আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কি রসূলের সন্নত পরিবর্তন করে ছিলেন শিয়াদের এই আপত্তির বাস্তবতা কি?
আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কি রসূলের সন্নত পরিবর্তন করে ছিলেন শিয়াদের এই আপত্তির বাস্তবতা কি? (দ্বিতীয় পর্ব)
সৈয়দ শাহ গোলাম ইস্তেরশাদ আলী আল কাদেরী মারকাজী
(খিদিরপুর দরবার শরীফ কলকাতা )
শিয়াদের তৃতীয় অভিযোগঃ
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ الدَّسْتُوَائِيُّ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ ابْنِ الْمُسَيِّبِ،قَالَ: «أَوَّلُ مَنْ أَحْدَثَ الْأَذَانَ فِي الْعِيدَيْنِ مُعَاوِيَةُ»
কাতাদাহ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন ইবনে মুসাইয়াব বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি দুই ঈদে আজানের প্রচলন করেছিলেন তিনি হলেন মুয়াবিয়া।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,হাদিস নং - ৩৫৭৫৫)
উক্ত বর্ণনা দ্বারা শিয়ারা হযরত আমিরে মুয়াবিয়া কে ঈদের নামাজে আজান দেওয়ার প্রবর্তক হিসাবে অভিযুক্ত করে৷ এর দ্বারাও শিয়ারা তাঁকে সুন্নতপরিবর্তনকারী রুপে চিহ্নিত করে।
আমাদের জবাবঃ- শিয়াদের জঘন্য একটা বদ অভ্যাস আছে তারা নিজেদের মতের যেটা পায় সেটা নিয়ে লাফালাফি করে এবং তার বিপরীতে যাই থাক না কেন এড়িয়ে যায়। তাদের দাবী অনুযায়ী আমীর মুয়াবিয়া যদি ঈদের নামাজে আজান দেওয়া চালু করেছিলেন তাহলে নিম্নোক্ত বর্ণনা গুলির কি জবাব দেবে তারা?
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا أَبِي عَاصِمُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِي قِلَابَةَ، قَالَ: «أَوَّلُ مَنْ أَحْدَثَ الْأَذَانَ فِي الْعِيدَيْنِ ابْنُ الزُّبَيْرِ»
আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছে ওয়াকি'ই তিনি বলেন আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু আ'সিম বিন সুলাইমান তিনি বলেন আবু কিলাবাহ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তিসর্বপ্রথম দুই ঈদে আজানের প্রচলন করেন তিনি হলেন ইবনে জুবাইর।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদিস নং- ৩৫৭৫৬)
এই বিষয়ে আরো বর্ণনা রয়েছেঃ-
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ مُحَمَّدٍ، قَالَ: " أَوَّلُ مَنْ أَحْدَثَ الْأَذَانَ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى مَرْوَانُ ,
আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন আব্দুল ওয়াহাব বিন আতা।তিনি বলেন ইবনে আওন বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন মুহম্মাদ ইবনে সিরিন হইতে বর্ণিত তিনি বলেন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও কুরবানীতে আজান প্রচলন ঘটায় সে হলো মারওয়ান৷
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদিস নং-৩৫৯৯৫)
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا أَبُو كُدَيْنَةَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْيَحْيَى بْنِ وَثَّابٍ، قَالَ: «أَوَّلُ مَنْ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فِي الْعِيدَيْنِ وَأَذَّنَ فِيهِمَا زِيَادٌ الَّذِي يُقَالُ لَهُ ابْنُ أَبِي سُفْيَانَ»
সর্বপ্রথম যে দুই ঈদে মিম্বারের উপর বসে আজান শুরুকরেছিল সে হল জিয়াদ যাকে ইবনে আবি সুফিয়ান বলে ডাকা হতো।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,হাদিস নং - ৩৫৮৪৪)
আসলে শিয়ারা চিরকালই হাদিস শাস্ত্রে চরমভাবে দুর্বল । তারা হয় তো জানেই না একই প্রসঙ্গে ভিন্ন মতনের একাধিক বর্ণনা থাকলে মানগত দিক দিয়ে যেটা সবচেয়ে শক্তিশালী তা গৃহীত হয় আর তুলনামূলক যেটা দুর্বল তা বর্জিত হয়৷তাদের জেনে নেওয়া উচিৎ এ প্রসঙ্গে চারটি বর্ণনার মধ্যে আমীর মুয়াবিয়ার সম্পর্কে বর্ণনাটি তুলনামূলক দুর্বল কেণ না উক্ত বর্ণনার রাবি( হাদিস বর্ণনাকারী ) তালিকায় ইমাম কাতাদা একজন মুদাল্লিস রাবি ৷
যেমন ইমাম ইবনে হাজার তার বিষয়ে বলেনঃ
قتادة بن دعامة السدوسي البصري صاحب أنس بن مالك رضي اللهتعالى عنه كان حافظ عصره وهو مشهور بالتدليس وصفه بهاالنسائي وغيره.
কাতাদাহ বিন দা'আমাহ আল সুদুসি আল বাসারী আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুর সাথি ছিলেন তিনি তার যুগের হাফিজ ও ছিলেন এবং ইমাম নাসায়ী আরো অনেকে লিখেছেন তিনি তাদলিস করায় প্রসিদ্ধ ছিলেন।
( ইমাম ইবনে হাজার, তাবকাতুল মুদাল্লিসিনি, পৃষ্ঠা-৪৩ )
বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত শু'বাহ বলেনঃ
أخبرني أحمد بن محمد العنبري، حدثنا عثمان بن سعيد الدارمي،حدثنا يعقوب بن إبراهيم الدورقي، حدثنا عبد الرحمن بن مهدي قال: سمعت شعبة يقول: كنت أنظر إلى فم قتادة فإذا قال حدثنا كتبت وإذا لم يقل لم أكتب
আব্দুর রাহমান বিন মাহদি বলেন আমি সু'বা কে বলতেশুনেছি তিনি বলেন আমি কাতাদার বলার ধরণের দিকে নজর রাখতাম। আর যখন তিনি হাদ্দাসানা বলতেন তখন লিখে নিতাম আর যখন বলতেন না তখন লিখতাম না।
(ইমাম ইবনে আবু হাতিম রাজি, জারাহ ওয়া তাদিল, পৃষ্ঠা-১৬৯-১৭০)
حدثنا نصر بن مرزوق قال: ثنا أسد بن موسى قال: سمعت شعبةيقول: كان همتي من الدنيا شفتي قتادة فإذا قال: " سمعت " كتبت،وإذا قال: " قال " تركت،
আসাদ বিন মুসা বলেন শু'বাহ কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন আমাকে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশী চিন্তিত করত কাতাদার দুটো ঠোঁট (বলার ধরণ) যখন তিনি বলতেন সামি'তু তখন লিখতাম এবং যখন বলতেন ক্বলা তখন ছেড়ে দিতাম।
(মুসনাদে আবু আওয়ানা, পৃষ্ঠা- ৩৮৯)
حدثني أحمد بن إبراهيم الدورقي، قال: حدثنا أبو داود، قال شعبة: كنت اتفطن إلى فم قتادة إذا حدث، فإذا حدث بما قد سمع، قال: حدثنا سعيد بن المسيب، وحدثنا أنس، وحدثنا الحسن، وحدثنامطرف، وإذا حدث بما لم يسمع، قال: حدث سليمان بن يسار وحدثأبو قلابة
আবু দাউদ বলেন শু'বা কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন যখন কাতাদাহ বর্ণনা করতেন তখন তার বলার ধরণের প্রতি সতর্ক থাকতাম। আর যখন বর্ণিত ঘটনা শুনে থাকতেন তখন বলতেন হাদ্দাসানা সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব কিংবা হাদ্দাসানা আনাস কিংবা বলতেন হাদাসানা হাসান কিংবা বলতেন হাদ্দাসানা মুতারিফ। আর যখন বর্ণিত ঘটনা সরাসরি শ্রবণ করতেন না তখন বলতেন বর্ণনা করেছেন সুলাইমান বিন ইয়াসার কিংবা বলতেন আবু কুলাবাহ।
( মুসনাদে ইবনে জা'দ, পৃষ্ঠা নং- ৫৬৫ )
ইমাম তাবারি তার সম্পর্কে বলেনঃ
أن قتادة عندهم من أهل التدليس معروف عندهم بذلك وغير جائزعندهم أن يحتج من رواية المدلس وإن كان عدلا إلا بما قال فيهحدثنا أو سمعت وما أشبه ذلك مما يدل على سماعه
কাতাদা তাদের নিকট তাদলিস কারিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেনএবং তিনি সেভাবেই তাদের নিকট পরিচিত ছিলেন। আর তাদের নিকট মুদাল্লিস রাবিদের বর্ণনা গ্রহন করা যায়েজ নয়।আর যদি তিনি আদিল হয়ে থাকেন সেই বিষয়ে ক্বলা বলা ছাড়া হাদ্দাসানা কিংবা সামি'তু কিংবা ইহার অনুরুপ যেটাপ্রমাণ করে যে তিনি সরাসরি শুনেছেন
(ইমাম তাবারি, তাহজিবুল আসার, পৃষ্ঠা- ২৯০)
ইবনে আব্দুল বার বলেনঃ
وقتادة إذا لم يقل: «سمعت»، وخولف في نقله؛ فلا تقوم به حجة؛ لأنهيدلس كثيرا عمن لم يسمع منه،
যখন কাতাদা সামি'তু বলতেন না তখন তার উদ্ধৃতির বিষয়ে বিরোধিতা করা হত। এবং তার দ্বারা দলিল সাব্যস্ত করাও হতনা। কেণ না তিনি প্রচুর তাদলিস করতেন এমন ব্যক্তি হতে যার থেকে তিনি শোনেননি।
(ইবনে আব্দুল বার, আত তামহিদ লিমা ফি মুয়াত্তা মিনালমা'আনি ওয়াল আসানিদ পৃষ্ঠা- ৩০৭)
আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট যে হজরত কাতাদা একজন সিক্বাহ রাবি তবে তার মধ্যে তাদলিস করার প্রবণতা ছিল। ফলে মুহাদ্দিসগন তার আন শব্দ দ্বারা বর্ণনা কে সমালোচনা ও বর্জন করেছেন। এবং অন্য রাবিদের তুলনায় তিনি সমালোচিত তাই অধিক বিশ্বস্ত রাবিদের বর্ণনা এক্ষেত্রে গৃহীত হবে। তাছাড়া অভিযোগের ক্ষেত্রের খবরে ওয়াহিদ হুজ্জত( দলিল )নয়।সে যার বিরুদ্ধে হোক। একজন সাধারণ মুসলমানের উপর ও খবরে ওয়াহিদ দ্বারা অভিযোগ সাব্যস্ত করা যায় না। তাইএক্ষেত্রে সাঈদ ইবনে জুবাইরের মত কারোর উপর উক্তঅভিযোগ দেওয়া যাবে না।
তৃতীয়ত,শিয়ারা হজরত কাতাদার বর্ণনা নিয়ে আমীরয়মুয়াবিয়ার ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করে। অথচ আমীর মুয়াবিয়া সম্পর্কে সেই কাতাদারই অভিমত জানলে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যাবে। কারণ আমীর মুয়াবিয়া সম্পর্কে তিনিবলেনঃ
أخبرنا محمد بن علي قال ثنا أبو بكر الأثرم قال ثنا عمر بن جبلة قالثنا محمد ابن مروان عن يونس عن قتادة قال لو أصبحتم في مثلعمل معاوية لقال أكثركم هذا المهدي
আমাকে খবর দিয়েছেন মুহাম্মাদ বিন আলী তিনি বলেনয আমাকে বর্ণনা করেছেন আবু বকর আল আসরাম তিনি বলেন উমারবিন জাবলাত বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন আমাকে বর্ণনা করেছেন ইবনে মারওয়ান তিনি বলেন ইউনুস হইতে বর্ণিত তিনি বলেন হজরতে কাতাদা মত পোষণ করে বর্ণনা করেন যদি তোমাদের আমল আমীরে মুয়াবিয়ার মত হয়ে যেত তাহলে তোমাদের বেশীরভাগকেই লোকে বলত এরা হল মাহদি
(সুন্নতে খাল্লাল,বর্ণনা নং - ৬৬৮)
তার নিকট আমীর মুয়াবিয়া সম্পর্কিত এসব অভিযোগ আসার পরেও তাঁকে মাহদি রুপে অবিহিত করছেন। কারণ তিনি তো আর শিয়াদের মত হাদিস শাস্ত্রে গন্ডমুর্খ নন! তিনিএকজন বিশাল হাদিস শাস্ত্রবিদ এবং একজন প্রসিদ্ধ তাবেঈ ও এবং একজন বিশাল মাপের তাফসির কারকও৷
চতুর্থ অভিযোগঃ
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ:قَالَ ابْنُ شِهَابٍ أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلاَةِمُعَاوِيَةُ.
ইবনে জুরাইজ বর্ণনা করে বলেন তারিক ইবনে শিহাব বলেছেন সর্বপ্রথম যে (ঈদের) নামাজের আগে খুতবার প্রচলন করে তিনি হলেন মুয়াবিয়া
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং- ৫৬৪৬)
উক্ত হাদিস দ্বারা শিয়ারা আমীর মুয়াবিয়া কে ঈদের নামাজের আগে খুতবা প্রদানকারী হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে যা রসূলের সুন্নত বিরোধী আমল। তাদের মতে তিনি ঈদের নামাজের পূর্বে খুতবা দিতেন যা রসূলের সুন্নত সেটাকে পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন।
আমাদের জবাবঃ প্রথমত, যুক্তি কিংবা তর্কের খাতিরে ( বাস্তবে নয়) মেনে নিলাম তিনি ঈদের নামাজের পুর্বে খুতবার প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু নিশ্চয়তা কি যে, ওয়াজিব খুতবার প্রচলন ঈদের নামাজের পুর্বে করেছিলেন? তারা কিভাবে নিশ্চিত হল, এখানে নসিহত মূলক বা ঈদের আরকান কিংবা তার প্রক্রিয়া বিষয়ক কোন খুতবা বা বক্তব্য নয়? তারা কি আপত্তির নেশায়অন্ধ হয়ে যায় যে, খুতবা একটি আরবী শব্দ যার অভিধানিক অর্থ বক্তব্য বা বক্তৃতা হয়। ঈদের নামাজের প্রক্রিয়া বিষয়ক কিংবা তার সঙ্গে সম্পৃক্ত নসিহত বিষয়ক বক্তব্যের প্রচলনের সম্ভাবনা থাকতেই পারে । যা আজও মসজিদে মসজিদে চালু আছে। যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তাদের অনেকের মসজিদে আজও ঈদের নামাজের পুর্বে এইধরণের খুতবা বা বক্তব্য দেওয়া হয় । তিনি যে তেমনই কোন বক্তব্যের প্রচলন করেছিলেন তার প্রমাণ স্বরূপ নিম্নের হাদিসটিই যথেষ্টঃ
حَدَّثَنَا الزُّهْرِيّ عَبْد اللَّهِ بْنُ مُحَمَّد حَدَّثَنَا سُفْيَان عَنْ يَحْيَى سَمِعَ يُوسُف قَالَ: " كَانَتِ الصَّلاةُ فِي الْعِيدَيْنِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ، فَلَمَّا كَانَ عُثْمَان كَثُرَ النَّاس عَلَى رَحْلِهِ فَأَرَادَ أَنْ يجىء النَّاس فَبَدَأَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلاةِ "
আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল জুহরি বর্ণনা করেন আমাকে সুফিয়ান বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন ইয়াহিয়া হইতে বর্ণিত তিনি ইউসুফের কাছ থেকে শুনেছেন তিনি বলেন দুই ঈদে শুধু খুতবার আগে নামাজ পড়া হত। কিন্ত যখন হজরতে উসমানের ইন্তেকালে লোক সংখ্যা বাড়তে লাগল তখন আমীরে মুয়াবিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন নামাজের আগে বক্তব্য (خُطْبَةِ)দ্বারা মানুষজন জমা করা যায়।
(ইমাম আবু উরওয়া আল হাররানি, কিতাবুল আওয়েল, বর্ণনানং১৪৬)
দ্বিতীয়ত,যদিও উক্ত বর্ণনা দ্বারা শিয়াদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়না আর না তার দ্বারা অভিযোগ করার সুযোগ আছে তবে হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালা সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়। শিয়ারা দ্বিচারী স্বভাবের হতেই পারে তারা মতলব ভেদে নীতি পাল্টাতেই পারে। কিন্তু হাদিসেরৎউসুল বা নীতিমালা কারোর নীতি পালটানোর উপর নির্ভরনয়, সর্বক্ষেত্রে একিভাবে প্রযোজ্য হয়। বর্ণনাটি সনদের দিক থেকে একটি ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা এবং রাবি তালিকায় ইবনে জুরেইজ নামক রাবিটি মুদাল্লিস রাবি।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ইবনে জুরাইজ সম্পর্কে বলেনঃ
قال أبي وبعض هذه الأحاديث التي كان يرسلها ابن جريج أحاديث موضوعة كان ابن جريج لا يبالي من أين يعني قوله أخبرت وحدثت عن فلان
এসব হাদীসগুলোর কতিপয় হাদীসকে ইবনু যুরায়েজ মুরসাল হিসাবে উল্লেখ করতেন। সেগুলো বানোয়াট। তিনি কোথা থেকে গ্রহণ করছেন তার পরওয়া করতেন না।
(আল ইলাল আহমাদ বিন হাম্বাল খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৫৫১)
ইমাম দারকুতনি ইবনে জুরাইজ সম্পর্কে বলেনঃ
قال الدارقطني : " شر التدليس تدليس ابن جريج، فإنه قبيح التدليس، لا يدلس إلا فيما سمعه من مجروح
ইমাম হাকিম বলেন, ইমাম দারকুতনি বলেছেন মন্দতর তাদলিস হল ইবনে জুরাইজের তাদলিস।কেণ না তিনি জঘন্যভাবে তাদলিস করতেন । তিনি তাদলিস করতেন একমাত্র ঐ ব্যক্তি হতে যিনি দোষণীয়।
(সাওয়ালাতে হাকিম, পৃষ্ঠা-১৮৪)
ইবনে হিব্বান বলেনঃ
عبد الملك بن عبد العزيز بن جريج مولى أمية بن خالد بن أسيدالقرشي له كنيتان أبو الوليد وأبو خالد من فقهاء أهل مكة وقرائهمممن جمع وصنف وحفظ وذاكر مات سنة خمسين ومائة وكان يدلس
আবদ আল-মালিক ইবনে আবদ আল-আজিজ ইবনে জুরায়জ, উমাইয়া ইবনে খালিদ ইবনে আসীদ আল-কুরাশি, যার দুটি কুন্নিয়াত রয়েছে: আবু আল-ওয়ালিদ এবং আবুখালিদ,তিনি মক্কার একজন ফকিহ, তাদের একজন কারীযেগুলি তিনি সংগ্রহ করেছেন, সংকলন করেছেন, মুখস্থকরেছেন এবং মনে রেখেছেন। তিনি একশত পঞ্চাশ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন এবং তিনি তাদলিস করতেন।
(ইবনে হিব্বান,মাশাহিরে উলমায়ে আমস্বারি পৃষ্ঠা-২৩০)
ইমাম ইরাকি বলেনঃ
عبد الملك بن عبد العزيز بن جريج الإمام المشهور مكثر من التدليس
আব্দুল মালিক বিন আব্দুল আজিজ বিন জুরাইজ একজন প্রসিদ্ধ ইমাম, প্রচুর পরিমানে তাদলিস করতেন।
(ইবনে ইরাকি,কেতাবঃ- আল মুদাল্লিসিন,পৃষ্ঠা-৬৯)
তৃতীয়ত,ইবনে শিহাব জোহরি আমীর মুয়াবিয়ার শাসনকাল পাননি। কেণ না তার জন্মই ৫৮ হিজরিতে যেখানে আমীর মুয়াবিয়ার ইন্তেকাল ৬০ হিজরিতে। তাঁর ইন্তেকালের সময় ইমাম জোহরি ২ বছরের শিশু মাত্র। সুতরাং রাবি তালিকায় মুদাল্লিস রাবি এবং বিচ্ছিন্নতার কারণে বর্ণনাটি দলিলের যোগ্য থাকে না।
এ প্রসঙ্গে নিজেদের দাবীর সমর্থনে শিয়ারা আরো একটি বর্ণনা পেশ করেঃ-
قَالَ أَخْبَرَنَا إبْرَاهِيمُ قَالَ حَدَّثَنِي دَاوُد بْنُ الْحُصَيْنِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْخِطْمِيِّ «أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَوَعُثْمَانَ كَانُوا يَبْتَدِئُونَ بِالصَّلَاةِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ حَتَّى قَدِمَ مُعَاوِيَةُ فَقَدَّمَ الْخُطْبَةَ
আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ খাতমি হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হজরতে আবুবকর, উমার ও উসমান ( রাদিআল্লাহু আনহুম) খুতবারআগে নামাজ শুরু করতেন। এমনকি আমীরে মুয়াবিয়া এলেন, এসে শুরুতে খুতবা দিতেন।
(আল উম, অধ্যায়- স্বালাতুল ঈদাইন, পৃষ্ঠা- ২৬৯)
বর্ণনা দ্বারা ও শিয়াদের একি আপত্তি যে, আমীর মুয়াবিয়া ঈদের দিনে নামাজের পুর্বে খুতবার প্রথা চালু করেছিলেন।যেখানে আল্লাহর নবী ( সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার খুলাফাদের ( রাদিল্লাহুম আজমাইন) সুন্নত ছিল সেটাপরিবর্তন করে ফেলেছিলেন।
আমাদের জবাবঃ প্রথমত,সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদের ভাষ্যে কোথাও নেই, আমীর মুয়াবিয়া সুন্নত পরিবর্তন করেছেন। বরং এ দাবী শুধু শিয়াদের তাও অনুমান করে।আর অনুমান দ্বারা সম্ভবনা তৈরি করলে একটি নির্দিষ্ট সম্ভবনা থাকতে হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আসলে শিয়াদেরএকটা দোষ আছে কোন বর্ণনা নিয়ে এসে তার থেকে কোন সম্ভবনা বার করে সেটাকে নির্দিষ্ট করে ফেলে।তাদের বুদ্ধিমত্তার এতই অভাব যে, তারা ভুলে যায় সম্ভবনার ক্ষেত্রে একাধিক সম্ভবনাও থাকতে পারে। সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ শুধুএতটুকুই বলেছেন আমীর মুয়াবিয়া এসে ঈদের নামাজের পুর্বেখুতবা কে শুরু করলেন। এক্ষেত্রে এও সম্ভবনা আছে আল্লাহর রসূল সাল্লালাহু আলাইহি তার খালিফাগন শুধুএকটাই খুতবা দিতেন। অর্থাৎ সে যুগে শুধু ওয়াজিব খুতবারই প্রচলন ছিল। নামাজের পুর্বে নামাজ প্রক্রিয়া বা তেমন কোনবিষয় নিয়ে খুতবার প্রয়োজন ছিল না তাই প্রচলনও ছিল না।আমীর মুয়াবিয়ার সময় লোক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নামাজের পুর্বে খুতবা বা বক্তব্যের প্রচলন করতে হয়েছিল। যা আজ ও মসজিদে মসজিদে প্রচলিত আছে।
দ্বিতীয়ত,শিয়ারা নিজের পক্ষের কিংবা কোন আপত্তি উত্থাপনের উদ্দেশ্যে যেসব বর্ণনা দেয় তার ভিত যথেষ্ট নড়বড়ে।সেগুলি মূলত তিনটি বিষয়ের উপর টিকে (১) এমন বর্ণনা যার সনদ গত কোন ভিত্তি নেই যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশী বরং বেশির ভাগ তেমনই বর্ণনা। (২)এমন বর্ণনা যার সনদগত ভিত যথেষ্ট নড়বড়ে, বিতর্কিত ও বিকৃত প্রকৃতির যার সংখ্যাও অধিক। (৩) এমন বর্ণনা যার ভিত শক্তিশালী (তার সংখ্যা আবার অতি নগন্য),সেই সব বর্ণনা থেকে তারা একটা সম্ভবনা বা নতিজা বার করে এবং সেটাকেই নির্দিষ্ট করে দেয়। তবে সনদহীন বা সনদগত ভিত্তি নড়বড়ে এমন বর্ণনাই তাদের মূল সম্বল । এগুলি ছাড়া তাদের ভাঁড় শুন্য প্রায়। উপরোক্ত বর্ণনাটিও তেমনই একটি বর্ণনা যার সনদগত ভিত নড়বড়ে, বিতর্কিত ও বিকৃত প্রকৃতির। কেণ না উক্ত বর্ণনায় রাবি তালিকায় ইব্রাহিম বিন ইসমাঈল নামক রাবিটি বর্ণনার ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও বর্জিত।
যেমন ইমাম বুখারী ইব্রাহিম বিন ইসমাঈল সম্পর্কে বলেঃ
إِبْرَاهِيم بن إِسْمَاعِيل بن أبي حَبِيبَة الْمدنِي الْأنْصَارِيّ الأشْهَلِي عَندَاوُد بن حُصَيْن مُنكر الحَدِيث
ইবরাহিম বিন ইসমাইল বিন আবু হাবিবাহ আল মাদানি আল আন্সারি, দাউদ বিন হুসাইন থেকে বর্ণনা করত সে একজন মুনকারুল হাদিস ছিল।
(ইমাম বুখারী, জওফাও সাগির, পৃষ্ঠা-৩)
ইমাম দারকুতনি বলেনঃ
إبراهيم بن إسماعيل بن أبي حبيبة سمعته يقول متروك.
ইবরাহিম বিন ইসমাইল আবু হাবিবাহ, তার সম্পর্কে অভিমতপোষণ করতে শুনেছি সে মাতরুক ছিল ।
(জওফা ওয়াল মাতরুকিন,পৃষ্ঠা-২৫২)
حَدَّثَنَا مُحَمد بْنُ عَبد اللَّهِ بْنِ الْجُنَيْدِ، حَدَّثَنا البُخارِيّ قال: إبراهيم بنإسماعيل بن أبي حبيبة الأشهلي الأنصاري المدني، عنده مناكير.
আমাকে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জুনাইদ তিনি বলেন ইমাম বুখারী আমাকে বলেছেন, ইবরাহিম বিন ইসমাইল বিন আবু হাবিবা আশহালি আল আন্সারি আল মাদানি তার নিকট মুনকার রাবিদের অন্তর্ভুক্ত।
(আল কামিল ফি জওফা ও রিজাল, পৃষ্ঠা-৩৭৯)
حَدَّثَنَا عَبد اللَّهِ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، وَعَبد الرحمن بن أبي بكر، وَعَبد الْمَلِكِبْنُ مُحَمد، قَالُوا: حَدَّثَنا عَبَّاسُ بْنُ مُحَمد، قَالَ: سَمِعْتُ يَحْيى بْنَ مَعِين يَقُولُ: إبراهيم بن إسماعيل ليس بشَيْءٍ.
আব্বাস বিন মুহাম্মদ বলেন আমি ইয়াহিয়া ইবনে মঈনকে বলতে শুনেছি ইব্রাহিম বিন ইসমাইল গ্রহন যোগ্য নয়।
(আল কামিল ফি জওফা ও রিজাল, পৃষ্ঠা-৩৮০)
قال النسائي، فيما أخبرني يعقوب بن مُحَمد بن العباس عنه: إبراهيم بن إسماعيل بن أبي حبيبة مدني ضعيف
নাসায়ি বলেন যেমন ইয়াকুব বিন মুহাম্মদ বিন আব্বাস আমাকে তার সম্পর্কে খবর দিয়েছেন, ইবরাহীম বিন ইসমাইল মাদানি একজন দুর্বল রাবি।
(আল কামিল, জওফা ও রিজাল,পৃষ্ঠা-৩৮০)
উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় উক্ত বর্ণনাটির সনদ ও যথেষ্ট পরিমানে বিতর্কিত ও বর্জিত প্রকৃতির । সুতরাং এগুলি না গৃহীত হয় আর না দলিল রুপে গন্য হয়।
তাছাড়া ঈদের নামাজের ওয়াজিব খুতবা আমীর মুয়াবিয়া পরিবর্তন করেননি বরং পরিবর্তন করেছিল মারওয়ান, যা সহিহ মুসলিমের নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، ح وَحَدَّثَنَامُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، كِلاَهُمَا عَنْقَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، - وَهَذَا حَدِيثُ أَبِي بَكْرٍ - قَالَأَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلاَةِ مَرْوَانُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَالصَّلاَةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ . فَقَالَ قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ . فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَمَّا هَذَافَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْيَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ "
তারিক ইবনে শিহাব হইতে বর্ণিত তিনি বলেন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পুর্বে খুতবার প্রচলন করেছিল সে হল মারওয়ান। তখন এক ব্যক্তি তার সামনে দাঁড়ল এবং খুতবারপুর্বে নামাজের কথা বল্লো। তখন মারওয়ান বল্লো এগুলি পরিত্যক্ত হয়েছে৷ হজরতে আবু সাঈদ বললেন সে তার দায়িত্বসঠিক ভাবে পালন করছে।আমি আল্লাহর রসুল সাল্লালাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে কেও তোমাদেরমধ্যে থেকে কেও কোন ঘৃন্য বিষয় লক্ষ করে সে যেন তার হাতদিয়ে তার সংশোধন করে। যদি সে সক্ষম না হয় তাহলে জিহব্বাদিয়ে। আর যদি তাতেও সক্ষম না থাকে তাহলে অন্তর দিয়ে(বিরোধিতা করে) উহা হল ইমানের দুর্বল তম অবস্থা।
(সহি মুসলিম, হাদিস নং-৮৩)
সুতরাং বলা যায় শিয়ারা বিশুদ্ধ মত থাকা সত্তেও এমন একমত কে গ্রহণ করে যা তাদের মতলবের। তার ভিত্তি যতই নড়বড়ে হোক না কেণ মতলবের হওয়ার কারণে সেটাই গ্রহণকরে। এটা যে তাদের চরম প্রকারের মতলবাজ হওয়ার চিহ্ন, তা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না৷ তবে আবু সাঈদ খুদরির কথা উল্লেখ দেখে এখানে আমীর মুয়াবিয়ার শাসনকালের ঘটনা বলে শিয়ারাএকটা সুযোগ নিতে পারে। তবে তাও যদি নেয় নিজের দাবি সাব্যস্ত করতে পারবে না। বরং এই দাবি সম্পুর্ণ অনুমানের উপর নির্ভরশীল। এই ঘটনা মারওয়ানের শাসনকালে ঘটার সম্ভাবনাও আছে কেণ না আবু সাঈদ খুদরি ইন্তেকাল করেছিলেন ৭৪ হিজরিতে।
Comments -