মাসায়েলে ক্বুরবানী
মাসায়েলে ক্বুরবানী
মাওলানা হাশিমুদ্দিন মিসবাহী, মুর্শিদাবাদ
মাসআলা - ক্বুরবানীর নিসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং ক্বুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই ক্বুরবানী ওয়াজিব হবে।( রদ্দুল মুহতার )
মাসআলা : নাবালক শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নিসাবের মালিক হলেও তাদের উপর ক্বুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষ থেকে ক্বুরবানী করলে তা সহীহ হবে।(রদ্দুল মুহতার )
মাসআলা : দরিদ্র ব্যক্তির উপর ক্বুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি ক্বুরবানীর নিয়তে কোনো পশু ক্রয় করে তাহলে তা ক্বুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
(বাহারে শরীয়ত)
মাসআলা : কেউ যদি ক্বুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব ক্বুরবানী দিতে না পারে তাহলে ক্বুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর ক্বুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য স্বদক্বা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে ক্বুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত স্বদক্বা করে দিবে।(বাদায়েউস সানায়ে ।
মাসআলা : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতেই হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতেই হবে। আর ছাগল, ভেঁড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতেই হবে। তবে ভেঁড়া ও দুম্বা যদি ছয় মাসের হয় কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে সেই জন্তুটি ক্বুরবানী করা জায়েজ আছে।( বাদায়েউস সানায়ে ।
মাসআলা : যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে ক্বুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে ক্বুরবানী করে তাহলে তার ক্বুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।(বাদায়েউস সানায়ে ।
মাসআলা:*যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর ক্বুরবানী জায়েয নয়। (জামে তিরমিযী , সুনানে আবু দাউদ,রদ্দুল মুহতার , আলমগীরী ।
মাসআলা : *এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা ক্বুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী , আলমগীরী , বাদায়েউস সানায়ে ।
মাসআলা : *যে পশুর শিং একেবারে গোঁড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর ক্বুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সেই পশুর কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ , বাদায়েউস সানায়ে , রদ্দুল মুহতার , আলমগীরী।
মাসআলা : যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর ক্বুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ , ইলাউস সুনান , কাযীখান , আলমগীরী ।
মাসআলা : ক্বুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারিয়ে যাওয়া পশুটিও পাওয়া যায় তাহলে ক্বুরবানীদাতা গরীব হলে দুটি পশুই ক্বুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি ক্বুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি ক্বুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী , ইলাউস সুনান , বাদায়েউস সানায়ে , কাযীখান।
মাসআলা : কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হাল চাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা, দুধ দহন করা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি স্বদক্বা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ , নায়লুল আওতার , ইলাউস সুনান , কাযীখান , আলমগীরী ।
মাসআলা : ক্বুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দহন করবে না। প্রয়োজনে স্তনে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে, এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দহন করে ফেলে তাহলে তা স্বদক্বা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য স্বদক্বা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ , ইলাউস সুনান।
মাসআলা : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ক্বুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল ক্বুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। ক্বুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি ক্বুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে স্বদক্বা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ, রদ্দুল মুহতার।
মাসআলা : ক্বুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে, সহীহ মুসলিম ,
মাসআলা : শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার , কাযীখান
মাসআলা : জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক মূল্য হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য হাদিয়া(গিফট) হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।
মাসআলা : কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুক্বীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুক্বীম ছিল অতঃপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ফাতাওয়া খানিয়া, আদ্দুররুল মুখতার
Comments -