কুরবানী করা ওয়াজিব না সুন্নাত।
🌼কুরবানী করা ওয়াজিব না সুন্নাত।🌼
প্রিয় মুসলিম সমাজ! কুরবানী করা ইসলামিক রীতি-নীতি বলে সবাই একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু তার শরীয়তী হুকুম অনুযায়ী ঈমামগণদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে: (১) ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুমাল্লাহ বলেছেন: যে, কুরবানী করা ওয়াজিব। (২) ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে, এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
(৩) নামধারী আহলে হাদীস ব্যক্তিরা বলেন: নফল ও মুস্তাহাব বলে আখ্যায়িত করে। আর এই মতপার্থক্য দেখে আজ মুসলিম সমাজ খুব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে, তাই উক্ত মাসায়েলটি কুরআন ও হাদীসের আলোকে উন্মোচন করা হলো।👇👇👇👇👇
আল্লাহ তায়া'লা ক্বুরআন শরীফে ঘোষণা করেন: فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ অর্থাৎ সুতরাং আপনি আপনার পালনকর্তার জন্য নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (📚পারা নং: ৩০, সূরা কাওসার, আয়াত নং: 2)
হাদীস শরীফে লিপিবদ্ধ আছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا
✒️ অনুবাদ: হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: যার (কুরবানী করার) ক্ষমতা রয়েছে আর কুরবানী না করে তবে সে যেন আমাদের ঈদের গাহের নিকট না আসে।
📚রিফারেন্স: সুনান ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং (3123), সুনানুস সাগীর লিল-বায়হাক্বী শরীফ, হাদীস নং (1809), সুনান দারে ক্বুতনী, হাদীস নং (4762), মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং (8273), মুসতাদরাক লিল-হাকীম, হাদীস নং (7566), কানযুল উম্মাল, হাদীস নং (12159)
হাদীসের মান: ইমাম আল্লামা বাদরুদ্দিন আবী মুহাম্মাদ মাহমূদ বিন আহমাদ আল-আয়নী রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৮৫৫- হিঃ)
"উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহুল বুখারী" নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, صَحِيْحُ الإِِسْنَادِ অর্থাৎ- উক্ত হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে সহীহ। (উমদাতুল ক্বারী, খন্ড নং- ৬, পৃষ্ঠা নং- ৩০৬)
ব্যাখ্যা:- যেমন উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব যদি না হতো তবে বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহের নিকট পর্যন্ত আসতে নিষেধ করতেন না।
শাইখুল ইসলাম বুরহানুদ্দিন আবুল হাসান আলী বিন আবূ বাকার রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু- ৫৯৩ হিঃ) "হিদায়া আখিরাঈন" নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, কুরবানী করা ওয়াজিব:
الأضحية واجبة علي كل حر مسلم مقيم موسر في يوم الأضحي عن نفسه وعن ولده الصغار .
📚রিফারেন্স: হিদায়া আখিরাঈন, খন্ড নং- ৪, পৃষ্ঠা নং- ৪২৭
অর্থাৎ- কুরবানী করা ওয়াজিব রয়েছে প্রত্যেক স্বাধীন, মুসলিম, স্থায়ী, কুরবানীর দিনে নিজের তরফ ও নিজ সন্তান-সন্ততীদের তরফ হতে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! একাধিক ফেক্বাহ শাস্ত্রের ইমামগণ কুরবানী করাকে ওয়াজিব বলেছেন: (১) ইমাম আবূ হানীফা নূ'মান বিন সাবিত, (২) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, (৩) ইমাম আওযায়ী, (৪) ইমাম আবূ ইউসুফ, (৫) ইমাম মুহাম্মাদ (৬) ইমাম যুফার, (৭) ইমাম হাসান রহিমাহুমুল্লাহ।
এই প্রসঙ্গে আরো এক হাদীস বিদ্যমান রয়েছে, যেখান থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব প্রতীয়মান হয়:
"أَخْبَرَنَا مِخْنَفُ بْنُ سُلَيْمٍ، قَالَ وَنَحْنُ وُقُوفٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِعَرَفَاتِ قَالَ " يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَةً"
অর্থাৎ: মিখনাফ ইবনে সালিম হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আরাফায় অবস্থান করছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন: হে লোকসকল! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের লোকদের উপর প্রতি বছর কুরবানী করা কর্তব্য (ওয়াজিব)।
📚রিফারেন্স: সুনান আত-তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং:1518, সুনান আবূ দাঊদ শরীফ, হাদীস নং 2788, সুনান ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং: 3125, ত্বাহাবী শরীফ, হাদীস নং: 18899)
এতদ্বারা আমাদের হানাফী মাযহাবের মতামত প্রকাশিত হয় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব, যার পরিত্যাগ কারী গুনাহগার হবে।
★ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী ৬টি রয়েছে: (১) মুসলমান হওয়া,(২) সেখানকার বাসিন্দা হওয়া,(৩) জ্ঞানী হওয়া,(৪)সাবালোক হওয়া,(৫) মালিকে নিসাব হওয়া,(৬) স্বাধীন হওয়া। (📚দুররে মুখতার, খন্ড নং: 6, পৃষ্ঠা নং: 312)
দুয়া প্রার্থী: মুফতী আসগার আলি আলায়ী, মালদা পঃ বঃ
শিক্ষক: শুকান্দিঘী জামিয়া নূরিয়া হিফযূল ক্বুরআন, আমিনপুর, দঃ দিনাজপুর
Comments -