ঈলমে গায়েব প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তি ও তার জবাব
ঈলমে গায়েব প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তি ও তার জবাব
মওলানা আশিকুর রহমান মিসবাহী
প্রিয় পাঠক আমি পূর্বের মাজমুনে কুরআন ও হাদীসের আলোকে এটা প্রমাণ করেছি যে ,নবী ও রসূলগণ আল্লাহ প্রদত্ত ঈলমে গায়েবের সংবাদদাতা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে ,বর্তমানে কিছু দলের আবির্ভাব ঘটেছে যাদেরকে শতাধিক দলীল দেওয়ার পরেও আপত্তি করতেই থাকে। তাই আমি অধম ইচ্ছা করলাম যে, তাদের কিছু আপত্তি তুলে ধরে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি যাতে আমাদের যুবসাধারণের সন্দেহ দূরীভূত হয় এবং তাদের ঈমান তাজা হয়।
আপত্তি নম্বর 1: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন
وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَاۤ إِلَّا هُوَۚ
অনুবাদ=এবং তারই নিকট রয়েছে গায়েবের ভান্ডারের চাবিসমূহ সেগুলো একমাত্র তিনিই জানেন। এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে ,আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানেনা।(সুরা আনয়াম আয়াত নম্বর ৫৯)
জবাব: যদি এই আয়াতের ভিত্তিতে এই আক্বীদা পোষণ করা হয় যে ,আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানেনা তাহলে ঐ সমস্ত আয়াত দ্বারা কি উদ্দ্যেশ্য হবে যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে নবী ও রসূলগণ গায়েব জানেন। নিম্নে কিছু আয়াত তুলে ধরা হচ্ছে
وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِیُطۡلِعَكُمۡ عَلَى ٱلۡغَیۡبِ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ یَجۡتَبِی مِن رُّسُلِهِۦ مَن یَشَاۤءُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۚ
অনুবাদ=এবং আল্লাহর এ শান নয় হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন। হ্যাঁ, আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান।(সূরা আলে ইমরান আয়াত নম্বর ১৭৯)
অপর এক জায়গায় আল্লাহ ঘোষণা করেন
عَـٰلِمُ ٱلۡغَیۡبِ فَلَا یُظۡهِرُ عَلَىٰ غَیۡبِهِۦۤ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ٱرۡتَضَىٰ مِن رَّسُولࣲ
অনুবাদ=অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের উপর কাউকেও ক্ষমতাবান করেন না-আপন মনোনীত রসূলগণ ব্যতীত। (সূরা জ্বীন আয়াত নম্বর 26 ও 27)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন
وَمَا هُوَ عَلَى ٱلۡغَیۡبِ بِضَنِینࣲ
অনুবাদ=এবং এ নবী অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন।(সূরা তাকবীর আয়াত নম্বর ২৪)
এখন আপত্তিকারীদের নিকট প্রশ্ন ছুড়ে দিবো যে, আপনারা কি কুরআনের সমস্ত আয়াতের উপর ঈমান আনয়ন করেছেন না ইহুদীদের মতো কিছু আয়াতকে মানেন আর কিছু আয়াতকে অস্বীকার করেন?
আমরা প্রকৃত মোমিনের মত সমস্ত আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করি সেই জন্য যে সমস্ত আয়াত থেকে এটা বোঝা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানেনা ওই সমস্ত আয়াত গুলোকে গায়েবে যাতি অর্থাৎ সত্তাগত গায়েবের উপর অর্পিত করি আর যে সমস্ত আয়াত থেকে এটা বোঝা যায় যে ,নবী ও রসূলগণও গায়েব জানেন সেগুলোকে প্রদত্তগত গায়েবের উপর অর্পিত করি।
আপত্তি নম্বর ২:
أنَّ النبيَّ ﷺ لَقِيَهُ في بَعْضِ طَرِيقِ المَدِينَةِ وهو جُنُبٌ، فانْخَنَسْتُ منه، فَذَهَبَ فاغْتَسَلَ ثُمَّ جاءَ، فَقالَ: أيْنَ كُنْتَ يا أبا هُرَيْرَةَ قالَ: كُنْتُ جُنُبًا، فَكَرِهْتُ أنْ أُجالِسَكَ وأَنا على غيرِ طَهارَةٍ، فَقالَ: سُبْحانَ اللَّهِ، إنَّ المُسْلِمَ لا يَنْجُسُ.
অনুবাদ= হযরত আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ তাঁর সাথে মদ্বীনার কোন এক পথে নবী (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখা হলো। আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) তখন জানাবাত অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে অপবিত্র মনে করে সরে পড়লাম। পরে আবূ হুরায়রা ( রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু ) গোসল করে এলেন। পুনরায় সাক্ষাত হলে আল্লাহর রাসূল (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ ওহে আবূ হুরাইরা! কোথায় ছিলে? আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) বললেনঃ আমি জানাবাতের অবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ্! মু’মিন অপবিত্র হয় না।
এই হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,নবী মুস্তফা গায়েব জানতেন না যদি উনি অদৃশ্যের সংবাদদাতা হতেন তো কখনও হযরত আবূ হুরায়রা কে জিজ্ঞাসা করতেন না যে তুমি কোথায় ছিলে?
জবাব=আপত্তি থেকে আপত্তিকারীর মূর্খতা ও অজ্ঞতা প্রকাশ পাচ্ছে কেননা জিজ্ঞাসা করা কখনো না জানার দলীল হয়না ।যদি তাই হয় তাহলে আপত্তিকারী কি এটা বলার সাহসিকতা করবে যে ,মহান আল্লাহ তায়ালাও গায়েব জানেন না। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালাও জিজ্ঞাসা করেছেন যেমন নিম্নে উল্লেখ করা হলো
وَمَا تِلۡكَ بِیَمِینِكَ یَـٰمُوسَىٰ
অনুবাদ=এবং হে মূসা! তোমার ডান হাতে এটা কি?
একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন নবী মুস্তফার জিজ্ঞাসার পিছনে কিছু হিকমত নিহীত থাকে সেটি বোঝা যার তার পক্ষে সম্ভবপর নয়। এই হাদীসটিতে নবী মুস্তফা যদি হযরত আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞাসা না করতেন তাহলে আমরা শরীয়তের এই বিধান টি সম্পর্কে অবগত হতে পারতাম না যে ,একজন মোমিন বাহ্যিক ভাবে নাপাক হয়না।
আপত্তি নম্বর ৩=বুখারী শরীফের মধ্যে এসেছে হযরত মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন
وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ كَذَبَ
অনুবাদ=আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানেন, সে মিথ্যা বলল(বুখারী শরীফ হাদীস নং ৭৩৮০)
এই হাদীস থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় যে ,হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার আক্বীদা এটাই ছিল যে, নবী মুস্তফা গায়েব জানতেন না
জবাব=যদি এই হাদীসের ভিত্তিতে এটা বলা হয় যে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকার আক্বীদা এটা ছিল যে নবী গায়েব জানতেন না তাহলে কি আপত্তিকারীরা এটাও বলার সাহসিকতা করবে যে মা আয়েশা একাধিক আয়াতের অস্বীকারকারী ছিলেন? কেননা প্রথম আপত্তির জবাবে আমি একাধিক আয়াত তুলে ধরেছি যেগুলো থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে নবী ও রসূলগণ গায়েব জানেন।
দ্বিতীয়ত মা আয়েশা সিদ্দীকা নিজেই এমন হাদীস বর্ণনা করেছেন যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে নবী মুস্তফা গায়েব জানতেন। তাই আপত্তিকারীদের বলবো শিরকী বেদাতী চশমা খুলে ঈমানী চশমা পরিধান করে হাদীস গুলো দেখুন আর হিম্মত থাকলে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করুন। নিম্নে হাদীস উল্লেখ করা হলো
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ بَعْضَ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ قُلْنَ لِلنَّبِيِّ أَيُّنَا أَسْرَعُ بِكَ لُحُوقًا قَالَ أَطْوَلُكُنَّ يَدًا فَأَخَذُوا قَصَبَةً يَذْرَعُونَهَا فَكَانَتْ سَوْدَةُ أَطْوَلَهُنَّ يَدًا فَعَلِمْنَا بَعْدُ أَنَّمَا كَانَتْ طُولَ يَدِهَا الصَّدَقَةُ وَكَانَتْ أَسْرَعَنَا لُحُوقًا بِهِ وَكَانَتْ تُحِبُّ الصَّدَقَةَ
অনুবাদ=হযরত আয়েশাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত যে, কোন নবী সহধর্মিনী নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেনঃ আমাদের মধ্য হতে সবার পূর্বে (মৃত্যুর পর) আপনার সাথে কে মিলিত হবে? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে লম্বা। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির মাধ্যমে হাত মেপে দেখতে লাগলেন। হযরত সওদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার) হাত সকলের হাতের চেয়ে লম্বা বলে প্রমাণিত হল। পরে [সবার আগে হযরত যায়নাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর মৃত্যু হলে] আমরা বুঝলাম হাতের দীর্ঘতার অর্থ দানশীলতা। তিনি [ হযরত যায়নাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)] আমাদের মধ্যে সবার আগে তাঁর (স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) সাথে মিলিত হন এবং তিনি দান করতে ভালবাসতেন। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ১৪২০)
আরেকটি হাদীস লক্ষ্য করুন যেটিও হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত
فَقَالَتْ سَارَّنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّهُ يُقْبَضُ فِيْ وَجَعِهِ الَّذِيْ تُوُفِّيَ فِيْهِ فَبَكَيْتُ ثُمَّ سَارَّنِيْ فَأَخْبَرَنِيْ أَنِّيْ أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِهِ أَتْبَعُهُ فَضَحِكْتُ
অনুবাদ=তিনি (হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)বললেন, নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জানালেন যে, তিনি এ রোগে মারা যাবেন, এতে আমি ক্রন্দন করি। অতঃপর তিনি চুপেচুপে বললেন, আমি তাঁর পরিবারবর্গের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর সঙ্গে মিলিত হব, তখন আমি হাঁসি (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৭১৬)
এখন আমি আপত্তিকারীদের নিকট প্রশ্ন ছুড়ে দিবো যে এই দুটি হাদীস থেকে নবীর ঈলমে গায়েব প্রমাণিত হয়না?
এবার যদি আপত্তিকারীরা বলে যে আমাদের উল্লেখ করা হাদীসের তাহলে ব্যাখ্যা কি হবে যেখানে মা আয়েশা সিদ্দীকা বলেছেন যে বলবে নবী গায়েব জানেন সে মিথ্যা বললো?
তো উত্তরে বলবো যে ওটা দ্বারা মা আয়েশা সিদ্দীকা সত্তাগত গায়েব কে উদ্দেশ্য নিয়েছেন অর্থাৎ যে বলবে যে নবী মুস্তফা আল্লার জানিয়ে না দেওয়াতে গায়েব জানেন সে মিথ্যা বললো। এই ব্যাখ্যা না করলে মা আয়েশা সিদ্দীকার উপর বিভিন্ন আপত্তি আসবে যেটির জবাব কোন মায়ের সন্তান দিতে পারবেনা।
আপত্তি নম্বর ৪: নবী মুস্তফা গায়েবের সংবাদদাতা হলে বিষ মিশ্রিত মাংস খেতেন না যেটি উনাকে এক ইহুদী মহিলা খায়বারের যুদ্ধের সময় দিয়েছিলেন।
জবাব=যে হাদীসে বিষ মিশ্রিত মাংস খাওয়ার ঘটনা উল্লেখিত আছে পুরো হাদীস পাঠ করার পর কোন মোমিন কোনদিন নবীর ঈলমে গায়েবের উপর আপত্তি করতে পারেনা কেননা নবী মুস্তফা যখন ওই ইহুদী মহিলা কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তুমি এই মাংসে বিষ কেন মিশ্রিত করেছ তো ওই মহিলা টি উত্তরে বলেছিল
وإنْ كُنْتَ نَبِيًّا لَمْ يَضُرَّكَ.
যদি আপনি সত্যিকারের নবী হয়ে থাকেন তো এটি আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা তো নবী মুস্তফা বিষ মিশ্রিত মাংস খেয়ে নিজের নবুয়তের সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন।
আপত্তি নম্বর ৫: মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার হার হারিয়ে গিয়েছিল এবং সেটি একটি উঁটের নিচে ছিল কিন্তু নবী বলতে পারেনি যদি নবী গায়েব জানতেন তো বলেননি কেন?
জবাব=এই আপত্তি থেকে আপত্তিকারীর অজ্ঞতা প্রকাশ পাচ্ছে কেননা না বলা না জানার দলীল নয়। আল্লাহ তায়ালাও তো অনেক সময় সেই প্রসঙ্গে কিছু বলেননি তাহলে কি আপত্তিকারী বলবে যে আল্লাহ তায়ালাও জানতেন না যে হারটি কোথায় ছিল?
কিছু কিছু জিনিস না বলার পিছনে কিছু হিকমত নিহীত থাকে এটিও তারই মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কেননা যখন নবী মুস্তফা বলতে দেরী করলেন তো এমন সময় নামাজের সময় ঘনিয়ে এসেছিল তো সাহাবায়ে কেরাম রা পানি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়েছিল।(বুখারী শরীফ কিতাবুত তাফসীর সুরা নিসা )
প্রিয় পাঠক চিন্তা করুন যদি নবী সঙ্গে সঙ্গে হারের কথাটি বলে দিতেন তো আমরা তায়াম্মুমের বিধান থেকে বঞ্চিত থাকতাম কি না? মা আয়েশা সিদ্দীকার একটি হার হারিয়ে যাওয়ার কারণে কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতে মুহাম্মদীরা তায়াম্মুম এর মত বিধান পেল এবং মা আয়েশা সিদ্দীকার মর্যাদাও চিনে গেল।
আপত্তি নম্বর ৬: হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার উপর ব্যভিচারের অপবাদ লাগানো হয়েছিল তখন নবী মুস্তফা নীরব এবং চিন্তিত ছিলেন যদি নবী গায়েব জানতেন তো নীরব ও চিন্তিত হওয়ার কি দরকার ছিল? এবং নিজ স্ত্রীর পবিত্রতা সম্পর্কে কিছু বলেননি কেন?
জবাব=পূর্বেই বলেছি না বলা না জানার দলীল নয় যদি তাই হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালাও তো অনেকদিন পর্যন্ত কিছু বলেননি তাহলে কি আল্লাহ তায়ালাও জানতেন না?
যে জবাব তোমাদের সেই জবাব আমাদের।
দ্বিতীয়ত ওই হাদীসেই নবী বলেছেন
مَا عَلِمْتُ عَلَى أَهْلِي إِلاَّ خَيْرًا
অনুবাদ=আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে ভালো ব্যতীত মন্দ কিছুই জানি না।
এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে মা আয়েশা সিদ্দীকা প্রসঙ্গে নবী কখনোই খারাপ ধারণা পোষণ করেন নি, আর করবেনই বা কিভাবে কেননা খারাপ ধারণা পোষণ করা গুনাহের কাজ আর নবীগণ গুনাহ থেকে পবিত্র হন।
থাকলো এই প্রশ্ন যে তাহলে নবী মুস্তফা পবিত্রতার কথা ঘোষণা কেন করেননি তো এর উত্তরে আমরা বলবো যে নবী যদি বলেও দিতেন যে আমার স্ত্রী এমন কাজ করেনি তোমরা মিথ্যা অপবাদ লাগাচ্ছ তখন মুনাফিকরা বলার সুযোগ পেত যে দেখো নিজের স্ত্রী বলে এইরকম কথা বলে বাঁচাবার চেষ্টা করছে তাই নবী আমার নীরব ছিলেন এবং আয়াত নাযিল হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। আল্লার প্রতি নবী মুস্তফার পুরো আস্থা ও বিশ্বাস ছিল যে আল্লাহ কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন কেননা যখন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের উপর মিথ্যা অপবাদ লাগানো হয়েছিল তখন দুগ্ধ পানকারী একজন বাচ্চা দ্বারা আল্লাহ অপবাদ কে দুর করেছিলেন তেমনই হযরত মারিয়ামের উপর অপবাদ লাগানো হয়েছিল তখনও একজন দুগ্ধ পানকারী দ্বারা অপবাদ দুর করা হয়েছিল। আল্লার প্রতি নবীর এই আস্থা বিফলে যায়নি আল্লাহ হযরত আয়েশা সিদ্দীকার উপর লাগানো মিথ্যা অপবাদের জবাবে আয়াত নাযিল করে দিয়েছিলেন এখান থেকে মা আয়েশা সিদ্দীকার মান মর্যাদাও বোঝা যায়।
নবী যদি জানতেন উনার স্ত্রী পবিত্র তো চিন্তিত
কেন ছিলেন?
এটার উত্তরে আমরা বলবো যে সম্মানীয় ব্যক্তির উপরে যখন অপবাদ লাগানো হয় তো তিনারা চিন্তিত এই কারণে হয়ে যান যে, যে কাজ আমি করিনি আজকে মানুষের মাঝে সেটির প্রচার করা হচ্ছে অর্থাৎ নিজে জানছে যে আমি এই দোষ করিনি তবুও মানুষ ভুল কথা ছড়িয়ে দিচ্ছে।সেই জন্য চিন্তিত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী যে, আমার স্ত্রী যে কাজ করেনি সেই কাজের প্রচার করছে মুনাফিকরা
Comments -