যাকাতের বিবরণ
যাকাতের বিবরণ
[ দ্বিতীয় পর্ব]
সংকলনে: মাওলানা মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন মিসবাহী
শিক্ষক: সুলতানপুর ও মালীপুর সুন্নী মাদ্রাসা
ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ
যাকাতের আভিধানিক অর্থ: যাকাতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা এবং বর্ধন বা বৃদ্ধি।
(আল মু'জামুল ওয়াফি)
যেহতু যাকাত আদায় করলে বাকি সম্পদ পবিত্র হয়ে যায় এবং তাতে বরকত চলে আসে,এই জন্যই যাকাতকে যাকাত বলা হয়।
যাকাতের সংজ্ঞা: শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তাআলার সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজ ধন সম্পদের একাংশ (যা শরীয়ত নির্ধারিত করেছে) কোন গরীব মুসলমানকে নিঃস্বার্থে মালিক করে দেওয়ার নাম হচ্ছে যাকাত।
উপরোক্ত সংজ্ঞা থেকে বোঝা গেল যে, কেবলমাত্র মুবাহ অর্থাৎ বৈধ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না। উদাহরণ স্বরূপ কেউ যাকাতের নিয়তে কোন গরীবকে খাবার খাইয়ে দিলো,এতে যাকাত আদায় হবে না। কেননা এতে খাবারের মালিক করা হলো না। তবে যদি নিঃশর্তে তাকে খাবারের মালিক বানিয়ে দেয়, তাহলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এবার তার ইচ্ছা উক্ত খাবার বাড়ি নিয়ে গেলে যেতে পারে অথবা ওখানে বসে খেলে খেতে পারে।
অনুরূপভাবে কেউ যাকাতের নিয়তে কোন গরীবকে কেবল বসবাস করার জন্য বাড়ি দিলো, বাড়ির মালিকানা অধিকার দিলো না, তাহলে যাকাত আদায় হবে না। কেননা এতে শুধুমাত্র লভ্যাংশের মালিক বানানো হলো, সম্পত্তির মালিক বানানো হলো না।
বিঃ দ্রঃ - এই প্রবন্ধে যা কিছু লেখা হয়েছে, অধিকাংশ কথা বাহারে শরীয়ত ৫ম খণ্ড যাকাত অধ্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কাজেই এই কিতাবের বারবার উদ্ধৃতি দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। তবে অন্যান্য কিতাব থেকে যে কথাটি সংগ্রহ করা হবে, তার উদ্ধৃতি দিয়ে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ তাআলা।
মাসআলা: যাকাত আদায় করা ফরয।এর ফরয হওয়াকে কেউ অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে।ফরয হওয়া স্বীকার করার পর আদায় না করলে ফাসিক হবে, কাফির হবে না। আর আদায়ে বিলম্ব করলে গুনাহগার হবে।
বিঃ দ্রঃ - সন দ্বিতীয় হিজরিতে রোযার পূর্বে যাকাত ফরয হয়েছে। (দুর্রে মুখতার ৩/১৭০)
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলি
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য দশটি শর্ত রয়েছে, যথা -
১ম শর্ত: মুসলমান হওয়া। সুতরাং কোন কাফিরের ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়। অর্থাৎ কোন কাফির মুসলমান হলে ধর্মান্তরের পূর্বের যাকাত তার ওপর ওয়াজিব নয়।
২য় শর্ত: সাবালক হওয়া। অতএব, নাবালক যতই বড়ো ধনবান হোক না কেন তার ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়।
৩য় শর্ত: বিবেক সম্পন্ন হওয়া। অতএব,কেউ যদি গোটা বছর ধরে পাগল হয়ে থাকে, তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়। তবে অজ্ঞান ব্যক্তির ওপর যাকাত ওয়াজিব। যদিও সে পুরো বছর ধরে অজ্ঞান অবস্থায় থাকে।
৪র্থ শর্ত: মুক্ত বা স্বাধীন হওয়া। সুতরাং দাস দাসীর ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়।
৫ম শর্ত: নেসাবের মালিক হওয়া। অতএব,নেসাব থেকে কিছু কম হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
বিঃ দ্রঃ - "নেসাব" কথার অর্থ হচ্ছে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ধন সম্পদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ যা থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয়। যার বিবরণ আসছে ইনশাআল্লাহ তাআলা।
৬ষ্ঠ শর্ত: নেসাব সম্পূর্ণ ভাবে নিজ দখলে হওয়া। অতএব,কেউ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কিন্তু সে কাউকে ধার দিয়ে রেখেছে বা ব্যংকে জমা রেখেছে, তাহলে সে যতদিন পর্যন্ত উক্ত সম্পদ অর্জন না করতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত উক্ত সম্পদে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে যখন পাওয়া যাবে, তখন বিগত বছরগুলোরও যাকাত দিতে হবে।
(আযমাতে যাকাত পৃঃ ৬১; লেখক - আল্লামা সাজিদ আলী মিসবাহী)
৭ম শর্ত: ঋণমুক্ত হওয়া। অতএব,যার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ আছে কিন্তু সে এতটা দেনা করে রেখেছে যে, দেনা পরিশোধ করার পর নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে না, তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়।
মাসআলা: দেনমোহর, মান্নত, কাফফারা,ফেৎরা,হজ্ব এবং ক্বোরবানী যাকাত ওয়াজিব হওয়াতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। অর্থাৎ এগুলোর কারণে নেসাবে ঘাটতি হয়ে গেলেও যাকাত ওয়াজিব হবে।
মাসআলা: স্বামী ঋণগ্রস্ত হলে স্ত্রীকে ঋণগ্রস্ত বলে ধরা হবে না। কাজেই স্বামী যতই ঋণগ্রস্ত হোক না কেন স্ত্রী যদি মালিকে নেসাব হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
৮ম শর্ত: হাজাতে আসলিয়্যাহ (নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী) হতে অতিরিক্ত হওয়া। জীবন যাপন করার জন্য যেসব জিনিষের প্রয়োজন পড়ে, সেগুলো হাজাতে আসলিয়্যাহ বা প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন (ক) বসবাসের জন্য বাড়ি (খ) শীত ও গরমকালের পোশাক (গ) বাড়ির আসবাবপত্র যেমন চেয়ার, টেবিল, বিছানা, হাঁড়ি,বাটি,থালা, সোফা,খাট, আলমারি,ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন,পাখা ইত্যাদি (ঘ) যানবাহন যেমন হাতি, ঘোড়া, উট, সাইকেল,বাইক, মারুতি ইত্যাদি (ঙ) পেশাদারের আসবাব যেমন ডাক্তারের জন্য চেক আপের যন্ত্রপাতি ; অপারেটরের জন্য কম্পিউটার,ল্যাপটপ; দোকানদারের জন্য দাঁড়িপাল্লা, আলমারি; চাষীর জন্য হাল,গরু, পাম্প মেশিন ইত্যাদি; আলিমের জন্য বই পুস্তক (চ) নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু যেমন মোবাইল, ঘড়ি,চশমা, লেন্স ইত্যাদি। এছাড়াও যেসব বস্তু ছাড়া জীবন যাপন করা কঠিন মনে হবে, সেসব বস্তু হাজাতে আসলিয়্যাহ এর আওতায় পড়বে।
(আযমাতে যাকাত পৃঃ ৬৪)
মাসআলা: বাড়ি সাজানোর জন্য যেসব জিনিষপত্র রাখা হয় যেমন চিনামাটি বা তামার পাত্র ইত্যাদি,এসবে যাকাত লাগবে না যদিও লক্ষ্যাধিক টাকার হয়।
(ফাতাওয়া রাযাবিইয়্যাহ,যাকাত অধ্যায়)
৯ম শর্ত: সম্পদ নামী বা উন্নয়নশীল হওয়া।এর অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি পাওয়ার যোগ্য হওয়া। অর্থাৎ আপনার কাছে যেসব ধন সম্পদ আছে, সেগুলোকে যদি বাড়ানো যায়, তাহলে যেন বৃদ্ধি পাওয়ার উপযুক্ত হয়। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সম্পদ নিম্নোক্ত তিন প্রকারে বৃদ্ধি পায়। যথা -
১/ যে কোনো বস্তু= ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে
২/ পশু= বিচরণ অর্থাৎ চড়ে বেড়ানোর মাধ্যমে
৩/ স্বর্ণ, রৌপ্য এবং টাকা পয়সা= প্রকৃতিগতভাবে অর্থাৎ এগুলো গঠনগত বৃদ্ধি পাওয়ার উপযুক্ত হয়। কেননা আল্লাহ তাআলা এগুলোকে এই জন্যই সৃষ্টি করেছেন যাতে এগুলোর বিনিময়ে কিছু ক্রয় করা সম্ভব হয়।
সারকথা হচ্ছে যে, ইসলামিক আইন অনুযায়ী কেবলমাত্র নিম্নোক্ত তিন প্রকারের সম্পদেই যাকাত ওয়াজিব হয়। যথা -
১/ ব্যবসার পণ্যদ্রব্য
২/ বছরের অধিকাংশ সময়ে বিচরণকারী পশু
৩/ সোনা, চাঁদি এবং টাকা পয়সা।
১০ম শর্ত: নেসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া। অর্থাৎ যে তারিখে যে সময়ে নেসাবের মালিক হয়েছে, পরের বছর সেই তারিখে সেই সময়ে যাকাত ওয়াজিব হবে। বছর শেষ হওয়ার পর শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়া বিলম্ব করলে গুনাহগার হবে।
মাসআলা: বছর অতিবাহিত হওয়ার পর রমযান মাসে যাকাত আদায় করার জন্য বিলম্ব করা যাবে না। তবে বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে অগ্রিম যাকাত দিলে রমযান মাসে দেওয়া উত্তম। কেননা রমযান মাসে নফলের সওয়াব ফরযের মতো হয় আর এক ফরযের সওয়াব ৭০ ফরযের সমতুল্য হয়।
(ফাতাওয়া রাযাবিইয়্যাহ ৪/৪৩৯)
মাসআলা: এখানে এক বছর বলতে চন্দ্র মাস হিসেবে এক বছর গ্রহণযোগ্য হবে, ইংরেজি (বা বাংলা) গ্রহণযোগ্য হবে না।
(রদ্দুল মুহতার ৩/১৭৫)
মাসআলা: মালিকে নেসাব বছরের মাঝে আরো কিছু সম্পদ অর্জন করলো, এই অবস্থায় এই নতুন সম্পদের জন্য আলাদা ভাবে বছর আরম্ভ হবে না। বরং যখন পূর্বের সম্পদের বছর শেষ হবে, তখন এরও শেষ হবে। যদিওবা বছর পূর্ণ হওয়ার এক দিন পূর্বে অর্জিত হয়।
মাসআলা: যাকাত দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়ত করা জরুরি। তবে যাকে দিবে তার সামনে যাকাত শব্দটি উল্লেখ করা জরুরি নয়। উপহারের নামে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলা: সোনা চাঁদি নেসাব পরিমাণ বা তার থেকে অধিক হলে যাকাত দিতে হবে ব্যবহার জায়েয হোক বা নাজায়েজ হোক।ব্যবহার জায়েয নয় যেমন সোনা চাঁদির বাসন বাটি ঘড়ি ইত্যাদি।
মাসআলা: কোন সম্পদ যদি হারাম উপায়ে যেমন চুরি,ডাকাতি,ঘুষ ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে, তাহলে উক্ত সম্পদে যাকাত ওয়াজিব নয়। এই ধরনের সম্পদ যার কাছ থেকে অর্জন করেছে, তাদেরকে ফেরত দেওয়া ওয়াজিব। তাদেরকে না পেলে তাদের ওয়ারিশদেরকে ফেরত দিতে হবে। তাদেরকে বা তাদের ওয়ারিশদেরকে না পাওয়া গেলে গরীব মিসকিনকে দিয়ে দিতে হবে। উক্ত সম্পদ অন্য কোনো কাজে লাগানো হারাম।
(ফাতওয়া রাযাবিইয়্যাহ ১৯/৬৫৬;২৩/৫৫২)
মাসআলা: মালিকে নেসাব বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে অগ্রিম যাকাত দিতে পারে।
অতএব,আপনি যদি মালিকে নেসাব হন, আর অগ্রিম যাকাত দিতে চান, তাহলে সারা বছর অল্প অল্প করে যাকাত দিতে থাকুন আর একটা ডাইরিতে নোট করতে থাকুন। অতঃপর বছর শেষে হিসাব করুন।যদি যাকাত পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে ভালো কথা। অন্যথায় যতটা ঘাটতি আছে, ততটা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিন। আর যদি বেশি দিয়ে থাকেন, তাহলে বাড়তি টাকা পরের বছরের যাকাতে ধরে নিতে পারেন।
স্বর্ণ, রৌপ্য, টাকা পয়সা এবং ব্যবসার পণ্যদ্রব্যের নেসাব ও যাকাত
স্বর্ণের নেসাব: সোনার নেসাব হচ্ছে সাড়ে সাত (7.5) তোলা। প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ 93.312 g হয় ।
রৌপ্যের নেসাব: চাঁদির নেসাব হচ্ছে সাড়ে বাহান্ন (52.5) তোলা যা প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী 653.184 g হয়।
(ফাতাওয়া আলীমিয়া ১/৩৭০; ফাতাওয়া মারকাযে তারবিয়াতে ইফতা ১/৪০৯)
বিঃ দ্রঃ - গুগলের তথ্য অনুযায়ী এক ভরি সমান 11.664 g হয়। এই তথ্য সঠিক হলে সাড়ে সাত তোলা সমান আট ভরি হবে। আর সাড়ে বাহান্ন তোলা সমান 56 ভরি হবে।
টাকা পয়সা এবং ব্যবসার পণ্যদ্রব্যের নেসাব: এগুলোর আলাদা ভাবে কোন নেসাব নেই।সোনা চাঁদির নেসাবই হচ্ছে এগুলোর নেসাব।
সুতরাং কারো কাছে যদি 93.312 গ্রাম সোনা কিংবা 653.184 গ্রাম চাঁদি সমতুল্য টাকা পয়সা বা ব্যবসার পণ্যদ্রব্য থাকে, তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অন্যথায় ওয়াজিব হবে না।
ব্যবসার পণ্যদ্রব্য কাকে বলে?
ব্যবসার পণ্যদ্রব্য ঐ দ্রব্যকে বলা হয় যা বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়ে থাকে।
অতএব, কেউ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করলো না বরং ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্রয় করলো বা ক্রয় করার পর বিক্রয় করার নিয়ত করে নিলো কিংবা ক্রয়ই করলো না বরং অন্য কোন সুত্রে উদাহরণস্বরূপ উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করার পর বিক্রয় করার নিয়ত করে নিলো, তাহলে এই সব ক্ষেত্রে ব্যবসার পণ্যদ্রব্য বলে বিবেচিত হবে না।
যাকাতের পরিমাণ: সোনা, চাঁদি, প্রচলিত টাকা পয়সা এবং ব্যবসার দ্রব্য নেসাব পরিমাণ বা তার থেকে অধিক হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ 2.5% যাকাত দিতে হবে।
মাসআলা: যদি কারো কাছে সোনা, চাঁদি, টাকা পয়সা এবং ব্যবসার দ্রব্য চারটেই নেসাব পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে সে যেভাবে ইচ্ছে, সেভাবে যাকাত বের করতে পারে। আলাদা আলাদাভাবেও বের করতে পারে আবার সবকটার দাম একসাথে যুক্ত করেও বের করতে পারে।
মাসআলা: কারো কাছে উপরোক্ত চারটিই জিনিসই আছে বা তিনটি বা দুটি জিনিস আছে কিন্তু কোনোটাই নেসাব পরিমাণ নেই, তাহলে সবকিছুর দাম যোগ করতে হবে।যোগ করার পর যদি উক্ত দামের বিনিময়ে বর্তমান বাজারে সাড়ে বাহান্ন তোলা অর্থাৎ 653.184 গ্রাম চাঁদি ক্রয় করা সম্ভব হয়, তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে।নচেৎ নয়।
(ফাতাওয়া বাহরুল উলুম ২/১৬৩)
মাসআলা: কারো কাছে উপরোক্ত চারটি জিনিস নেই বরং তিনটি বা দুটি আছে কিংবা চারটিই আছে কিন্তু কোনোটা নেসাব পরিমাণ আছে, কোনোটা নেসাব পরিমাণ নেই, তাহলেও সব কটার দাম যোগ করতে হবে যোগ করে 653.184 গ্রাম চাঁদি সমতুল্য হলে যাকাত ওয়াজিব হবে।নচেৎ নয়।
স্মরণীয়: অনেক মা বোনদের কাছে কিছু সোনা, কিছু চাঁদি, কিছু টাকা পয়সা থাকে বা কিছু সোনা আর কিছু টাকা পয়সা থাকে কিন্তু কোনোটাই আলাদা আলাদা নেসাব পরিমাণ থাকে না।ফলতঃ তারা বা তাদের বাড়ির লোক ভাবে যে,যাকাত দিতে হবে না। কেননা কোনোটাই তো নেসাব পরিমাণ হচ্ছে না।
মনে রাখা দরকার যে এটা নিছক ভুল ধারণা। এক্ষেত্রে সবকিছুর দাম যোগ করতে হবে।যোগ করে 653.184 গ্রাম অর্থাৎ 56 ভরি চাঁদি ক্রয় করা সম্ভব হলে যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
মাসআলা: কারো কাছে কেবলমাত্র সোনা বা সোনার অলংকার থাকে আর চাঁদি, টাকা পয়সা ও ব্যবসার দ্রব্য মোটেই নেই, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে সাত তোলা অর্থাৎ 93.312 গ্রাম (আট ভরি) না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মালিকে নেসাব হবে না। কাজেই তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।
অনুরূপভাবে যদি কারো কাছে কেবলমাত্র চাঁদি বা কেবলমাত্র টাকা বা শুধুমাত্র ব্যবসার দ্রব্য থাকে আর অন্য কিছুই না থাকে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে বাহান্ন তোলা অর্থাৎ 93.312 গ্রাম চাঁদি বা এর সমতুল্য না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মালিকে নেসাব হবে না।
মাসআলা: যাকাতে টাকা পয়সার পরিবর্তে সোনা, চাঁদি, কাপড়, খাবার, ওষুধ ইত্যাদিও দেওয়া যাবে।
মাসআলা: বছরের শেষ দিনে দ্রব্যের দাম নেসাব পরিমাণ ছিল কিন্তু তারপর কম হয়ে গেল, তাহলে বছরের শেষ দিনের দাম ধর্তব্য হবে।
মাসআলা: ব্যবসার দ্রব্যে ওই স্থানের দাম ধর্তব্য হবে, যেখানে দ্রব্য আছে। তবে যদি দ্রব্য জঙ্গলে থাকে, তাহলে উক্ত জঙ্গলের নিকটবর্তী লোকালয়ের দাম ধর্তব্য হবে।
মাসআলা: মনি মানিক্য,হিরা জহরতে যাকাত ওয়াজিব হয় না। যদিওবা লক্ষ্যাধিক টাকার হয়। তবে যদি ব্যবসার নিয়তে নেয়, তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে।
মাসআলা: ব্যবসার দ্রব্যে বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বাজার দর ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ সাধারণত বাজারে যে মূল্যে ক্রয় বিক্রয় হয়,সেই মূল্য ধরতে হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতা যে দামে চুক্তি করে একমত হয়ে যায়,সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা বিভিন্ন কারণে কম বা বেশী দামে চুক্তি হতে পারে।
(ফাতাওয়া আমজাদিয়া ১/৩৮২)
চলবে........
Comments -