KeyOfIslam
Welcome To KeyOfIslam.com. KeyOfIslam is the platform to spread love and brotherhood among all people through the light of Prophet Mohammad(peace be upon him), the Final Messanger of Allah. Here you will get informations with precision.
Individual Articles
পবিত্র কোরআনে উপস্থিত জিহাদ সম্পর্কিত সমস্ত আয়াত গুলির সঠিক ব্যাখ্যা ও ভুল ধারণার সমাপ্তি
পবিত্র কোরআনে উপস্থিত জিহাদ সম্পর্কিত সমস্ত আয়াত গুলির সঠিক ব্যাখ্যা ও ভুল ধারণার সমাপ্তিকরণ মুফতি আবু বকর মিসবাহী (বীরভূম) (শায়খুল হাদিস টি-১২১ মারি রোড কলকাতা ৭০০০১৮) "জিহাদ"এই শব্দটি জুহদ্ থেকে উৎপন্ন হয়েছে । জিহাদ শব্দটি যাবার দ্বারা "জাহদুন"এবং পেশের সাথে "জুহদুন" উভয়ই ব্যবহৃত হয়। এটি একটি বহু-অর্থের শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হল কঠোর পরিশ্রম, শক্তি ,ক্ষমতা এবং প্রচেষ্টা । ইমাম রাগীব আসফাহানী (৫০২ হিঃ) জিহাদ শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : جَهَدَ، الْجَهْدُ، والْجُهْدُ: الطَّاقَةُ وَالْمَشَقَّةُ অনুবাদ: জাহাদা,আল-জাহদু,আল-জুহদু অর্থ শক্তি ও পরিশ্রম। . وَقِيْلَ: الْجَهْدُ بِالْفَتْحِ الْمَشَقَّةُ، وَالْجُهْدُ: الْوَاسِعُ وَقِيْلَ: الْجُهْدُ لِلإِْنْسَانِ অনুবাদ : আর এটাও বলা হয়েছে যে, জীমের উপর যাবার সহ আল-জাহদ অর্থ প্রচেষ্টা এবং আল-জুহদ অর্থ কোনো কিছুর প্রসারণ। এটাও বলা হয়েছে যে, আল-জুহদের ব্যবহার মানুষের জন্য সূনির্দিষ্ট। (المفردات في غريب القرآن: 101) উক্ত অর্থগুলি পবিত্র কোরআন দ্বারা প্রতীয়মান। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন: وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ অনুবাদ: এবং তাদেরকে যারা তাদের পরিশ্রম ছাড়া কিছুই পায় না। ( সূরা তাওবা, আয়াত:৭৯) অন্নত্রে এসেছে: وَاَقْسَمُوْا بِاﷲِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ অনুবাদ :আর তারা আল্লাহর নামে কঠিন কসম করেছে,(সূরা আনয়াম, আয়াত: ১০৯) জিহাদ তিন প্রকারঃ বাহ্যিক শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ, শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। জিহাদের এই তিনটি প্রকার আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা প্রকাশিত: وَجَاهِدُوْا فِی اﷲِ حَقَّ جِهَادِهِ অনুবাদ: আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ।(সূরা হজ্জ, আয়াত: ৭৮) অন্নত্রে এসেছে: وَجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِکُمْ وَاَنْفُسِکُمْ فِيْ سَبِيْلِ اﷲِ অনুবাদ: এবং তোমাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর।(সূরা তাওবা, আয়াত:৪১) অন্নত্রে এসেছে: {اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجٰهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اﷲِ অনুবাদ: এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে(সূরা আনফাল, আয়াত:৭২) [শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদের অর্থ ]হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণের কাজে নিজের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও আধ্যাত্মিক সামর্থ্যকে উৎসর্গ করা। অর্থাৎ একজন বান্দা তার সমস্ত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দক্ষতা ও যোগ্যতাকে আল্লাহর পথে উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করাকে জিহাদ বলে। ইমাম জুরজানী (৭৪০-৮১৬ হিঃ)- এর মতে জিহাদের সংজ্ঞা নিম্নরূপ:- : هُوَ الدُّعَاءُ إِلَی الدِّيْنِ الْحَقِّ. (جرجانی، کتاب التعريفات: 112) অনুবাদ: জিহাদ বলতে সত্য ধর্মের দাওয়াতকে বোঝায়। সাইয়্যিদ মাহমুদ আলুসি আল-বাগদাদী (১২৭০ হিঃ) তাঁর তাফসীর 'রুহুল মায়ানি'-তে জিহাদ শব্দটি বর্ণনা করেছেন::إِنَّ الْجِهَادَ بَذْلُ الْجُهْدِ فِي دَفْعِ مَا لَا يُرْضٰی অনুবাদ: কোন অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর বস্তু দূর করার চেষ্টা করার নামই জিহাদ।( রুহুল মায়ানী, খন্ড:১০, পৃষ্ঠা:১৩৭) শেখ আলী আহমাদ আল-জারজাভি তার 'হিকমাতুত-তাশরি ওয়া ফালসাফা গ্রন্থে (২/৩৩০)জিহাদের অর্থ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন:- اَلْجِهَادُ فِي الإِْسْلَامِ هُوَ قِتَالُ مَنْ يَسْعَونَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا لِتَقْوِيْضِ دَعَائِمِ الأَمْنِ وَإِقْلَاقِ رَاحَةِ النَّاسِ وَهُمْ اٰمِنُونَ فِي دِيَارِهِمْ أَوِ الَّذِيْنَ يُثِیرُوْنَ الْفِتَنَ مِنْ مَکَامِنِهَا إِمَّا بِإِِلْحَادٍ فِي الدِّيْنِ وَخُرُوْجٍ عَنِ الْجَمَاعَةِ وَشَقِّ عَصَا الطَّاعَةِأَوِ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ إِطْفَاءَ نُوْرِ اﷲِ وَيَنْاؤَوْنَ الْمُسْلِمِيْنَ الْعَدَاءَ وَيُخْرِجُوْنَهُمْ مِنْ دِيَارِهِمْ ويَنْقُضُونَ الْعُهُوْدَ ويَخْفِرُوْنَ بِالذِّمَمِ. فَالْجِهَادُ إِذَنْ هُوَ لِدَفْعِ الْأَذَی وَالْمَکْرُوهِ وَرَفْعِ الْمَظَالِمِ وَالذَّوْدِ عَنِ الْمَحَارِمِ অনুবাদ: ইসলামে জিহাদের অর্থ হচ্ছে সেই সব লোকদের দমন করা যারা শান্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করে, মানুষের শান্তি ও প্রশান্তি নষ্ট করে এবং আল্লাহর জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যখন মানুষ তাদের বাড়িতে খুব শান্তিতে জীবনযাপন করছে অথবা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা যারা, গোপন স্থানে এবং গোপন উপায়ে, বিদ্রোহ ও ফিতনা-ফাসাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয় (দুনিয়ার শান্তি বিনষ্ট করার জন্য), (এই প্রচেষ্টা) কাউকে দ্বীন বা জামাত থেকে বিচ্যুত করার রূপেই হোক না কেন। সেটা হোক বিদ্রোহ করা এবং আনুগত্যের জীবন থেকে সরে আসা বা যারা আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায় (অত্যাচারের মাধ্যমে) এবং সেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যাদেরকে তারা তাদের শত্রু বলে।(তাদের স্বদেশ থেকে বিতাড়িত করে) এবং তাদের নিজেদের বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত করা, চুক্তি ভঙ্গ করা এবং পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তার চুক্তি না রাখা। কেননা মানবতার জন্য কষ্টকর ও বেদনাদায়ক পরিবেশ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত, নিষ্ঠুর ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার অবসান এবং মাহরামকে রক্ষা করার নামই জিহাদ। উপরোল্লিখিত বিবরণের আলোকে জিহাদ শব্দের অর্থ হবে যে ,কোনো ভালো কাজের জন্য সর্বোচ্চ শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করা হলে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকল প্রকার কষ্ট সহ্য করা হয়,তাহলে সেই প্রচেষ্টাকে জিহাদ বলা হবে। সুতরাং জিহাদের উদ্দেশ্য লুণ্ঠন সংগ্রহ করা বা দেশ ও সাম্রাজ্যের বিস্তারও নয়।জিহাদের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোন ভাবেই দূরবর্তী সম্পর্কও নেই। কোরআন ও হাদিসের আলোকে জিহাদ শব্দের অর্থ ও তাৎপর্যের প্রয়োগ পর্যালোচনা করলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জিহাদ শব্দটিকে শুধু যুদ্ধ বা Holly War বলে অনুবাদ করা ঠিক নয়।এই অর্থটি প্রাচীন আরবি ভাষায় বা অভিধানবিদদের মতেও সঠিক নয়, এমনকি পবিত্র কুরআনে এই অর্থের জন্য কখনও প্রয়োগ করা হয়নি। কারণ আরবি অভিধানে "হারব" এবং "কিতাল"শব্দগুলি যুদ্ধ ও সংঘাতের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। [জিহাদ শব্দের অপপ্রয়োগ এবং ইংরেজি অভিধান] জিহাদের (অর্থ: যুদ্ধ বা Holly War)এই ভুল অর্থকে জনপ্রিয় করার জন্য ইংরেজি অভিধানগুলো খুবই জড়িত। জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ, পরিভাষাগত অর্থে এবং কোরআন ও হাদিসে এই শব্দের কোথাও যুদ্ধ বা The Holly War -এর অর্থ পাওয়া যায় না।ঐতিহাসিক তথ্যগুলো অবশ্য এই সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে, ইউরোপের রাজারা নিজেরাই The Holly War শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিতে এবং গির্জাকে যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার জন্য এবং এই অর্থটি পরবর্তী সাহিত্যে ব্যবহার করা হয়েছিল বিনা বাক্যব্যয়ে। এটি জিহাদের অনুবাদ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।এই শব্দটি উদ্ভাবনের উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টান ধর্মীয় শ্রেণীর অনুভূতি জাগ্রত করা এবং তাদের আল-কুদস (জেরুশালেম) যুদ্ধে জড়িত করা। এভাবে একদিকে যেমন অমুসলিম চিন্তাবিদ ও গণমাধ্যম জিহাদকে পবিত্র যুদ্ধ হিসেবে অনুবাদ করে জিহাদের ইসলামী ধারণাকে খারাপভাবে ক্ষুন্ন করেছে অন্যদিকে, কিছু সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীও তাদের সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের শিরোনাম হিসেবে জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করেছে এবং সারা বিশ্বে ইসলামকে অসম্মানিত করতে এবং ইসলামী শিক্ষার শান্তিপূর্ণ চেহারাকে বিকৃত করতে কোনো ঘাটতি রাখেনি। অনেক পশ্চিমা লেখক এবং হিন্দু সমালোচকও জিহাদকে 'পবিত্র যুদ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন। এ বিষয়ে নিচের বইগুলোর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে :- ১/ John Laffin, Holy War: Islam Fights (London, Graffton Books, 1988). ২/ Suhas Majumdar, JIHAD: The Islamic Doctrine of Permanent War (New Delhi: The Voice of India, 1994). ৩/ Karen Armstrong, Holy War: The Crusades and Their Impact on Today’s World (New York: Anchor Books, 2001). ৪/ Reuven Firestone, Jihad: The Origin of Holy War in Islam (New York: Oxford University Press, 1999). ইলমী সততা, ন্যায়বিচার এবং গবেষণার দাবি হল যে ,অভিধানের বই থেকে এই ভুল অর্থগুলি মুছে ফেলা । এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা ও ধর্মীয় ধারণার বিরুদ্ধে একটি জঘন্য ষড়যন্ত্র যা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে। পবিত্র কোরানে কোথাও জাহদুন,জুহদুন বা জিহাদ বলতে শুধু মাত্র যুদ্ধের ধারণা নেই। জিহাদ হল একটি প্রচেষ্টা, একটি মেহনত বা কঠোর পরিশ্রম তা যেকোনো ভালো কাজের জন্য করা প্রচেষ্টা উদ্দেশ্য হতে পারে হোক সেটা আধ্যাত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক। এটা হতে পারে দানশীলতা, শিক্ষার প্রসারের প্রচেষ্টা , হতে পারে যে কোনো ভালো কারণ যার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা যূক্ত সেটিকে জিহাদ বলা হবে। ইসলামে কিতাল শব্দটি লড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ 'যুদ্ধ করা', সুতরাং জিহাদ শব্দের অর্থ মোটেই লড়াইয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। জিহাদের এই অর্থের মূল কারণ হল পবিত্র কোরআনে জিহাদের নির্দেশ সর্বপ্রথম মক্কা নগরীতে এমন এক সময়ে নাযিল হয়েছিল যখন জিহাদের অনুমতিও ছিল না।সাহাবায়ে কেরামের উপর জবরদস্তি ও সহিংসতার পাহাড় নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্যও অস্ত্র তুলতে দেওয়া হয়নি। তাদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছিল যতক্ষণ না আল্লাহ তাদের জন্য হিজরত আকারে পরিত্রাণের পথ তৈরি করেন।প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞার জন্য মক্কায় সত্তরটি (৭০) আয়াত অবতীর্ণ হয়। তা সত্ত্বেও মক্কায় জিহাদ সংক্রান্ত পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়েছিল। ইমাম রাজি (ওফাত ৬০৪ হিঃ) সূরা হজ্জ আয়াত নম্বর ৩৯ اُذِنَ لِلَّذِيْنَ يُقٰـتَلُوْنَ بِاَنَّهُمْ ظُلِمُوْا এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন:- وَهِيَ أَوَّلُ آيَةٍ أُذِنَ فِيهَا بِالْقِتَالِ بَعْدَ مَا نُهِيَ عَنْهُ فِي نَيِّفٍ وَسَبْعِيْنَ آيَةً. (رازی، التفسير الکبير، 23 : 35) অনুবাদ: যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সত্তরটি (70) টিরও বেশি আয়াত নাযিল হওয়ার পর এটিই প্রথম আয়াত যেখানে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যাদের এ বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বচ্ছতা নেই এবং মানসিক বিভ্রান্তিতে ভুগছেন, তারা মুসলিম হোক বা অমুসলিম, পশ্চিমা বিশ্বের বাসিন্দা হোক বা প্রাচ্যের দেশের, তাদের সবারই বোঝা উচিত যে, যদি জিহাদ মানেই যুদ্ধ আর সশস্ত্র সংঘাত হতো, তাহলে মক্কায় অবতীর্ণ নিম্নোক্ত আয়াতগুলোর যৌক্তিকতা কী হবে, যেখানে 'জিহাদের' স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? এই আয়াতগুলি হিজরতের পূর্বে মক্কার যুগে অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন আত্মরক্ষার ক্ষেত্রেও অস্ত্র হাতে নেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল এবং কোন যুদ্ধ বা প্রতিরোধের অনুমতি ছিল না এবং মুসলমানরা প্রকৃতপক্ষে সেই সময়কালে কোন যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। যদি জিহাদের অর্থ যুদ্ধ করা হতো, তাহলে নবী করীম স্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবায়ে কেরামগণ অস্ত্র হাতে নিয়ে মক্কার কাফের ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা ও প্রতিরক্ষার জন্য যুদ্ধ করতেন। কিন্তু জিহাদের জন্য পাঁচটি আয়াত নাজিল হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাউকেই তা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সঠিক উত্তর হল, কোরাআন অনুযায়ী জিহাদের জন্য সশস্ত্র সংঘাত ও সংঘর্ষের প্রয়োজন নেই।এ থেকে জানা যায় যে, জিহাদ শব্দের সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়াও আরও অনেক অর্থ রয়েছে যা মক্কায় অবতীর্ণ নিম্নোক্ত আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে:- ১/ فَـلَا تُطِعِ الْکٰفِرِيْنَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا کَبِيْرًا (الفرقان، 25 : 52) অনুবাদ: সুতরাং (হে ঈমানদারগণ!), কাফেররা যা বলে তাতে কান দিও না এবং এর (কোরআনের দাওয়াত ও যুক্তি) মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে মহা জিহাদ কর (অর্থাৎ তাদেরকে ইল্মি বাক্য ব্যায়ের মাধ্যমে আল্লাহর একত্ব বাদের প্রতি বিশ্বাসী কর। এই আয়াতে মহান জিহাদ বলতে জ্ঞান ও চিন্তার জন্য সংগ্রাম এবং চেতনার প্রসারকে বোঝানো হয়েছে। ২/ وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهِط اِنَّ اﷲَ لَغَنِیٌّ عَنِ الْعٰـلَمِيْنَ (العنکبوت، 29 : 6) অনুবাদ: আর যে চেষ্টা করে সে তো তার নাফ্সের জন্য চেষ্টা করে। নিশ্চয় আল্লাহ সৃষ্টিকুল থেকে প্রয়োজনমুক্ত। এখানে জিহাদ মানে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা করা। ৩/ وَاِنْ جَاهَدٰکَ لِتُشْرِکَ بِيْ مَا لَيْسَ لَکَ بِهِ عِلْمٌ فَـلَا تُطِعْهُمَا. (العنکبوت، 29 : 8) অনুবাদ: তবে যদি তারা তোমার উপর প্রচেষ্টা চালায় আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। এই আয়াতে জিহাদ বলতে যে কোনো ধরনের শিক্ষাগত, বুদ্ধিবৃত্তিক, আদর্শগত বা ধর্মীয় প্রচেষ্টাকে বোঝানো হয়েছে। যে পাঁচটি আয়াতে মক্কার আমলে জিহাদের নির্দেশ করা হয়েছে, সেগুলোর শানে-নুযূল বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে আপনি জানতে পারবেন যে, জিহাদের অর্থ কেবল এটি করা আবশ্যক নয় তলোয়ার বা বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ শুরু করুন, তবে জিহাদ শব্দের আরও অনেক তাকাযা/চাহিদা রয়েছে।এই সমস্ত আয়াতে জিহাদের অর্থ জ্ঞান ও চেতনার প্রসার, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশ, বুদ্ধিবৃত্তিক ও কল্যাণমূলক প্রচেষ্টা এবং সামাজিক স্তরে ব্যয় ও দান।হ্যাঁ, অবশ্যই, যখন আপনার উপর আগ্রাসনের যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন আপনাকে আত্মরক্ষা এবং সুরক্ষার যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ হল একটি যুদ্ধ যা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা অনুমোদিত এবং বিশ্বের প্রতিটি জাতি এবং প্রতিটি দেশ অনুমোদিত। দৈর্ঘ্যের কারণে এই সংক্ষিপ্ত লেখনীটি উপস্থাপন করলাম। এরপরেও যদি কোন মুসলমান অথবা অমুসলিম ভাই ইসলাম ও কোরআনি আইনের ওপর আপত্তি জনক বাক্য লাভ করে ,জানতে হবে তার মনের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ছাড়া কিছুই নেই। আল্লাহর কাছে দোয়া তিনি আমাদের প্রত্যেককেই কুরআনী আইন সঠিকভাবে বোঝার তার প্রতি আন্তরিকতা রাখার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Comments -

Most Read Articles