ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ হতে দুটি ফাতওয়ার অনুবাদ
ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ হতে দুটি ফাতওয়ার অনুবাদ
অনুবাদক: মুফতী আনজারুল ইসলাম মিসবাহী, গোয়াস, মুর্শিদাবাদ
(১) প্রশ্ন: যাইদের বর্ণনা অনুযায়ী সে একজন সৈয়দ ও আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের অনুসারী। ঈদের নামাযও যাইদ (এক ব্যক্তির নাম) পড়িয়েছে। পরবর্তীতে জানা গেল যে, যাইদ একজন রাফেযী এবং সে নামায হাত ছেড়ে পড়ে আর ওযুও রাফেযীদের পদ্ধতিতে করে। এ অবস্থাতে আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের অনুসারীদের পক্ষে তাকে ইমাম নির্বাচন করা জায়েয কি-না ? যাইদের বাড়ির খাবার খাওয়া,আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের অনুসারীদের সন্তানদের যাইদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা কি জায়েয কি-না? যাইদের দ্বারা কি গাওসে পাকের ফাতেহা করানো জায়েয হবে কি-না?
উত্তর: রাফেযীদের পিছনে নামায পড়া মানে নিজের নামাযকে নষ্ট করা অর্থাৎ কেউ যদি কোন রাফেযীর পিছনে নামায পড়ে, তাহলে তার নামায কোনভাবেই শুদ্ধ হবে না। পূর্বের ন্যায় ফরয তার উপর অবশিষ্ট থাকবে। রাফেযী কে ইমাম নির্বাচন করা মানে কোন হিন্দু অথবা খ্রীস্টানকে ইমাম নির্বাচন করা। বর্তমান সময়ের রাফেযীরা সাধারণত মুরতাদ হয়ে থাকে। তাদের বাড়ির খাবার খাওয়া, তাদের সঙ্গে খাওয়া অথবা তাদের সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখা গুনাহের কাজ। যে ব্যক্তি এমনটা করবে সে শাস্তির যোগ্য হবে। নিজের সন্তানদেরকে তাদের কাছে শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হারাম এবং পথভ্রষ্টতা। মুসলমানদের উপর ফরয রয়েছে যে, তারা যেন রাফেযীদেরকে নিজেদের নিকট থেকে আলাদা ও দূরে রাখে। তাদের দ্বারা গাওস পাকের ফাতিহা পড়ানো কঠিন বোকামি। শুধু এটাই নয় বরং সব ধরনের ফাতিহা তাদের দ্বারা যেন কখনো পড়ানো না হয়। কেননা, ফাতিহা করা হয় শুধুমাত্র (যার নামে ফাতিহা করা হবে তার কাছে) নেকী পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কিন্তু রাফিযীদের ফাতেহা পড়াতে (যাদের নামে ফাতেহা করা হয় তাদের কাছে) কোন ধরনের নেকী পৌঁছায় না। কেননা, রাফেযীরা দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদিকে অস্বীকার করার কারণে মুরতাদ বলে বিবেচিত।
আল্লাহ্ তা'লা যেন সুন্নীদের দৃষ্টি খুলে দেয় এবং এটারও তৌফিক দেয় যেন তারা পথভ্রষ্টদের থেকে দূরে থাকে।
প্রিয় নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে হুকুম দিয়েছে;
"اياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم"
অনুবাদ: পথভ্রষ্টদের কাছ থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকে নিজেদের কাছ থেকে দূরে রাখো। এমনটা যেন না হয় যে,তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেয় এবং ফিতনার মধ্যে পতিত করে দেয়।।
(মুসলিম শরীফ,হাদিস;৭)
পথভ্রষ্ট ব্যক্তি বিশেষ করে রাফেযীরা নিজের মাযহাবকে খুব গোপন করে থাকে। তাদের কথাবার্তা কখনো বিশ্বাস করা উচিত নয়। যেখানে লাভ ও ক্ষতি কিছুই নেই, সেখানে যদি তারা সুন্নীর ছদ্মবেশে থাকতে পারে, তাহলে যেখানে তাদের দুই পয়সা লাভ রয়েছে, সেখানে তাদের সুন্নীর ছদ্মবেশে থাকতে কোন যায় আসে না।
{{ ফাতাওয়া রাযাবিয়াহ, খন্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ৩২২-৩২৩}}
(২) প্রশ্ন: যদি কেউ তাযিয়া তৈরি করে অথবা তাযিয়ার উপরে (ফাতিহার জন্য) কোন কিছু (শীরনী ইত্যাদি)রাখে, মারসিয়া পড়ে অথবা মারসিয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, বাজনা বাজায় কিংবা কাউকে দিয়ে বাজিয়ে নেয় অথবা সেখানে অংশগ্রহণ করে, শীরনী বিতরণ করে কিংবা খায় অথবা কাউকে খাওয়ায় বা নির্দিষ্ট তারিখে সাদকাহ্-খায়রাত করে। ইসলামের মধ্যে মুহাররম মাসের সাত, নয়, দশ তারিখে এ সমস্ত কর্ম গুলি কি জায়েয রয়েছে?
উত্তর: তারিখ নির্দিষ্ট করাকে যদি ওয়াজিব মনে না করা হয়, তাহলে নির্দিষ্ট তারিখে শীরনী বিতরণ করা, খাদ্য খাওয়ানো,ফাতিহা-নিয়ায করানো শরীয়তে জায়েয তথা বৈধ।
প্রিয় নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"من استطاع منكم ان ينفع اخاه فلينفعه"
অনুবাদ: তোমাদের মধ্যে যে কেউ নিজের (মুসলিম) ভাই-এর উপকার করতে সক্ষম, সে যেন তার উপকার করে।
(মুসলিম শরীফ,হাদিস; ২১৯৯)
প্রশ্নে উল্লেখিত অবশিষ্ট বিষয়গুলি যেমন- তাযিয়া, বাজনা বাজানো, মারসিয়া (বিলাপ ও শোকগাঁথা) পড়া ও মারসিয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এবং তাযিয়ার উপরে (ফাতিহার জন্য) কোন কিছু (শীরনী ইত্যাদি) রাখা এ সমস্ত বিষয়গুলি নাজায়েয ও বিদআত এবং গুনাহের কাজ। (সংক্ষিপ্ত)
{{ ফাতাওয়া রাযাবিয়াহ, খন্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ৫০৩}}
(৩) প্রশ্ন: ওলামায়ে দ্বীন ও শরিয়ত বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কি বলেন; শরীয়তের মধ্যে তাযিয়া বানানোর বিধান কি রয়েছে? এবং সেই তাযিয়ার উপরে (ফাতিহার জন্য) শীরনী ইত্যাদি রাখা কেমন? তাযিয়া প্রস্তুতকারী এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারীর জন্য শরীয়তে কি বিধান রয়েছে? যে ব্যক্তি তাযিয়াকে নাজায়েয বলে, তাকে কাফির এবং মুরতাদ মনে করে তার পিছনে নামায না পড়া কেমন? তাযিয়া প্রস্তুতকারীর পিছনে নামায পড়ার বিধান কী রয়েছে?
উওর: প্রচলিত তাযিয়া নাজায়েয তথা অবৈধ এবং বিদআত। তাযিয়া বানানো গুনাহের কাজ এবং তার ওপর (ফাতিহার জন্য) শীরনী ইত্যাদি রাখা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না। তাযিয়ার সম্মান করা বিদআত এবং মূর্খতা। যে ব্যক্তি তাযিয়াকে নাজায়েয বলে, তাকে কাফের ও মুরতাদ বলা কঠিন বড় গুনাহের কাজ। যে ব্যক্তি এমনটা বলবে, তাকে নতুন করে ইসলাম নিয়ে আসা এবং বিয়ে করা উচিত। শুধু মাত্র এই (তাযিয়াকে নাজায়েয বলার) কারণে তার পিছনে নামায না পড়া একটি ভ্রান্ত কাজ। কিন্তু যদি কোন ওহাবীকে কাফির ও মুরতাদ বলে, তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই এবং ওহাবীর পিছনে নামাযও বৈধ নয়। যে ব্যক্তি তাযিয়া প্রস্তুত করাকে জায়েয মনে করে অথবা তাযিয়া প্রস্তুত করাতে খ্যাতি অর্জন করেছে যদিও বা সে তাযিয়া বানানোকে বৈধ মনে না করে, তাহলে তার পিছনে নামায না পড়া উচিত। যদি পড়ে তাহলে নামায হয়ে যাবে। কিন্তু তাকে ইমাম নির্বাচন করা নিষেধ রয়েছে।
(ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড:২৪, পৃষ্ঠা: ৪৯৯, ৫০০)
Comments -