলবশত হোক কিংবা ইচ্ছাকৃত সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি হবে না? উত্তর: ফরজ নামাজের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে যদি সুরা ফাতেহার পর ইচ্ছাকৃত কিংবা ভুলবশত কোন সূরা মিলিয়ে দেয়, তাহলে তার জন্য সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব নয়। কিন্তু ইমাম সাহেবকে ওই দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে কোন সূরা মিলানো উচিত নয়। (বাহারে শরীয়ত, প্রথম খন্ড, ৭১১) (২)প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে চুলকানোর বিধান কি? উত্তর: নামাজের মধ্যে এক রুকুনে তিনবার যদি চুলকানো হয় তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তিনবার বলতে এইভাবে যে কোন জায়গায় তিনবার হাত লাগিয়ে চুলকিয়ে ৩ বার সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু যদি কোন জায়গায় হাত রেখে কিছুক্ষণ ধরে চুলকায়, তাহলে সেটিকে একবারই চুলকানোর মধ্যে গণ্য করা হবে, তাতে নামাজ ভঙ্গ হবে না। নামাজ ভঙ্গ তখনই হবে যখন তিনবার হাত রেখে তিনবার সরিয়ে নিবে। (বাহারে শরীয়ত প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা নম্বর- ৬১৪) (৩) প্রশ্ন:- ইমাম সাহেবের প্রথম বৈঠকে "তাশাহহুদ" অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময়ের পরিমাণ থেকে দেরি হওয়ার কারণে যদি মুক্তাদী এই ভেবে লোকমা দেয় যে ইমাম সাহেব মনে হয় আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দরুদ শরীফ বা দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে লেগেছে এবং সেই লোকমা ইমাম সাহেব গ্রহণ করে নেয় তাহলে কি তাদের নামায হবে না ভঙ্গ হয়ে যাবে ? উত্তর:- উপরোক্ত জিজ্ঞাসা করা মাসআলাতে কারো নামাজ হবে না, সকলের নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তার কারণ হচ্ছে এই, যে লোকমার আসলতা হচ্ছে কথা বলা, এবং নামাজের মধ্যে কথা বললে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু নিজের নামাজকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য লোকমা দেওয়াকে জরুরত বা দরকার অনুযায়ী জায়েজ করা হয়েছে। সেই জন্যই জরুরত বা দরকারি জায়গায় লোক্বমা দিলে তার নামাজ সঠিক হবে নচেৎ ভঙ্গ হয়ে যাবে। উপরোক্ত জিজ্ঞাসা করা মাসআলাতে জরুরাত বা দরকার সাব্যস্ত হয় না সেই কারণে তাদের নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা ইমাম সাহেবের ব্যাপারে মুক্তাদির ধারণা ভুল হতে পারে, হতে পারে ইমাম সাহেব " আত্তাহিয়্যাতু " ধীরে ধীরে পাঠ করছে, যার কারণে বিলম্ব হচ্ছে , এখনো তার " আত্তাহিয়্যাতু " সমাপ্ত হয়নি। তাহলে তো এইটা লোকমা দেওয়ার স্থানই নয় সুতরাং এই অবস্থায় এই জায়গায় লোকমা দিলে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির লোকমা গ্রহণ করার কারণে ইমাম সাহেবেরও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এবং এটাও হতে পারে যে ইমাম সাহেব "আত্তাহিয়্যাতু" পরিসমাপ্ত করে দরুদ শরীফ বা দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে লেগেছে। সেটাও কখনোই লোকমা দেওয়ার স্থান নয়। কেননা যা হওয়ার ছিল সেটা তো হয়েই গেছে অর্থাৎ ওয়াজিব ত্যাগ হয়ে গেছে। এবার লোকমা দিলে কোন উপকার হবে না কেননা তার উপরে সাজদায়ে সাহু দেরি হওয়ার কারণে তো ওয়াজিব হয়েই গেছে। এই অবস্থাতেও লোকমা দেওয়ার জরুরাত বা দরকার সাব্যস্ত হয় না। সুতরাং ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানো পর্যন্ত মুক্তাদী গণেদের অপেক্ষা করার দরকার ছিল। যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরানো আরম্ভ করে দিত তখন মুক্তাদী লোকমা দিত। কেননা এইখানে যদি লোকমা না দেয় তাহলে নামাজটা ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামাজকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য এই জায়গায় লোকমা দেওয়া জায়েজ রয়েছে। সুতরাং ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানো পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, দেরি হয়ে যাওয়ার ধারণা করে লোকমা দিলে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এবং নামাজের বাইরের ব্যক্তির লোকমা গ্রহণ করার কারণে ইমাম সাহেবের নামাজও ভঙ্গ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, তৃতীয় খন্ড,পৃষ্ঠা-৪০৪) (৪)প্রশ্ন: নফল নামাজ জামাতের সহিত পড়া কি ? উত্তর: ইমাম সাহেব ব্যতীত চারজনের কম অর্থাৎ ৩ কিংবা ২ জন মুক্তাদীসহ জামাতের সহিত নফল নামাজ পড়াতে কোন অসুবিধা নেই কিন্তু তারাবীহ, সূর্যগ্রহণ এবং বৃষ্টি চাওয়ার জন্য যে নফল নামাজ পড়া হয় এই তিন প্রকারের নামাজ ব্যতীত যে কোন নফল নামাজ চারজন কিংবা চারজনের অধিক মুক্তাদিসহ জামাতের সহিত পড়া মাকরূহ তানজিহি। (ফতোয়া রাযাবিইয়া, সপ্তম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৪৩০) (৫)প্রশ্ন: ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠকে না বসে, ভুল করে যদি দাঁড়িয়ে যায় এবং মুক্তাদী লোকমা দিয়ে দেয়, তাহলে তার বিধান কি ? উত্তর: যদি ইমাম সাহেবের পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যাওয়ার আগেই মুক্তাদী লোকমা দেয় এবং ইমাম সাহেব নিয়ে নেয় তাহলে সকলের নামাজ হয়ে যাবে।তার ওপর সাজদা সাহুও ওয়াজিব নয়। কিন্তু যদি ইমাম সাহেবের পুরোপুরি সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর মুক্তাদী লোকমা দেয় তাহলে মুক্তাদীর নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এবং ইমাম সাহেব যদি তার লোকমান নিয়ে নেয়, তাহলে ইমাম সাহেব এবং সকল মুক্তাদীর নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে যদি ইমাম সাহেবের পুরোপুরি সোজা দাঁড়ানোর আগেই মুক্তাদি লোকমা দেয়, কিন্তু ইমাম সাহেব সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে ঘুরে আসে অর্থাৎ বৈঠক করে, তাহলে নামাজ তো হয়ে যাবে। কিন্তু বিধানের খেলাফ হওয়ার কারণে নামাজটি মাকরুহ হবে, এই জন্যই যে ইমাম সাহেবের সিধা দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর প্রথম বৈঠকের জন্য ঘুরে আসা জায়েজ নয় সুতরাং সেই নামাজ টি দ্বিতীয়বার পড়তে হবে । (ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২১৪) (৬)প্রশ্ন:- ইমাম সাহেব নামাজ পড়াচ্ছেন এক কাতার বা দুই কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবার যদি কোন ব্যক্তি আসে তাহলে কিভাবে দাঁড়াবে বা তার করণীয় কি? উত্তর:- উপরোক্ত জিজ্ঞাসা করার মাসআলাতে কাতার পরিপূর্ণ হওয়ার পরে আগত ব্যক্তি পিছনের কাতারে একাকী নামাজ আরম্ভ করবে না অথবা সামনের কাতার থেকেও কাউকে টেনে নিবে না বরং সে অপেক্ষা করবে, যদি কেউ চলে আসে তাহলে তার সঙ্গে পিছনের কাতারে দাঁড়াবে। কিন্তু যদি কেউ না আসে এমনকি ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যায় তাহলে সে ব্যক্তি সামনের কাতার থেকে কোন একজনকে টেনে নেবে যদি তাদের মধ্যে কেউ এই মসলার ব্যাপারে জ্ঞাত থাকে। কিন্তু যদি সামনের কাতারে এই মাসআলার ব্যাপারে জ্ঞাত কোন ব্যক্তি না থাকে তাহলে সে সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নেবে না বরং সে একাকী পেছনের কাতারে নামাজ আরম্ভ করবে। কেননা যদি এই মাসআলার ব্যাপারে অবগত না থাকা ব্যক্তিকে পিছন দিকে টানা হয় তাহলে হতে পারে সে নিজের নামাজ নষ্ট করে ফেলবে, কিংবা রেগে গিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিবে, এই জন্য এই অবস্থায় একাকী নামাজ আরম্ভ করলে কোন অসুবিধা নেই। এমনকি যদি সামনের কাতারে কেউ মাসআলার ব্যাপারে অবগত থাকে তা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি পিছনের কাতারে একাকী নামাজ পড়ে তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে। ফাতাওয়া শামির মধ্যে আছে: وان وجد في الصف فرجة سدها والا انتظر حتى يجيء آخر فيقفان خلفه وان لم يجد حتى ركع الامام يختار اعلم الناس بهذا المسالة فيجذبه ويقفان خلفه ولو لم يجد عالما يقف خلف الصف بحذاء الامام للضرورة ولو وقف منفردا بغير عذر تصح صلاته عندنا. অনুবাদ: এবং যদি কাতারের মধ্যে খালি জায়গা পাওয়া যায় তাহলে সেটাকে পূরণ করে দিতে হবে নতুবা কোন একজন ব্যক্তি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি কেউ চলে আসে তাহলে তার সঙ্গে পিছন কাতারে দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ না আসে এমনকি ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যায় । তাহলে এই মাসআলার ব্যাপারে অবগত ব্যক্তিকে সামনে থেকে টেনে পিছন কাতারে দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু যদি সামনের কাতারে এই মাসআলার ব্যাপারে অবগত কোন ব্যক্তি না থাকে তাহলে সামনে কাতার থেকে কাউকে টানা যাবে না বরং নিজেই একাকী পিছন কাতারে ইমাম সাহেবের সোজাসুজি দাঁড়িয়ে যাবে, জরুরত অনুযায়ী। এবং যদি বিনা কোন কারনে অর্থাৎ সামনের কাতারে এই মাসআলার ব্যাপারে অবগত ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও পেছন কাতারে একাকী দাঁড়িয়ে যায় তাহলেও তার নামাজ হয়ে যাবে হানাফী ওলামাদের নিকটে। (দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৩১০) বাহারে শরীয়তের মধ্যে রয়েছে: مقتدی کو صف کے پیچھے تنہا کھڑا ہونا مکروہ ہے جبکہ صف میں جگہ موجود ہو اور اگر صف میں جگہ نہ ہو تو حرج نہیں اور اگر کسی کو صف میں سے کھینچ لے اور اس کے ساتھ کھڑا ہو تو یہ بہتر ہے مگر یہ خیال رہے کہ جس کو کھینچے وہ اس مسئلے سے واقف ہو کہ کہیں اس کے کھینچنے سے اپنی نماز نہ توڑ دے۔ ( প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা নম্বর ৬৩৩) অনুবাদ=কাতারের পিছনে মুক্তাদির একাকী দাঁড়ানো মাকরুহ যখন কাতারে জায়গার অবকাশ থাকবে আর যদি জায়গা খালি না থাকে তো কোন অসুবিধা নেই এবং যদি কাউকে সামনের কাতারে থেকে টেনে তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় তো এটা উত্তমপন্থা। কিন্তু এমতবস্থায় এই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যে যাকে টানবে সে যেন ওই মাসআলা সম্পর্কে অবগত থাকে যাতে সেই ব্যক্তি টানার কারণে নিজের নামাজ ভঙ্গ না করে নেয়। বিঃ দ্রঃ:ওই মাসআলার ব্যাপারে অবগত হওয়ার মানে হচ্ছে এই যে ,ওই ব্যক্তি যেন জানে যে যদি কাতার পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং কোন একজন ব্যক্তি আসে তাহলে সে সামনে থেকে কাউকে পিছন দিকে টেনে নেবে এবং তাকে পিছন দিকে চলে আসতে হবে ,নামাজ ভঙ্গ করবে না এবং এটাও যেন জানে যে ওকে শরীয়তের আদেশ পালন করার নিয়তে পিছন দিকে আসতে হয় ,কোন মানুষের আদেশ অনুযায়ী পিছনে আসা যাবেনা অর্থাৎ পিছনে আসার সময় এই নিয়ত করবে যে এইটা শরীয়তের বিধান। কেননা যদি সেই ব্যক্তি এই নিয়তে পিছন দিকে আসে যে অমুক ব্যক্তি আমাকে টানলো তার কথা অনুযায়ী এলাম তাহলে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। বাহারে শরীয়তের মধ্যে রয়েছে: اگر وہ مقتدی کے کہنے سے امام اگے بڑھا یا مقتدی پیچھے ہٹا اس نیت سے کہ یہ کہتا ہے اس کی مانوں، تو نماز فاسد ہو جائے گی، اور حکم شرع بجا لانے کے لیے ہو تو کچھ حرج نہیں۔ অনুবাদ: যদি সে মুক্তাদির কথা অনুযায়ী ইমাম আগের দিকে চলে যায় কিংবা মুক্তাদী পিছন দিকে চলে আসে, সেই ব্যক্তির কথা মানার নিয়তে, তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি শরিয়তের আদেশ পালন করার নিয়তে পিছনে আসে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। ( বাহারে শরিয়ত, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা নং: 586) এবং আল্লাহ তা'আলা বেশি ভাল জানেন। (৭)প্রশ্নঃ কেউ যদি প্রথম রাকাতে একটি সূরা পাঠ করে, তারপর একই সূরা ভুলবশত দ্বিতীয় রাকাতে প্রারম্ভ করে দেয় ,তাহলে তার করণীয় কী? উত্তর: একই সূরা প্রারম্ভ করে দিলে সেই সুরাটিই পাঠ করতে হবে। জেনে বুঝে এমনটি করা মাকরূহ তানযীহী। হ্যাঁ যদি অন্য কোন সূরা মুখস্থ না থাকে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুখতার) (৮)প্রশ্ন: নামাজরত অবস্থায় ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল স্থানচ্যুত হলে কি নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে? উত্তর: নামাজ ভঙ্গ হবে না এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রসিদ্ধ রয়েছে যে নামাজরত অবস্থায় ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল স্থানচ্যুত হলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে,এটা ভুল। (রদ্দুল মুখতার) (৯)প্রশ্নঃ যদি কোন ব্যক্তি দোয়ায়ে কুনুত পাঠ করতে ভুলে যায় এবং রুকুর সময় স্মরণে আসে তাহলে তার করণীয় কী? উত্তরঃ যদি সে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করতে ভুলে যায় এবং রুকুর সময় স্মরণ আসে তাহলে সে ক্বিয়াম অর্থাৎ দন্ডায়মান হবে না বা রুকুর সময় পাঠ করবে না, বরং শেষে সাহু সিজদা করতে হবে।(বাহারে শরীয়ত) (১০)প্রশ্নঃ যদি ফরজের প্রথম দুই রাকাতের মধ্যে যে কোনো এক রাকাতে সূরা পাঠ করতে ভুলে যায় এবং রুকুর পরে স্মরণে আসে তাহলে তার কী করা উচিত? উত্তরঃ- যদি ফরজের প্রথম দুই রাকাতের মধ্যে যে কোনো এক রাকাতে সূরা পাঠ করতে ভুলে যায় তাহলে তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সুরা পাঠ করতে হবে এবং সাহু সিজদা করতে হবে। এবং এটা যদি মাগরিবের ফরজ নামাজের দুই রাকাতের ক্ষেত্রে হয় তাহলে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সুরা পাঠ করতে হবে এবং শেষে সাহু সিজদা করতে হবে এবং এটা যদি সুন্নাত এবং নফল নামাজের ক্ষেত্রে হয় এবং সাজদা করার পরে স্মরণে আসে তাহলে শেষে সাহু সিজদায় যথেষ্ট ।(বাহারে শরীয়ত, দুররে মুখতার, রদ্দুল মুখতার) (১১) প্রশ্ন:- যদি কোন ব্যক্তি রুকু, সাজদা অথবা বৈঠকে ভুলবশত কোরআন পাঠ করে দেয়, তাহলে তার হুকুম কী? উত্তর:- এ ক্ষেত্রে সাহু সিজদা আবশ্যক।(বাহারে শরীয়ত,ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ ) (১২) প্রশ্ন :- যদি ফরজের শেষ বৈঠক না করে ভুলবশত দন্ডায়মান হয়ে যায় তাহলে করণীয় কী? উত্তর :- যতক্ষণ না পর্যন্ত ঐ রাকাতের সাজদা না করবে ফিরে আসতে হবে এবং সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাতে হবে। আর যদি ঐ রাকাতের সাজদা করে নেয় তাহলে সেই ফরজটি নফলে পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং এক রাকাত আরও যোগ করে নামাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।(বাহারে শরীয়ত) (১৩) প্রশ্ন:- যদি সুন্নাত এবং নফলের বৈঠক না করে ভুলবশত দণ্ডায়মান হয়ে যায় তাহলে করণীয় কী ? উত্তর:- সুন্নাত এবং নফলের প্রত্যেক বৈঠক শেষ বৈঠক অর্থাৎ ফরজ হিসাবে পরিগণিত হয়। যদি শেষ বৈঠক না করে ভুলবশত দণ্ডায়মান হয়ে যায় তাহলে যতক্ষণ না পর্যন্ত সাজদা না করবে ফিরে আসতে হবে এবং সাহু সিজদা করে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। (বাহারে শরীয়ত) (১৪) প্রশ্ন:- প্রথম রাকাতে যে সূরা পাঠ করেছে দ্বিতীয় রাকাতে তার ওপরের সূরাটি পাঠ করলে অর্থাৎ প্রথম রাকাতে قل يا ايها الكافرون (ক্বুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন) এবং দ্বিতীয় রাকাতে انا اعطيناك الكوثر(ইন্না আ’ত্বয়নাকাল কাওসার) পাঠ করলে তার হুকুম কী? উত্তর:- প্রথম রাকাতে যে সূরা পাঠ করেছে দ্বিতীয় রাকাতে তার ওপরের সূরা অথবা আয়াত পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী এবং গুনাহ হবে। হ্যাঁ যদি ভুলবশত হয় তাহলে গুনাহও হবে না এবং সাহু সিজদারও প্রয়োজন নেই। (ফাতওয়া শামী) (১৫)প্রশ্ন:- প্রথম রাকাতে الم تر كيف (আলম তারা কাইফা) এবং দ্বিতীয় রাকাতে لايلاف (লিইলাফি) বাদ দিয়ে ارأيت الذي(আরআয়তাল্লাজি) পাঠ করলে তার হুকুম কী? উত্তর:- দ্বিতীয় রাকাতে ছোট সূরা বাদ দিয়ে পাঠ করা নিষেধ রয়েছে। যদি ভুলবশত আরম্ভ করে দেয় তাহলে সেই সূরাটি পাঠ করতে হবে অন্য সূরা পাঠ করার অনুমতি নেই অর্থাৎ সেই সূরাটি সম্পূর্ণ করতে হবে। (দূররে মুখতার) (১৬) প্রশ্ন:- জামাত প্রারম্ভ হওয়ার পরে কোন সুন্নাত আরম্ভ করা জায়েজ কি জায়েজ নয়? উত্তর:- জামাত প্রারম্ভ হওয়ার পরে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত কোন সুন্নত আরম্ভ করা জায়েজ নয়। যদি ভরসা থাকে যে সুন্নাত পড়ার পরে জামাত পেয়ে যাবে যদিও বা বৈঠকেই পেয়ে যায় তাহলে সুন্নাত পড়ে নিতে হবে কিন্তু কাতারের সোজা দণ্ডায়মান হয়ে পড়া জায়েজ নয় বরং কাতার থেকে দূরে পড়তে হবে।(বাহারে শরীয়ত) (১৭) প্রশ্ন:- যদি শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুতে রসুলুহ পর্যন্ত পড়ার পরে ভুলবশত দণ্ডায়মান হয়ে যায়, তাহলে করণীয় কী? উত্তর:- যদি শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুতে রসুলুহ পর্যন্ত পড়ার পরে ভুলবশত দন্ডায়মান হয়ে যায় তাহলে যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই রাকাতের সাজদা করবে, ফিরে আসতে হবে। এবং দ্বিতীয় বার আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা বিহীন সাহু সিজদা করতে হবে ‌। তারপরে তাশাহুদ ইত্যাদি পাঠ করে সালাম ফেরাতে হবে। (বাহারে শরীয়ত) (১৮) প্রশ্ন:- প্রথম বৈঠকে ভুলবশত দরুদ শরীফ পাঠ করলে, তার হুকুম কী? উত্তর:- যদি اللهم صل على محمد অথবা اللهم صل على سيدنا পর্যন্ত পাঠ করে নেয় অথবা তার বেশি তাহলে সাহু সিজদা করা আবশ্যক হ্যাঁ যদি তার চেয়ে কম পাঠ করে থাকে তাহলে সাহু সিজদা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটা শুধু ফরজ, বিতর এবং যোহর ও জুময়ার প্রথম চার রাকাত সুন্নাতের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু অন্যান্য সুন্নাত এবং নফলে প্রথম বৈঠকেই দরুদ শরীফ পড়ার হুকুম রয়েছে।(বাহারে শরীয়ত) (১৯) প্রশ্ন:- যদি সাহু সিজদা ওয়াজিব না থাকে এবং করে নেয়, তাহলে তার করণীয় কী? উত্তর:- যদি সাহু সিজদা ওয়াজিব না থাকে এবং কোন ব্যাক্তি একাই নামাজ আদায় করছিল এবং সাহু সিজদা করে নিল তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে। এবং যদি ইমাম এরকম করে তাহলে ইমাম এবং সেই মুক্তাদী যে ইমামের সঙ্গে প্রথম রাকাত থেকে শেষ রাকাত পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল তার নামাজ হয়ে যাবে কিন্তু মাসবুক্ব অর্থাৎ সেই মুক্তাদী যে দুই এক রাকাত হওয়ার পরে জামাতে সংযুক্ত হয়েছে সেই মুক্তাদির নামাজ হবে না।(ফাতওয়া কাযী খাঁ) (২০)প্রশ্ন:- চশমা পরে নামায পড়া যাবে কি না? উত্তর:- চশমার ফ্রেম যদি সোনা, চাঁদি, লোহা ও পিতল ইত্যাদির না হয় বরং কাঁচের অথবা প্লাস্টিকের হয়, আর সাজদা করার সময় নাকের হাড় মুসল্লাতে ভালোভাবে জমে যায়, তাহলে এরূপ চশমা পরে নামায পড়া যাবে। আ'লা হযরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:- "চশমার ফ্রেম যদি সোনা বা চাঁদির হয় তাহলে এরূপ চশমা লাগিয়ে নামায পড়া নাজায়েয। আর (যদি সে ইমাম হয় তাহলে) তার ও মুক্তাদিগণ সকলের নামায কঠিন মাকরূহ (তাহরীমী)।" (ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ ৭/৩১৯) হুযূর ফাক্বীহে মিল্লাত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে:- "যদি চশমা সাজদা করতে গিয়ে নাকের হাড়কে মুসাল্লাতে জমতে বাধা না দেয়, তাহলে নামায নিঃসন্দেহে হয়ে যাবে। আর যদি বাধা দেয় তাহলে মাকরূহ তাহরীমী। অর্থাৎ পুনরায় নামায পড়া ওয়াজিব বা অনিবার্য।" (ফাতাওয়া ফাইযুর রাসূল ১/৩৭৫) হুযূর সাদরুশ শারীআহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:- "চশমা লাগিয়ে নামায পড়া জায়েয। প্রয়োজন হোক বা না হোক।" (ফাতাওয়া আমজাদীয়া ১/১৩৭)

Comments -

Most Read Articles